আদিল সরকার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া): দিন দিন মাদকের রাজত্ব ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গাঁজা, ইয়াবা, প্যাথিটিনসহ ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্যসমূহ ক্যাম্পাসে ঢুকছে নিয়মিত। বহিরাগত থেকে বড় ভাই, তারপর নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসছে বিশ্বকাপ ট্রফি
অন্ধকার এই জগৎ থেকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন একাধিক শিক্ষার্থী। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্রের গন্ডি পার হয়ে মাদক নিরামক কেন্দ্রেও (রিহ্যাব) পাঠাতে হচ্ছে মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের।
সাধারণত রাতের বেলায় আবাসিক হলসমূহের সাদেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আসর বসাচ্ছে তারা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর পরিবেশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ ও আবাসিক হলে নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, গতপরশু (২৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ইবি থানা পুলিশ। বিভিন্ন উপায়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে সে এই মাদক সরবরাহ করেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও তাকে ক্যাম্পাসের ভিতরে একাধিকবার দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলাচল শুরু
আনোয়ার জোয়ার্দার নামের এই ব্যবসায়ীর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার পদমদি গ্রামে। রাত ১০ টার দিকে তাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। এর আগেও ক্যম্পাসে মাদক সরবরাহ করতে এসে গেইট থেকে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বহিরাগতদের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের কাছ থেকে সহজেই মাদক পাচ্ছেন নতুন আসা শিক্ষার্থীরা। ফলে মাদকাসক্তের তালিকা দিন দিন যেন বেড়েই চলছে। রাতের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক এলাকায়, বঙ্গবন্ধু হল পুকুর পাড়, পেয়ারা তলা, আবাসিক হলসমূহের সাদে মাদকের এসব আসর বসাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: শুভকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতেই পারি না
অতিরিক্ত মাদকাসক্তের ফলে গত ২৩ মে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। পরে ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠান৷ আশিকুর রহমান কোরাইশি নামের ওই শিক্ষার্থী হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র৷ জানা যায়, ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশিক ও তার বন্ধুরা কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠে ডেস্কপটেন প্লাস সিরাপ ও ডিসোপ্যান ট্যাবলেট একত্রে মিশিয়ে সেবন করেন। এসময় অতিমাত্রায় সেবন করার ফলে আশিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
এছাড়া অত্যাধিক মাদক সেবনের ফলে গত ১৬ জানুয়ারি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী। পরে তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুনর্জন্ম মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। দস্তগীর হোসেন নামের ওই শিক্ষার্থী হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আরও পড়ুন: পেট্রোল ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারলো স্বামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক পারভেজ হাসান থেকে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী গাঁজা, ইয়াবা ছাড়াও প্যাথিটিন, ন্যালবানসহ অন্যান্য মাদক অতিরিক্ত মাত্রাই গ্রহণ করতো। এগুলো অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলেই মানসিকভাবে বিকৃত হয়ে পড়েন সে। দস্তগীর জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত এই মাদক গ্রহণ করতো বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সহজলভ্যতা ও আবাসিক হলসমূহে প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় ক্যাম্পাসে মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে মাদক দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান প্রদক্ষেপের আহ্বান তাদের।
আরও পড়ুন: পথশিশুকে বিয়ে দিল গান্ধি আশ্রম ট্রাস্ট
ইয়াবা ব্যবসায়ী আটকের বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মাদকসহ মেইন গেইট থেকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। মাদকের মূল উৎপাটন না করা পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মাদক ঢুকার বিষয়ে থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদেরকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া প্রভোস্টদের মাধ্যমে আবাসিক হলসমূহে মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
সান নিউজ/কেএমএল