সান নিউজ ডেস্ক: গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বন্ধ থাকার পর এবার রমনার বটমূলে শুরু হলো বর্ষবরণ উৎসব। প্রত্যুষে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন, আর বেলা বাড়ার সঙ্গে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে বরণ করা হবে বাংলা বছরের প্রথম দিন। এছাড়াও দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে দিনটিকে বরণ করে নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে রমনার বটমূলে সূচনা হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণ-১৪২৯ এর অনুষ্ঠান।
এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে ছায়ানটের শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত মন, জাগ মঙ্গললোকে গানের মধ্য দিয়ে নতুন বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানান।
ছায়ানটের ৮৫ জন শিল্পী বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নেন। এ সময় মঞ্চের সামনে বসে কয়েকশ মানুষকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠান দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনি কিশোর রায় বলেন, আগে কখনো আসিনি। এবারই প্রথম আসলাম। প্রথমবার সরাসরি এ অনুষ্ঠান দেখে ভালো লাগছে।
আরও পড়ুন: চমক নিয়ে আসছেন ইমরান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সায়মান হোসাইন সাইফ বলেন, এবারের আয়োজনটা ভিন্ন রকম মনে হচ্ছে। অনেক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে রোজার মধ্যে হওয়ায় এবার পান্থা ইলিশটা থাকছে না। ফলে পহেলা বৈশাখের যে আমেজটি সেটা একটু ভিন্নই হচ্ছে।
এদিকে, অনুষ্ঠানে পঞ্চকবির গান ছাড়াও থাকছে লোকগান, ব্রতচারীদের একটি গান ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল। লোকগানের মধ্যে থাকছে নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে।
অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন।
মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। আর ষাটের দশকের শেষে বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে।
আরও পড়ুন: ২৩ লাখ মানুষ পাবে ডায়রিয়ার টিকা
কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
সাননিউজ/এমআরএস