নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর : ফরিদপুরে দুটি গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই দুটি গ্রামের ২৪টি পরিবারের ৬৯টি বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া দুই একর ফসলি জমি এবং অন্তত ৩৩ মিটার এইচ বি বি সড়কও নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে পল্লী বিদ্যুতের তিনটি খাম্বা। ফলে ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গী ও আয়জদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে গত শনিবার ১৭ জুলাই দিবাগত রাত ৩টা থেকে এ ভাঙ্গন শুরু হয়। টানা তিনদিন ভাঙ্গনের তীব্রতা ছিল ভয়ংকর। বর্তমানে তীব্রতা কমে এলেও ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
রবিবার (২৫ জুলাই) ওই দুটি গ্রামে গিয়ে ভাঙ্গনের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। ভাঙ্গন নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গি থেকে শুরু হয়ে পূর্বদিকে আয়জদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে। ওই দুটি গ্রামে অন্তত এক কিলোমিটার অংশ দেড়শ মিটার প্রস্ত হয়ে ভেঙ্গে গেছে। নদীর পাড়ের চাকগুলিও ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলজিইডির এইচ বি বি সড়কে ভেঙ্গে ফেলা বাড়িগুলির টিন, কাঠসহ আসবাবপত্র স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা ওই সড়কের উপর নতুন করে ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। বেশির ভাগ লোক কোন রকমে ঝাপতুলে বসবাস করছে।
ওই দুটি গ্রামে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার বসবাস করে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ইট ভাটায় কাজ করেন। দুটি ইট ভাটা রয়েছে দুটি গ্রামে। ওই ভাটা দুটি হুমকির মুখে রয়েছে। পাশাপাশি অনেকে যুক্ত কৃষি কাজের সাথে আবার কেউ কেউ মুদী, ভাঙ্গারীর ব্যবসা করেন। এছাড়া দুটি গ্রামের আরও অন্তত অর্ধশত পরিবার ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ডিক্রির চর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ভাঙ্গন ঈদের আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তবে বর্তমানে ভাঙ্গনের গতি কম। তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেককে সাহায্য দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যাদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে বা ভেঙে ফেলতে হয়েছে তা কোথায় এবং কোন প্রক্রিয়ায় তুলে দেওয়া যায় সে বিষয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফরিদপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা বলেন, এ ভাঙ্গনের কথা তিনি গত ২৫ জুলাই রবিবার জেনেছেন এবং ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি লবণ, ১টি সাবান ও এক প্যাকেট গুড়া সাবান বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, তিনি সোমবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে বসে থাকবে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক আবুল হোসেন বলেন, ভাঙ্গনের কারণে ওই এলাকার অর্ধশত বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ভাঙ্গান রোধ হলে পুণরায় সংযোগ দেওয়া হবে।
সান নিউজ/এসএ