ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী ২ ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের একজনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি যুবলীগ নেতার ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে হাদি হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ ও র্যাব।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শহীদ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং এর নেপথ্যের ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে শুটার ফয়সাল ও তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলচালক আলমগীরকে সীমান্ত পার করার ব্যবস্থা কে বা কারা করেছে, সে তথ্যও পাওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী (বাপ্পী)। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল মিরপুর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ভারতে পালিয়ে যান।
হাদি হত্যা মামলার আসামি বা গুলিবর্ষণকারী হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও তাঁর সহযোগী আলমগীর আদাবর থানা যুবলীগের কর্মী।
সীমান্ত পার হন যেভাবে
এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনা ঘটিয়ে ওই রাতেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
সীমান্ত পার হওয়ার জন্যও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল। আর সেটা করেছিলেন যুবলীগ নেতা তাইজুল। হালুয়াঘাট সীমান্তে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে মানুষকে সীমান্ত পারাপার করে সেই এলাকায় এমন কিছু দালাল রয়েছে। তাদের একজন ফিলিপ স্নাল। তাঁর বাড়ি হালুয়াঘাট সীমান্তসংলগ্ন ভুটিয়াপাড়া গ্রামে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শহীদ হাদিকে গুলি করার কিছুক্ষণ পর সাবেক কাউন্সিলর তাইজুল তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুলকে ফোন করে বলেন, তিনি ভারত থেকে ফিলিপকে ফোনে পাচ্ছেন না। আমিনুল যাতে ফিলিপকে ফোনে যোগাযোগ করে জানান যে দুই ব্যক্তিকে ওই রাতেই সীমান্ত পার করতে হবে। এরপর আমিনুল ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাইজুলের বার্তা পৌঁছান। তারপর বিষয়টি তাইজুলকে জানান। তাইজুলের নির্দেশনায় আমিনুল তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিপকে ৫ হাজার টাকা পাঠান। এদিকে ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা থেকে কয়েক দফা যানবাহন পাল্টে ওই রাতেই হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছান। সেখান থেকে দুজনকে ফিলিপ সীমান্ত পার করান।
হাদিকে গুলি করার ঘটনার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফয়সাল ও আলমগীরের হালুয়াঘাট সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তী সময়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে ফিলিপের দুজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, ওই দুজনকে পার করানোর পর টেলিভিশনের খবর দেখে বুঝতে পারে, এরা ঢাকায় বড় ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে। এরপর ফিলিপকে সতর্ক করলে সে-ও আত্মগোপনে চলে যায়।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ফিলিপের সঙ্গে কাদের কীভাবে যোগাযোগ হয়েছে, সেটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আমিনুলের সংযোগ পায়। এরপর আমিনুলকে আটক করা হয়।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমিনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আমিনুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে তাঁর সঙ্গে ঘটনার দিন ফিলিপ ও তাইজুলের যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। আমিনুল চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। তিনি অনেক দিন ধরে গণসংযোগ করে আসছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। গত রবিবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা হয়। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হয়।
আমারবাঙলা/এসএ