নিজস্ব প্রতিনিধি:
বুধবার (১ জুলাই) শতবর্ষে পা দিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। মঙ্গলবার (৩০ জুন) ৯৯ বছর পূর্ণ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। ২০২১ সালের ৩০ জুন একশ’ বছর পূর্ণ হবে। একশ’ বছরে পা দেওয়ার প্রথম দিন আজ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করবে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নতুন নতুন নানা গবেষণা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই পরিচিতি পায় বেশি। আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেও তারা তাদের প্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে আছেন ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।
কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বল্প পরিসরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। পতাকা উত্তোলন ও বেলুন ওড়ানোর পর সকাল ১১টায় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অনলাইন সভা করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইন ভার্চুয়াল সভায় জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সংযুক্ত হয়ে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক মূল বক্তব্য দেবেন।
দিনটি উপলক্ষে ঢাবি উপাচার্য জানিয়েছেন, ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০২০ সালের এই দিনে ৯৯ বছর শেষ করে শতবর্ষে পা দিলো আমাদের এই চিরতরুণ প্রতিষ্ঠান। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকসমাবেশ এড়িয়ে প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীবিহীন স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন নিঃসন্দেহে আনন্দ, প্রশান্তি ও স্বস্তির ঘাটতি অনস্বীকার্য। তবে মুজিববর্ষের এই অলোকসামান্য কালপর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে, ‘বঙ্গবন্ধু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির দুই অন্তহীন প্রেরণা-উৎস।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে আমাদের অস্তিত্বপ্রতিম এই প্রতিষ্ঠান শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও একই বছর উদযাপিত হবে। তাই বছরটি হবে আমাদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা, সম্মান, আবেগ, অনুভূতির সংশ্লেষে গৌরবদীপ্ত ও স্মৃতি-ভাবুকতার বছর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান। তার মতে, নতুন নতুন গবেষণা এবং তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ফলাও করে প্রচার করতে হবে। বলেন, ‘অনেকেই জানেন না নতুন নতুন গবেষণার তথ্য। এগুলো মানুষের চর্চা এবং ব্যবহারে কাজে লাগতে পারে। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো উপস্থাপনে এখনও অনেক ঘাটতি আছে। ১০০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, তার এতগুলো বিভাগ এতগুলো কার্যক্রম, কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঘটনা পত্রপত্রিকায় ফলাও করে বের হয়। এমনকি ছোট ঘটনা হলেও তা পত্রিকায় জায়গা করে নেয়। কিন্তু অনেক গবেষণার সাফল্য কিংবা খবর সামনে আসে না। আমার কাছে মনে হয়, এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন সাদেকা হালিম মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় নারীর জন্য যোগ্য স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘একমাত্র নির্বাচিত ডিন হিসেবে এখন আমি আছি। ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণী জায়গায় আরও নারীদের আসার সুযোগ আছে।’