মতামত

গণতন্ত্রের কথা কেন বলি!

মুজিব রহমান : নগররাষ্ট্র এথেন্সে গণতন্ত্র ছিলো বলেই সেখানে জ্ঞানের মেলা বসেছিলো। মানুষ মন খুলে কথা বলার জন্য আসতো এথেন্সে। দেবতা নিয়ে অন্ধ বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিলো বিজ্ঞানভিত্তিক কথা বলা। থেলিস বলেছিলেন- দেবতারা মানুষ সৃষ্টি করে নি, মানুষের উৎপত্তি হয়েছে পানি থেকে।

থেলিসের শিষ্য এনাক্সিমিনডার বলেছেন, দেবতারা প্রাণিদের সৃষ্টি করেন নি। প্রাণিরা এসেছে অন্য কিছু থেকে। আরেক শিষ্য এনাক্সিমিনেস বলেছেন, দেবতারা প্রাণির জন্ম দেন নি। তারা এসেছে বাতাস থেকে। মিলেটাস নগরীর এই তিন জ্ঞানীর কথা এথেন্সে অনুশীলন করা সম্ভব ছিলো গণতন্ত্রের কারণেই। এথেন্সে জ্ঞানীদের এমন মিলনমেলা এমনিতেই ঘটেনি। সেখানে জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতাও ছিলো। জ্ঞানীদের সম্মানও ছিলো।

এরপর জ্ঞানের বিচরণ দেখি ফ্রান্সে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের পতনের পর যত বিশৃঙ্ক্ষলাই হোক ফ্রান্সে শিল্পী-সাহিত্যিকরা ভিড় করেছে। একসময় ব্রিটেনের মতো বিশ্বজুড়ে তারাও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আজ পাশ্চাত্যের দিকে তাকালে আমরা একটা জিনিসই দেখি আর তা হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র থাকলেই মানুষ মতপ্রকাশ করতে পারে এবং ভিন্নমত নিয়ে আলোচনা হতে হতে প্রকৃত সত্যটাই সামনে আসতে পারে।

পাশ্চাত্যের দেশগুলোর এই উন্নয়নের মূলমন্ত্র অবশ্যই গণতন্ত্র। তারা যে শিক্ষা পেয়েছেন, বিজ্ঞান পেয়েছেন, শিল্প-সাহিত্য পেয়েছেন, তার সবই গণতন্ত্রের কল্যাণেই। পাশ্চাত্যের উন্নয়নের সাথে আমরা জাপান ও সিঙ্গাপুরকেও মেলাতে পারি। এশিয়ার মধ্যে এ দুটি দেশেও ভালো গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে। আমরা আজ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে বিবেচনায় রাখতে পারি। এই দেশগুলোতেও সুষ্ঠুধারার গণতন্ত্রের চর্চা চোখে পড়বে। বিপরীতে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকাতে পারি। অধিকাংশ দেশই ভাসছে তেলের উপর। এতো পেট্রোডলারও তাদের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে পারে নি। শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, বিজ্ঞানে তারা বহু পেছনে রয়েছে।

আবার মিলটাও একই রকম। মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও গণতন্ত্র নেই। ইরানে খুবই সীমিত আকারের গণতন্ত্র রয়েছে। সেখানে কে প্রার্থী হবে বা না হবে তা আগেই নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ফলে ইরানে প্রকৃতপক্ষে কোনো গণতন্ত্র নেই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো মায়ানমারের। সেখানে কোনো গণতন্ত্র নেই। আগে ছিলো খুবই সীমিত আকারে। কিন্তু তা না থাকার মতোই। এখন তো চেপে বসেছে সামরিক শাসন।

চীনের কথা অনেকে বলবেন। কিন্তু চীনের কমিউনিস্ট পার্টি খুবই শক্তিশালী গণতন্ত্র চর্চা করে। চীনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। এই সদস্যরাই নেতা নির্বাচনে ভূমিকা রাখে। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কংগ্রেস দু'টি প্রধান কাজ করে। দলীয় সংবিধানে নীতিসংক্রান্ত সংশোধনী অনুমোদন এবং কেন্দীয় কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করা। কেন্দ্রীয় কমিটির কাজ হলো দলের পলিটব্যুরোর সদস্যদের নির্বাচিত করা। কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর নির্বাচন প্রক্রিয়া পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের আগেই অনুষ্ঠিত হয় ও পার্টি কংগ্রেসের মূল কাজ হলো দলীয়নীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা। দলে ক্ষমতার মূলকেন্দ্র হলো পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি। স্ট্যান্ডিং কমিটি ও পলিটব্যুরোর সদস্যবৃন্দের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্দার অন্তরালে পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রত্যেকবারই পরিবর্তিত হয় এবং প্রবণতা অনুসারে সেই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এ কারণেই চীনের নেতৃবৃন্দ জবাবদিহিতার বাইরে যেতে পারেন না।

গণতন্ত্র থাকলে নেতাদের একদিকে জবাবদিহিতা করতে হয় আবার অন্য দিকে তাদের জনগণের কাছে যেতেই হয়। প্রতিটি ভোটের সময় তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যেতেই হয়, সারা বছরই জনগণের পাশে থাকতে হয়। জনগণ হিসেবে মিলিয়ে দেখেন নেতা কতটা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। আর কতটা তাদের পাশে ছিলেন। নেতা যদি দুর্নীতি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তবে তাকে পরবর্তী সরকার বিচারের আওতায়ও আনবে এবং লুণ্ঠন করা অর্থ রাজকোষে ফিরিয়ে আনবে।

গণতন্ত্র না থাকলে নেতা হয়ে উঠবে জবাবদিহিতাহীন এবং জনগণের সাথে সম্পর্কহীন প্রচণ্ড স্বৈরশাসক। দেশে আবারো ঘোষণা করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। রাষ্ট্র যদি তার জনগণের কথা ন্যূনতম ভাবে তবে অবশ্যই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করবে। আর যদি দেশকে মিয়ানমারের পথেই নিতে চান, তবে গণতন্ত্রের বালাই থাকবে না। মিয়ানমারের সরকার ও নাগরিকগণ পৃথিবীতে সম্মান নিয়ে বাঁচেন না। সুষ্ঠু গণতন্ত্রহীন কোনো দেশই নাগরিকদের সম্মানের চোখে দেখেন না, জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র থাকে না। বিস্ময়কর যে, বর্তমানে কল্যাণরাষ্ট্রের খেতাব পাওয়া সবগুলো দেশও গণতান্ত্রিক! বাস্তবতা হলো- ওইসব দেশে গণতন্ত্র ছিলো বলেই আস্তে আস্তে কল্যাণ রাষ্ট্র হতে পেরেছে।

তাই গণতন্ত্রের কথা আমাদের ভাবতেই হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে।

লেখক: মুজিব রহমান

সাধারণ সম্পাদক, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন, শ্রীনগর কেন্দ্র

সান নিউজ/ আরএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

বিপ্লবী হাদির জানাজা সম্পন্ন

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সম্...

কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে বিপ্লবী হাদির দাফন সম্পন্ন

ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণে।...

ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি

দক্ষিনের জেলা ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হ...

আলফাডাঙ্গা কলেজে পরীক্ষা চলাকালে অস্ত্র হাতে মহড়া, গ্রেপ্তার যুবক

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে স্নাতক সম্মান (ডিগ্রি) পরীক্ষা চলাকালে দেশীয়...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

চাকসুর উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক–চবি’র কর্পোরেট চুক্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কর্পোরেট...

সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সন্তান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘ইনকিলাব ম...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা