মতামত

আমরা নিজের পায়ে কুড়াল মারছি!

আবদুন নূর তুষার

শিক্ষাব্যবস্থায় অন্যভাষা ভালো করে শেখানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু যদি এমন হয় শিক্ষা সন্তানের মূলভাষাটাই বদলে দিলো, তাহলে সংস্কৃতি বিপণ্ণ হয়। দেশের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাবানদের সন্তানেরা যদি ঠিকমতো বাংলা না বোঝে, তাহলে তাদের কাছে তাদের চারপাশের এতো এতো শব্দ প্রায় দূর্বোধ্য হয়ে যায়।

এটা তাদের কোন দোষ নয়। এটা তাদের অপারগতা, যার কারণ আমাদের নীতিনির্ধারকদের অবিমৃষ্যকারিতা। এর ফলাফল কি সেটা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিজেকে চিন্তা করেন, চীনদেশে। আপনি ভাষা বোঝেন না। তাই চারদিকে যতো শব্দ, সব কিচিরিমিচির দুর্বোধ্য আপনার কানে। সবই অনাকাঙ্খিত শব্দদূষণের মতো বা নয়েজ।

একইভাবে এই ছেলেমেয়েদের পঁয়তাল্লিশ বা পঁয়ষট্টি বললে বোঝে না।সে যাচ্ছে, কে বলছে, গেতেছে, খাচ্ছেকে বলছে খেতেছে। পারি না কে পারতে, পারতেসি না বলছে। আবার পঁয়ষট্টিকে পঁয়সট , এগারোকে গেয়ারা বললে বোঝে কারণ হিন্দি ছবি দেখে। কিন্তু বাংলা সিনেমা দেখে না। বাংলা নাটক দেখে না। বাংলা বইও পড়ে না। বাংলা শুনলে তার কাছে নয়েজ মনে হলে সেটা অস্বাভাবিক কিছু না।

এর ফলে কি হবে?

নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যাবে ও গেছে একটা বিরাট প্রজন্ম। তাদের লেখক হবে জেকে রাওলিং। তাদের নায়ক হ্যারি পটার ।এটা তাদের জন্য হয় নাই। এটা হয়েছে সিস্টেমের দোষে। সিস্টেম কখনো দেখেছে যে এই ছেলেমেয়েরা বাংলা ঠিকমতো শিখছে কি-না! যদি টোফেল আইইএলটিএস দিতে হয়, ইংরেজি পারে কি-না বুঝতে, তাহলে পরে টোবেল ও আইবিএলটিএস চালু করতে হবে একসময়, বাংলা পারে কিনা দেখার জন্য।তারা এই সমাজের ৯০ ভাগ লোকের কাছ থেকে মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

অবশ্যই এর ব্যতিক্রম আছে। অনেক বাবা মা নিজেরা এই বিদেশি প্রভাবের পাশাপাশি তাদের সন্তানকে দেশের গান, নাচ ও সংস্কৃতি শেখাচ্ছেন। বোঝাচ্ছেন। কিন্তু বিপুল প্রতিকূলতায় সেটা সামান্য।

এখন আবার বিদেশি নিয়মের স্কুলের বেতন বাড়বে । তাতে একসময় আরো ধনীরাই কেবল এসব স্কুলে পড়বে। মধ্যবিত্তদের কষ্ট হবে এই বেতন দিতে। একদিকে শিশুদের নিজের ভাষা থেকে দুরে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে অন্যদিকে। সেই বিলেতি শিক্ষাকে বিলাস দ্রব্যের মতো চিন্তা করা হচ্ছে । যাতে দেশেই বিলেত হয় আর সেই বিলেতে যেতে পারে কেবল দুই থেকে ৫ ভাগ মানুষের সন্তান। বাংলা ভাষায় দেশি শিক্ষা জনগণের তাই সেটা গণপরিবহন আর বিদেশি শিক্ষা মার্সেডিজ।

পরিপূর্ণ মেধা থাকার পরও তাদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে না কেবল শিক্ষাব্যবস্থা ও ভাষার মধ্যে অমিল বা মিসম্যাচ হবার জন্য।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় , স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় , বিচার ব্যবস্থায়, অর্থ ব্যবস্থায় নানা রকম সমস্যা জিইয়ে রেখে সারাদিন যে উন্নয়নের গল্প শুনি আমরা সেটা টেকসই হবে না যদি মানুষের মন তৈরি না হয়। মানুষের জীবনবোধে পরিবর্তন না আসে।

আমাদের বই বিক্রি হবে না। আমাদের গান কেউ শুনবে না। আমাদের নায়কেরা নামের আগে হীরো লাগিয়ে হীরোমলম হবে। কারণ তাদের কেউ গুরুত্ব দেবে না, নায়ক মনে করবে না। নায়কেরা চলন্ত কৌতুক হবে। সংস্কৃতিতে বাজেটের .০৩৯ ভাগ বরাদ্দ প্রমাণ করে কিভাবে আমরা নিজের পায়ে কুড়োল মারছি।

লেখক- ডা. আবদুন নূর তুষার
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নাগরিক টেলিভিশন

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

মুন্সীগঞ্জে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ভূমি অফি...

লক্ষ্মীপুরে চলছে ৫ ইউনিয়নে ভোট

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

শহীদ শেখ জামাল’র জন্ম

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অত...

রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

হিটস্ট্রোকে একদিনেই ৬ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রা...

আইনি সেবায় মানবিকতাকেও স্থান দেয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনি সেবা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের...

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ড সফর শেষে আগামীকাল ব্যাংকক থেকে...

ডিপিএস এসটিএস স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা