শিল্পীর তুলিতে কারবারা প্রান্তরে ইমাম হোসাই (আ) ও ইয়াজিদ বাহিনীর অবস্থান
ফিচার

আজ কারবালায় পৌঁছেন ইমাম হুসাইন (আ)

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার হতে ১৩৮২ চন্দ্র-বছর আগে ৬১ হিজরির এ দিনে (দোসরা মহররম) কারাবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বিশ্বের সবচেয়ে করুণ অথচ বীরত্বপূর্ণ ঘটনার অকুস্থল কারবালার মরু-প্রান্তরে এসে পৌঁছেন। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সর্বোচ্চ ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে ৮ দিন পর মানবতার শত্রুদের হাতে এখানেই তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন।

কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের গভর্নর নিনেভা বা নেইনাভা অঞ্চলের কারবালা প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের কাফেলার আগমন সম্পর্কে জানতে পারে। পানি, ঘাস ও দুর্গবিহীন এই শুষ্ক এলাকায় কুফাগামী ইমামের কাফেলাকে নিয়ে আসার পেছনে ছিল ইয়াজিদ-বাহিনীর জেনারেল হোরের ভূমিকা। এমন একটি এলাকায় ইমামের কাফেলাকে আসতে বাধ্য করার জন্য হোরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

ইমাম হুসাইন (আ) কারবালায় পৌঁছেই জানতে পারেন ওই এলাকার নাম কারবালা। তখনই তিনি জানান যে, সেখানে তাঁর ও সঙ্গীদের শাহাদত ঘটবে এবং তাঁদের নারী ও শিশুদের বন্দী করবে ইয়াজিদ বাহিনী। এ দিনেই তিনি কাইস বিন মাসহারকে দূত হিসেবে কুফায় পাঠান। ইমাম তার কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কুফায় তাঁর সমর্থক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইয়াজিদের সেনারা কাইসকে পথে গ্রেফতার করে। কাইস ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শহীদ করা হয়।

ইবনে জিয়াদ দোসরা মহররম ইমামের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে সে জানায়, তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদের প্রতি বায়আত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর অন্যথা হলে তাঁদেরকে হত্যা করতে বলেছেন ইয়াজিদ। ইমাম এ চিঠির জবাব না দিয়ে বললেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।

জালিম ও মহাপাপিষ্ঠ শাসক ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি মহাবিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। যাতে নানাজান বিশ্বনবী (সা.)’র ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা পায় এবং প্রকৃত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পথ খুলে যায়।

মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে তিনি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এরপর নিরাপত্তার কারণে এবং পবিত্র ও শান্তির নগরী মক্কায় রক্তপাত এড়ানোর জন্য তিনি হজ্ব না করেই ইরাকের কুফার দিকে রওনা দেন।

উতারো সামান, দেখ সন্মুখে কারবালা মাঠ ঘোড় সোয়ার!

জ্বলে ধূধূ বালু দোযখের মত, নাই সবজার চিহ্ন আর।

আকাশে বাতাসে কার হাহাকার? পান্থপাদপ লোহু সফেন,

আজ কারবালা ময়দানে মোরা দাঁড়ায়েছি এসে হায় হোসেন!

খুনের দরিয়া দেখেছি স্বপ্নে, কারবালা মাঠে দেখেছি খাব,

আহাজারি ওঠে দুনিয়া জাহানে, ভাসে আসমানে কোটি বিলাপ;

হবে সয়লাব দুনিয়া জাহান- শান্ত মক্কা মুয়াজ্জমা;

জুলুমের তেগ হানবে জালিম গাবে না এখানে উদার ক্ষমা।

(কবি ফররুখ আহমদের 'শহীদে কারবালা' কবিতার অংশ বিশেষ)

ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন শুনে কুফার দোদুল-মনা লোকেরা তাঁকে ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়ার ও ইসলামী হুকুমাত কায়েমের মাধ্যমে মদ্যপ, জুয়াড়ি ও ব্যভিচারী ইয়াজিদের প্রজা হওয়ার কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

কুফাবাসী’র পক্ষ থেকে ১৮ হাজার চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছে এবং প্রতিটি চিঠির মধ্যে ১০০ জনের স্বাক্ষর ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের সময় কারবালায় খুব কম লোকই তাঁকে সহায়তা দিয়েছে। ফলে ইয়াজিদের প্রায় ত্রিশ হাজার সদস্যের সুসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ থেকে ১৪০ জন সঙ্গী নিয়ে তিনি বীরের মতো লড়াই করে শহীদ হন।

এই অসম লড়াইয়ে তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যসহ ৭২ জন সঙ্গী শহীদ হন। কারবালা বিপ্লব মুসলমানদের মধ্যে প্রকৃত ইসলামের চেতনা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। আর এ জন্যই বলা হয়: ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ। অর্থাৎ প্রতিটি কারবালার পরই জীবিত হয় ইসলাম।

ইমাম হুসাইন (আ.) মনে করতেন তাঁর শাহাদত ও রক্তদান ছাড়া যদি ইসলাম পুনরুজ্জীবিত না হয় তাহলে শাহাদতই উত্তম এবং ইয়াজিদের মতো শাসক যদি বিনা বাধায় ও আপত্তিতে ‘ইসলামী সমাজের নেতা’ হন তাহলে ইসলাম চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। সত্যের পথে শাহাদত মধুর চেয়েও মিষ্টি –এই সংস্কৃতি চালু করে গেছেন কারবালার বীর শহীদরা।

ইসলামকে আর কোনো কিছুই এতো প্রাণ ও মর্যাদা দেয় না যা দেয় শাহাদত।

কবি নজরুলের ভাষায়: আঁজলা ভরে আনলো কি প্রাণ কারবালাতে বীর শহীদান?

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইরান ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিল, দাবি নেতানিয়াহুর

ইরানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের সবচেয়ে ব...

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

বগুড়ায় সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেছেন,শহ...

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) আর বেঁচে নাই। মঙ্গলবার(১৭ জুন) ভোর...

মোসাদ-এর সদরদপ্তরে হামলার দাবি ইরানের

মোসাদ-এর সদরদপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবা...

‘মি. ট্রাম্প, আমরা কারা জানতে চাইলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন’- ইরান মিলিটারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা ছড়িয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা