খোরশেদ আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন : পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে লিগ্যাল নোটিশ
রবিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতিতে অনেক মনযোগী। ফলে তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায় না। এই পরিস্থিতির কারণেই কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছে। আজকের দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হত্যার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ সেই দিনেই আমরা আরেকটি নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। দেশব্যাপী ও আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানে ব্যর্থ। কারণ, ঘটনার পর ওই ছেলে একটা ট্রমার মধ্যে ছিল। কথা বলতে পারছিল না। তখন তাকে দ্রুত ট্রমা সেন্টারে নিতে হত। কিন্তু তাকে আবার ওই হলেই রাখা হয়েছিল। যেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা আবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। এখানে তাঁর এই নিরাপত্তাটুকু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিতে পারে নি। আমরা চাই, দ্রুতই জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হোক। তদন্ত সাপেক্ষে সে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে চিরদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন : ইমরান খানের বক্তব্য সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা
অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী টিপু সুলতান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থী প্রতিদিন অনিরাপত্তার ভেতর দিয়ে দিন পার করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যখন আমরা থাকি তখন মনে হয় নিজের বাড়িতে আছি। আমার নিজের বাড়িতে যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে আর কোথায় গিয়ে নিরাপত্তা দাবি করব? প্রত্যেকটি দাবিতে তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিন্তু তদন্তের ফল আমরা দেখি না। মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হচ্ছে কিন্তু কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে কি-না তা আমরা দেখতে পাই না। বিশ্ববিদ্যালয় আজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যদি আজ এই অবস্থা হয় তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? কার কাছে গিয়ে বিচার চাইবে?’
এদিকে অর্থনীতি বিভাগের এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে মানববন্ধনের অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস রাইট এসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: তাইওয়ানকে ঘিরে চীনা ২১ যুদ্ধবিমান
এ সময় সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মেহেদী সজীব বলেন, ‘একজন সাধারণ ছাত্রকে তিন ঘণ্টা ধরে রুমে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। একটি ছাত্র সংগঠন কোনো অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী বিরোধী কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানাই। এছাড়া পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদ হোসেন বাবুর সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এনকে