সারাদেশ

পুরুষশূন্য গ্রামের নারীরা হাটে, বেকায়দায় ক্ষেতের ফসল

নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর : ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গ্রেফতার আতঙ্কে বিভিন্ন গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় নারীদের যেতে হচ্ছে হাটে। কিন্তু মাঠের ফসল নিয়ে তারা পড়েছেন বেকায়দায়।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে এমন চিত্র। নারী ও শিশু ছাড়া আর কেউ বাড়ি নেই। নারী ও শিশুদের চোখেমুখে দেখা গেছে ভয়ের ছাপ। তারা বাইরের কাউকে দেখলেই ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। ফসলের মাঠেও দেখা মেলেনি কোনো কৃষকের।

রোববার সালথা বাজারে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক হাটের দিন বিভিন্ন গ্রামের নারীরা পেঁয়াজ-পাটসহ নিত্যপণ্য কেনাবেচা করছেন। কেউ কেউ বাজার করতে এসেছেন।

পেঁয়াজ বেচতে আসা সালমা বেগম নামে এক নারী বলেন, বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে সবাই। বাড়িতে পেঁয়াজ ছিল। সেগুলো বিক্রি করতে এসেছি। বিক্রি করে যে টাকা পাব তাই দিয়ে বাজার-সদাই করব আর কিস্তি দেব।

যেখান থেকে ঘটনার শুরু সেই ফুকরা বাজারে দেখা গেছে, সব দোকানপাট বন্ধ। সেখানে কথা বলার মত কোনো পুরুষকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় হাসি বেগম নামে এক নারী বলেন, সব সময় ভয়ে আছি। কোন সময় পুলিশ আসে এই আতঙ্কে দিন কাটে। বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই। সবাই গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে রয়েছে।

মিলি আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, ভয়ে বাড়ির সবাই পলাতক রয়েছে। বাড়িতে রয়েছি আমি ও শিশুসন্তানরা। বাড়িতে বাজার-সদাই নেই। কোনো পুরুষলোক নেই যে তাকে দিয়ে বাজার করাব। ঘরে যা ছিল তা দিয়েই কোনো রকমে চলছি।

মারুফা নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, ফসল ওঠানোর সময় এখন। পুরুষমানুষ বাড়িতে না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছি না। এই ফসল বিক্রি করেই সারা বছর সংসার চলে। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

শৌলডুবি গ্রামের মালেকা বেগম বলেন, ভয়ে আমার স্বামী বাড়িতে থাকেন না। ছেলেকে আগেই বাইরে আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। জমিতে ফসল রয়েছে। সেগুলো কেটে ঘরে তুলতে হবে। কিন্তু পারছি না।

ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার বলেন, কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে কয়েক দিনের জন্য বিভিন্ন গ্রামে এজাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আশা করি দ্রুতই এ অবস্থা কেটে যাবে।

জেলার পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তাদের আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মোট ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দুইজন গুলিবিদ্ধ। তাদের পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর মিরান মোল্লা (৩৫) নামে একজন গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হামলার সময় জুবায়ের হোসেন (২০) নামে আহত একজনের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর পর ৪৮ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের লোকজন রামকান্তপুর এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সালথা থানা, উপজেলা পরিষদ ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। গুজব ছড়িয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে প্রশাসন ও স্থানীয়দের ভাষ্য। এ ঘটনায় পাঁচ মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ কয়েক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা