ফিচার

চাহিদার শীর্ষে হাতে ভাজা মুড়ি 

নিজস্ব প্রতিনিধি,গাজীপুর: হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদই ভিন্ন। আর সেই স্বাদের চাহিদা মেটাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বগারপুর, বহেরাতলী, পাশ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা, জৈনাতলী গ্রামে সারা বছরই হাতে মুড়ি ভাজা হয়।

ওইসব গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবার হাতে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতি বছর হাজার হাজার মণ ধানের মুড়ি ভাজা হয় এসব গ্রামে। রমজান মাসে এর চাহিদা বেশি থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে হাতে মুড়ি ভাজা হয়।

৫ মণ ধানের মুড়ি ভেজে ৫ জন শ্রমিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মুজুরি পান। মুড়ির বেপারীরা ধান কিনে পরিবারের মধ্যে সরবরাহ করেন। পরে তারা ধান শুকানো, সিদ্ধ করা, ভাঙানো এবং সবশেষ মুড়ি তৈরির কাজটি করেন। মুড়িগুলো স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা হয় না। এগেুলো রাজধানীর গাবতলী, আমিনবাজার, মিরপুর, কারওয়ানবাজার এলাকায় সরবরাহ করা হয়।

বারতোপা গ্রামের বানিছ সিকদার জানান, এলাকার মধ্যস্বত্বভোগী পাইকাররা প্রতিবারে তাকে ১৫০ মণ ধান সরবরাহ করেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে রোদে শুকানো, সিদ্ধ করাসহ ১০ মণ ধান প্রক্রিয়া করতে তাদের এক মাস সময় লেগে যায়। পরে সর্বোচ্চ দুই দিনে তারা মুড়ি ভাজতে পারেন।

কালিয়াকৈরের বগারপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে উদ্যোক্তা বিল্লাল হোসেন জানান, ইরি ও শাইল আবাদের সময় নাটোর ও বরিশাল থেকে বেপারীরা তাকে ধান সরবরাহ করেন। প্রতিবারে ২০ মণ ধান সরবরাহ করেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে তারা কয়েকজন উদ্যোক্তা একত্রে সমন্বয় করে ১৫ দিনের মধ্যেই মুড়ি সরবরাহ করতে পারেন। লোকবল নিয়ে প্রতি বছর ১ হাজার মণ ধানের মুড়ি ভাজতে পারেন।

তিনি জানান, বাড়ি থেকে তিনি কিছু মুড়ি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন। পাইকারি কেজি ৮৫ ও খুচরা কেজি ১’শ টাকা বিক্রি করেন। ভালো মানের ধান হলে মূল্য বেশি হয়ে থাকে। ৪০ কেজি ধানে ২৩/২৪ কেজি মুড়ি হয়। একেক সময় একেক মূল্যের ধান সরবরাহ করা হয়। ধানের মূল্য সাধারণত ১৪’শ টাকা মণ হয়ে থাকে। ভাল মানের ধানের মূল্য ১৭/১৮’শ টাকা মণ হয়ে থাকে। প্রতিবারে আড়াই’শ কেজি মুড়ি ডেলিভারি করতে পারেন।

মুড়ি শ্রমিক মৃত কেরামত আলীর স্ত্রী রূপজান (৬৫) বলেন, যে শ্রমিক ভাজা চাউল গরম বালিতে মেশান তার মুজুরি ৫’শ টাকা। অন্যান্য সহযোগীদের ৪’শ টাকা করে দেওয়া হয়। মুড়ি শ্রমিক শাহিদা খাতুন (৩৮) জানান, উদ্যোক্তা আর শ্রমিকদের মধ্যে সমন্বয় আছে। আমরা কষ্ট করে প্রতি সাড়ে ৫’শ মণের বিপরীতে ওই পরিমাণ পারিশ্রমিক পাই। এতে দেখা যায় ধান ভাঙানো বাদে একেকজন গড়ে ৫’শ টাকা মজুরি পান। যা উদ্যোক্তাসহ ৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। শ্রমিক বেশি হলে মজুরি কমে আসে এবং সময় কম লাগে। নিজেরা ধান কিনে মুড়ি ভাজতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেত। কিন্তু মূলধন না থাকায় এলাকার অর্ডার সরবরাহকারী ও বেপারীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। ভোক্তা পর্যন্ত মুড়ি পৌঁছাতে মাঝখানে চারজনের হাত বদল হয়।

একই গ্রামের মৃত সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী উদ্যোক্তা কমলা খাতুন (৪৫)বলেন, বেপরীরা ধান দেয়। প্রথম দিন গরম পানি করে ফেলতে হয়। তারপর সেদ্ধ , শোকানো ও ভাঙাতে হয়। আমরা ৩ হাজার, ৩২’শ টাকা পারিশ্রমিক পাই। ১১ মণ ধানের মুড়িতে ১০ কেজি লবণ ব্যবহার করি। রমজানের ১৫দিন আগে থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত মুড়ি বেশি আর্ডার পাওয়া যায়। তখন চাহিদা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো চালান নাই, মুড়ি ভাজতে ভাল লাভ পাওয়া যায় না। এলাকায় সুলভ মূল্যে লাকড়ী পাওয়া যায়। তাছাড়া আমরা মুড়ি ভাজার কাজটা ভাল জানি। তাই এ পেশায় লেগে আছি। অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়ে কল কাখানায় চাকরি করছে। সরকার যদি কিছু সাহায্য করত তাহলে নিজেরাই ধান কিনে মুড়ি ভেজে বাজারজাত করতে পারতাম। এখন ধানের দাম বেশি। ধানের দাম কম হলে লাভ ভাল হতো।

এ বিষয়ে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের শ্রীপুর “পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক”এর শাখা ব্যবস্থাপক শাহীনুর নাহার মৌরী বলেন, তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হয়। তবে এককভাবে সমিতির বাইরে কাউকে ঋণ দেওয়া হয় না। ঋণ গ্রহীতাদের ৪০ জনের একটি সমিতির আওতাভুক্ত হতে হয়। এর মধ্যে নারী ও পুরুষ সদস্যের অনুপাত হতে হয় অর্ধেক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাঙ্খিত নারী সদস্য পাওয়া না গেলে সেখানে পুরুষ সদস্য দিয়েই সমিতি গঠন করা হয়। এ অর্থ বছরে সমিতি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে।

সান নিউজ/আরএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

শহীদ শেখ জামাল’র জন্ম

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অত...

রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

লক্ষ্মীপুরে চলছে ৫ ইউনিয়নে ভোট

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

মুন্সীগঞ্জে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ভূমি অফি...

ডেঙ্গুতে বিশ্বে ৪০ হাজার মৃত্যুর আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডেঙ্গু রোগে...

গোটা দেশকে বন্দিশালা বানানো হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির অঙ্গ ও...

নারী আম্পায়ারের সমালোচনায় সুজন

স্পোর্টস ডেস্ক: চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ড...

যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর আঘাত, নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে টর্নেড...

বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা