স্বাস্থ্য

বিনামূল্যে ৮ লাখ ফাইজারের টিকা পাবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে এ টিকা ক্রয়, বিতরণ ও প্রয়োগের সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় নাগাদ এ টিকা এসে পৌঁছতে পারে দেশে ।

রোববার (১০ জানুয়ারি)রাতে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা ফাইজারের টিকা নেব। সেটা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলেছি। যা যা প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে, তাতে আমরা নিতে পারব। উক্ত টিকা বিনামূল্যে দেবে এবং আমরা যে নেব, সেটা কোভ্যাক্সকে জানাতে বলেছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কোভ্যাক্স বিনামূল্যে ৪ লাখ লোকের জন্য ৮ লাখ টিকা দেবে। এ টিকা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে। গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের ১৯২টি সদস্য দেশকে চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, জানুয়ারির শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে স্বল্পসংখ্যক টিকা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ এ টিকা নিতে চায় কি না তা ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করে গত শনিবার ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নিতে বলেন। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর ও করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

ফাইজারের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এখনও দেশে কোনও টিকা আসেনি। অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসার দিনক্ষণের ব্যাপারে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। ফলে এ টিকা কিছুটা হলেও করোনা থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে।এ মাসের শেষে বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি, যেকোনও সময় টিকা আসবে। তবে কোভ্যাক্স এখনও দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করেনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ো-এনটেক যৌথভাবে এ টিকা উদ্ভাবন করেছে। এ টিকার নাম ‘কমিরনাটি’। যুক্তরাজ্য প্রথম এ টিকার অনুমোদন দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এখন টিকার প্রয়োগ চলছে।

টিকা প্রয়োগের জন্য যে সুই-সিরিঞ্জ প্রয়োজন হয়, তা প্রচলিত সুই-সিরিঞ্জের চেয়ে আলাদা। এ টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে টিকার গুণাগুণ নষ্ট হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি (গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এন্ড ইমিউনাইজেশন) এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই) নেতৃত্বে করোনার টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স।

ফাইজারের টিকা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমরা ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা নিচ্ছি। তবে ঠিক কবে আসবে, সেটার দিনক্ষণ কোভ্যাক্স বলেনি। কোভ্যাক্স জানতে চেয়েছে আমরা নিতে চাই কি না, সেটা জানাতে। আমরা তাদের আমাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে দেবো।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও আইইডিসিআরে এ টিকা রাখা যায়, এমন ফ্রিজ আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহায়তা চাওয়া হতে পারে।

সরকার চাইলে ফাইজারের টিকা দেশে এনে দেওয়া সম্ভব জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এ টিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা দেশে খুব একটা নেই। যেহেতু কম আসবে, নিশ্চয়ই চেষ্টা করে ব্যবস্থা করতে হবে।

আমরা এখনও কোনও টিকা পাইনি। এটাই প্রথম আসবে। বিনামূল্যে পাব আমরা। কাজেই আমাদের যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আছেন, তাদের প্রথম সুযোগেই দেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিপফ্রিজ যেগুলো আছে, সেগুলোকে জীবাণুমুক্ত করে টিকা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এটার জন্য যে তাপমাত্রার (মাইনাস ৭০ ডিগ্রি) কোল্ডচেইন প্রয়োজন, সেটা আইইডিসিআরসহ সরকারি কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে আছে। কিন্তু সেই ল্যাবরেটরির ফ্রিজগুলোকে ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। কারণ এসব ফ্রিজে ভাইরাসের নমুনা রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ভাইরাসের নমুনা রাখার জন্য বিএসএম-৩ মাত্রার ল্যাবরেটরিতে অতি শীতল তাপমাত্রার ফ্রিজ আছে, সেগুলো এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

বেসরকারি খাতেও কিছু কোল্ডচেইন আছে। সেগুলো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানেও মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার ফ্রিজ আছে। সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে রাখা যায় কি না বা অল্প সময়ে এ ধরনের কনটেইনার বাইরে থেকে কিনে আনা যায় কি না বা এখানে তৈরি করা যায় কি না সব দিক দেখতে হবে। আমাদের প্রকৌশলীরাও পথ দেখাতে পারেন অতি দ্রুত কীভাবে কনটেইনার তৈরি করা যায়।

এ বিশেষজ্ঞ জানান, লিকুইড নাইট্রোজেন ও লিকুইড কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়েও এ টিকা সংরক্ষণ করা যায় কি না সেটাও দেখতে হবে। ডা. মুশতাক বলেন, এ টিকা স্বাস্থ্যকর্মীরাই পাবেন। সংক্রমণ বেশি এমন স্বাস্থ্যকর্মী রাজধানীতেই বেশি।

বৃহত্তম চট্টগ্রামেও এ ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। প্রাথমিকভাবে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করা সমস্যা হবে না। যদি টিকার তুলনায় স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বেশি হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীদের দিতে হবে। এর মধ্যে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তারা আগে পাবেন।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা