ফিচার

যেভাবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘হাসির’ মহামারি!

ফিচার ডেস্ক: বিশ্বে কত ধরনের রোগ আছে, তার পরিসংখ্যান হয়তো চিকিৎসাবিজ্ঞানেও নেই! যুগে যুগে বিভিন্ন রোগে ভুগছে বিশ্ব। এরপর তৈরি হয়ে সেসব রোগ থেকে বাঁচার ওষুধ।

ঠিক এখন যেমন করোনাভাইরাস ত্রাসে বিশ্ববাসী আতঙ্কিত; তেমনিই বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব সম্মুখীন হয়ে নানা মহামারি রোগে।

হাসি মহামারির কথা শুনেছেন কখনো? হাস্যকর মনে হলেও, সত্যিই এমন এক রোগটিও মহামারি হয়ে উঠেছিল এক সময়। সাধারণত খুশি হলে আমরা হেসে থাকি। হাসি মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসি-কান্না দিয়েই তো জীবন পরিপূর্ণতা পায়। তবে হাসি যখন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; তখন নিশ্চয়ই সে হাসির কোনো অর্থ থাকে না।

১৯৬২ সালে টাঙ্গানিকা হাসির মহামারি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। মানসিক এ রোগটি মহামারির ন্যায় ধারণ করে। তানজানিয়ার টাঙ্গানিকায় এ রোগটি প্রথম দেখা দেয়।

আক্রান্তরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেত। উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে পড়ত। এ রোগটি একটানা ১৬ দিন পর্যন্ত রোগীকে ভোগাত। এ সময় আক্রান্তরা পাগলের মতো হয়ে উঠত।

হাসি মহামারি ১৯৬২ সালে একটি গার্লস স্কুলে শুরু হয়েছিল। অনিয়ন্ত্রিত হাসি প্রায় এক হাজার জনকে প্রভাবিত করেছিল। বেশ কয়েক মাস ধরে ১৪টি স্কুল অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এ রোগের জন্য। সাইকোজোজেনিক এ অসুস্থতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিত। পরক্ষণে তা সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ত।

কাশশায় মেয়েদের একটি মিশন বোর্ডিং স্কুলে শুরু হয়। প্রথমে তিনটি মেয়ের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত হাসি লক্ষ্য করে সবাই। এরপর পুরো স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে। ১২-১৮ বছর বয়সী ১৫৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৫ জন একদিনের মধ্যেই আক্রান্ত হয় হাসি রোগে।

অনিয়ন্ত্রিণ এ হাসির লক্ষণ কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে টানা ১৬ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এতোটাই হাসছিলো শিক্ষার্থীরা যে তারা একটু পরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলো। তারা কোনো বিষয়ের উপরই মনোনিবেশ করতে পারছিলো না। ১৮ই মার্চ স্কুলটি বন্ধ ছিল।

এরপর স্কুল ছাড়িয়ে পুরো অঞ্চল এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীতেও ছড়িয়ে পড়ে হাসি মহামারি। হাসতে হাসতে আবার অনেকেই ক্রমাগত কান্নাও করত। অনিয়ন্ত্রিত হাসি-কান্নার পাশাপাশি দৌড়ানো, রাগান্বিত হওয়াসহ মারামারি করা ইত্যাদির লক্ষণও প্রকাশ পেতে শুরু করে আক্রান্তদের মধ্যে।

এ ছাড়াও পেট ফাঁপা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, ফুসকুড়ি, কান্নাকাটি এবং চিৎকার করার লক্ষণও ছিল। এ মহামারি টানা ১৮ মাস ধরে দাঁপিয়ে বেড়ায়। তারপর হঠাৎ যেন প্রকৃতিতে আবার মিলিয়ে গিয়েছিল বিরল রোগটি।

তৎকালীন পারদু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিশ্চিয়ান এফ হেম্পেলম্যান বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে জানান, অতিরিক্ত মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের মাঝেই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল।

১৯৬২ সালে টাঙ্গানিকা সবেমাত্র স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের উচ্চ প্রত্যাশার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করছিল।

সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট বার্থোলোমিও এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাইমন ওয়েসলি উভয়ই রোগটিকে হিস্টিরিয়া হাইপোথিসিস বলে অনুমান করেন।

বিংশ শতাব্দীতে এটি মানসিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচিত হয়। সিগমন্ড ফ্রয়েড এবং জিন-মার্টিন চারকোটের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হিস্টিরিয়া রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেন। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক এ রোগটি মহামারির আকার নিয়েছিল তখন।

সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউর/দ্য গার্ডিয়ান

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুমিল্লায় শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা

জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা জেলার সদ...

শিরীন পারভীন দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের পরিচালক...

টেম্পুচাপায় কলেজছাত্রী নিহত

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কালুর...

ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা...

মুন্সীগঞ্জে দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে চিপস...

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সাধা...

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু ২ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল থেকে দ...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

গরমে ঠান্ডা পানি খেলে কী হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমের মধ্যে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি স্বস্তি য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা