কিছুদিন আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বহু সৈন্য প্রাণ হারান। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এই হামলা শুধুমাত্র একটি নৃশংস আক্রমণই ছিল না, বরং এটি পুরো দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘‘পূর্ণ স্বাধীনতা’’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে তারা অভিযুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত
এছাড়া, মোদী জানিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে কাশ্মীরের মধ্যে এবং এর আশেপাশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূল করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে যাতে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।” মোদীর এই নির্দেশনাটি একদিকে যেমন বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, তেমনি অন্যদিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এক কঠোর বার্তা দেবে।
এবার ভারতীয় বাহিনীর কাছে কেবল নিরাপত্তার দায়িত্বই নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে একটি নতুন ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে। বিশেষত, কাশ্মীরের মতো রাজ্যের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে মোকাবেলা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম: দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার মুখোমুখি
পেহেলগামের এই হামলাটি নতুন কিছু নয়। কাশ্মীরের পরিস্থিতি এমন একসময় থেকে অস্থির, যেখানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ প্রায়শই ঘটছে। এর আগে বহু বার ভারতীয় বাহিনী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা এত সহজ নয়, কারণ সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত সংগঠনগুলো বেশ শক্তিশালী। মোদীর সিদ্ধান্ত বাহিনীকে দৃঢ়ভাবে এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ দেয়।
নিরাপত্তার প্রতি ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতি
নরেন্দ্র মোদী গত কিছু বছরে কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরালো করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এই পদক্ষেপগুলো একদিকে যেমন সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তেমনি জনগণের মধ্যে আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। মোদীর সরকারের পাশাপাশি, ভারতীয় সেনাবাহিনীও সন্ত্রাসী হামলা রুখতে এবং কাশ্মীরের শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
মোদীর এই সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরের স্থানীয় জনগণের মধ্যে mixed reactions লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে এবং তারা দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর এই উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কিছু সমালোচক চিন্তা করছেন, বাহিনীর উপর অতিরিক্ত স্বাধীনতা দিলে হয়তো স্থানীয় জনগণের ওপর অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োগ হতে পারে, যা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে।
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত শুধু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নয়, বরং কাশ্মীর অঞ্চলে শান্তি স্থাপন করার জন্যও। তবে, এই পদক্ষেপের সফলতা শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর ওপর নির্ভর করবে না, বরং সরকারের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও কাশ্মীরের জনগণের সহযোগিতার ওপরও প্রভাবিত হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই শক্তিশালী পদক্ষেপের পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী প্রতিক্রিয়া আসে এবং কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসে কিনা। তবে, একথা নিশ্চিত যে, মোদীর এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদীদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে—ভারত কখনোই তাদের কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না।
সাননিউজ/ইউকে