এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ: কাঁদি ভরা খেজুর গাছে/পাকা খেজুর দোলে/ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই/মামার দেশে চলে।পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার এ লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় খেজুর গাছে ঝুলে থাকা কমলা রঙের কাদিঁ ভরা খেজুর দেখে।
আরও পড়ুন: বিএনপির টপ টু বটম পদত্যাগ করা উচিত
বছরে দুইবার ফলন আসে খেজুর গাছে, শীতকালে ফলন দেয় মিষ্টি আর সুস্বাদু রস, আর গরমকালে দেয় কমলা রঙের খেজুর। এখন গরম কাল, তাই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল এবং বাড়ির আনাচে-কানাচে খেজুর গাছে ধরেছে কমলা রঙের খেজুর। যদিও কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের গাছ । গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না আগের মতো।
ঈশ্বরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, থোকায় থোকায় খেজুর গাছে ঝুলছে পাকা আধাপাকা খেজুর। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। এখনো প্রায় ১০থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে খেজুরগুলো পুরোপুরি পাকতে। তবে কোথাও কোথাও এরই মধ্যে পাকতে শুরু করেছে খেজুর। বিভিন্ন এলাকা ও সরকারি সড়কের খেজুর গাছের খেজুরগুলো স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা পেড়ে তা খেতে শুরু করেছেন। তবে এখনো খাওয়ার উপযোগী হয়নি খেজুরগুলো, এখন খেতে অনেকটায় কষ কষ, পাকলে তা মিষ্টি হবে। কিছু দিন পর পাকলে খাওয়ার উপযোগী হবে এবং অনেকেই এই পাকা খেজুর বাজারেও বিক্রি করবেন।
এক সময় গ্রাম-শহরের প্রায় মানুষের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে খেজুরের গাছ দেখা যেতো। অনেকেই নিজে রস নামাতো আবার কেউ গাছিদের মৌসুম চুক্তি দিয়ে দিতো। গাছিরা ভোরে গাছ থেকে রস পেড়ে মাটির হাঁড়িতে করে বিক্রি করতেন। সকাল হলেই তা সের হিসেবে কিনে মুড়ি দিয়ে খেতো অনেকেই। আবার অনেকেই খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করতেন। এখনো করা হয়।
ঈশ্বরগঞ্জের লক্ষীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন চরশংকর গ্রামের মেহেদী হাসান( তোফায়েল) বলেন, আমার বাড়ির পাশে তিনটি খেজুরের গাছ আছে, বয়স অনেক হয়েছে। ছোটবেলায় বাবা নিজেই গাছগুলো দেখাশোনা করেন। শীতের সময় মুড়ি দিয়ে খুব মজা করে খেতাম। এখন তিনটি গাছেই প্রচুর খেজুর ধরেছে। কিছু দিনের মধ্যেই তা পাকবে। কিন্তু গ্রামের ছেলেরা এখনি পেড়ে খাওয়া শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: চীনে ১১৩ যাত্রী নিয়ে প্লেনে আগুন
এদিকে উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ টু উচাখিলা রোডে রাস্তার পাশে খেজুর পাড়ছে কিশোর তানভীর। সে বলে, এখনো পাকেনি, খেজুর এখনো পুরোপুরি পাকেনি একটু কোষ্টা (কষ)। তবে দেখে আর মন মানছে না। কিন্তু গাছ মালিক দেখলে দৌড়ানি দেবে।
অন্যদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের লাগানো খেজুর গাছগুলোতেও ধরেছে কাঁদি কাঁদি খেজুর।
পার্শ্ববর্তী টি এন্ড রোডে চলাচলকারী মানুষের মন কেড়েছে এ রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় দন্ডায়মান খেজুর গাছটি। পথচারীরা বলেন, এখন তো আর আগের মতো খেজুরের গাছ নাই। এ গাছটিতে অনেক খেজুর ধরেছে, দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
উপজোর টি এন্ড রোডে অবস্থিত আল-সাফা কিন্ডারগার্টেন এন্ড ইসলামিক একাডেমির শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রথমত খেজুর খাওয়া সুন্নত।পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক।খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তাই প্রতিদিন খেজুর খেতে পারলে স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
সাননিউজ/এমআরএস