মতামত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চোরের খনি

মুজিব রহমান : বঙ্গবন্ধু নাকি বলেছিলেন- সবায় পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। এর সত্যতা জানি না৷ বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন বরাবরই রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হাজার হাজার পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে শুধু অর্থের বিনিময়ে এমন ডিগ্রি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। আর নকল করে, অন্যকে দিয়ে ডাটা সংগ্রহ করিয়ে বা আরো অনেকভাবে এমন ডিগ্রি নেওয়ার অভিযোগও কম নয়।

এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ জঘণ্যরকমভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগ উঠেছে। সামিয়া জামানের বিষয়টি খুবই আলোচিত হয়েছে। সামিয়া জামান আবার উল্টো গলাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। চোরের মায়ের বড় গলা এদেশে বরাবরই ছিল।

সম্প্রতি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের প্রকাশিত নিবন্ধে (আর্টিকেল) চৌর্যবৃত্তির (প্ল্যাজিয়ারিজম/কুম্ভিলকবৃত্তি) অভিযোগ উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, তাদের প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে চৌর্যবৃত্তি করেছেন এই দুই শিক্ষক।

অভিযুক্তরা হলেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আওয়াল কবির এবং অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াহিয়া বেপারী। এতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের যৌথভাবে লেখা ৬টি একাডেমিক গবেষণা-নিবন্ধে ৬০-৮০ ভাগ করে চৌর্যবৃত্তি করেছিলেন।

তার মানে হল তারা একটা চুরি করে দেখেছেন কুছ পরোয়া নেহি! চুরি করলে ধরার কেউ নেই, আবার সম্মানও বাড়ে। তাই টানা ৬টি গবেষণা-নিবন্ধেই ডাহা চুরি করেছেন।

তারা প্রখ্যাত ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভুত লেখক এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু নকল করেছেন। তারা ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখাও বিস্তর টুকলি করেছেন। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য কুম্ভিলকবৃত্তির অভিযোগ উঠে।

চোরগণ বিভিন্নভাবেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে হলেও তারা বিজয়ী হয়ে আসে। আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর লড়তে চান না। শেষে তারা বলতে পারেন- আরে আদালত রায় দিয়েছে, আমরা কি করবো!

দেশে কুম্ভিলকবৃত্তিটা এতোটাই মারাত্মক হয়ে উঠেছে যে, বহু কথিত লেখকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে যে, তারা অন্যের ফেসবুকের লেখা মেরে দিয়েও নিজের নামে বই করছেন।

কেউ কেউ আবার কয়েকজনের ফেসবুক পোস্ট মেরে দিয়ে নিজের নামে বই ছাপিয়ে ফেলেন এবং নিজেকে লেখক দাবি করে বেড়ান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ যখন চৌর্যবৃত্তিতে নেমে পড়েন তখন দেশের জন্য বিপর্যয় নেমে আসে।

এর অন্যতম কারণ হতে পারে- নিয়োগে দুর্নীতি অর্থাৎ অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেয়ার কারণে তারা পারতপক্ষে গবেষণা করার সামর্য্- রাখেন না। একই সময়ে পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে নামিয়ে আনা হয়েছে।

তবে এমন জালিয়াতির ঘটনা 'কেবলমাত্র' গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে বলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সামান্য শাস্তির বন্দোবস্ত করল- এমন অভিযোগও উঠেছিল। যদি এ নিয়ে হইচই না হতো তবে তারা পার পেয়েই যেতো।

এক্ষেত্রে এদের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করাই যৌক্তিক ছিল। তারা পার পেয়ে যায় বলেই অন্যরাও কুম্ভিলকবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে।

এর আগে ‘নীলক্ষেতেই মিলছে থিসিস পেপার’ শিরোনামেও পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। কারো কারো থিসিসের ৯৮%ই নকল বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিক্রমপুরের এক গবেষকের কথা শুনেছি যিনি বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা নিজের নামে প্রকাশ করেন আর কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের লেখকদের লেখা নিজ নামে প্রকাশ করেন।

কলকাতার গবেষক বাংলাদেশে এসে এর প্রতিবাদ করে গিয়েছিলেন। তার এক শিক্ষকও তাকে কুম্ভিলকবৃত্তি না করার জন্য অনুরোধ করেছিল কিন্তু তিনি চুরি করে মজা পেয়ে গিয়েছিলেন ততদিনে। কয়েকমাস আগে গবেষণা প্রতিবেদনে কুম্ভিলকবৃত্তি (চুরি, অন্যের লেখা নিজের বলে চালানো) করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দুই শিক্ষকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে প্রকল্প বাতিল করেছে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।

একইসঙ্গে গবেষক হিসেবে তাদের এশিয়াটিক সোসাইটিতে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন- ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. ঈশানী চক্রবর্তী ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবায়দা নাসরীন।

বর্ণনায় ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, মহররম, দুর্গাপূজা, হালখাতার বর্ণনার ৬-১৬ নম্বর পৃষ্ঠার বিবরণের অধিকাংশই বাংলাপিডিয়া থেকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। তাদের পুরো প্রবন্ধজুড়ে ২৫০টি বানান ভুল এবং অসম্পূর্ণ বাক্যে পরিপূর্ণ।

এজন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন শাস্তি পেতে হয়নি। তারা খুবই প্রভাবশালী লেখক বলেই হয়তো পার পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই পার পাওয়া কি নজির সৃষ্টি করবে?

লেখক—মুজিব রহমান,
সাধারণ সম্পাদক, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন

সান নিউজ/এম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জামায়াত, এনসিপির শর্তের চাপে বিএনপি, নির্বাচন নিয়ে নতুন শঙ্কা

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আন্দোলনে নামার...

পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট

বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থান...

যমুনা সেতুর পশ্চিমে মহাসড়ক অবরোধ, বিচ্ছিন্ন ঢাকা-উত্তরবঙ্গ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রক...

যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, রাজনীতি থেকে মাইনাস হবে: সালাহউদ্দিন

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পরিহার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প...

তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, ৫ উপজেলার বহু মানুষ পানিবন্দি

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে...

দেব–শুভশ্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়

দীর্ঘ বিরতির পর সাবেক প্রেমিক জুটি দেব ও শুভশ্রী পর্দায়। কৌশিক গাঙ্গুলীর &lsq...

নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে, আশা ইসির

আগামী সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে পারব...

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কাল

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা করতে আগামীকাল শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ব...

দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী

মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী। পাকিস্তানের বাণ...

তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, ৫ উপজেলার বহু মানুষ পানিবন্দি

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা