মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: দেশের বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জ। এ অঞ্চলের বাজারে ইতোমধ্যেই নতুন আলু এসেছে। এতে পুরনো আলুর কদর কমেছে। আবার জেলার হিমাগার গুলোতে এখনও অবিক্রিত রয়ে গেছে। এ অবস্থায় পুরনো আলু হিমাগার থেকে বের করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আর বিপাকে পড়েছে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা কৃষক ও পাইকাররা। এদিকে, বিদায়ী বছরের ৩০ নভেম্বর হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। তারপরও কৃষক ও পাইকাররা হিমাগার থেকে আলু বের করেননি।
আরও পড়ুন: বিয়ের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান
বিভিন্ন হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনও হিমাগার গুলোতে অন্তত এক লাখ মেট্রিক টন আলু রয়ে গেছে। তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর মতে, হিমাগার গুলোতে রয়েছে ২০ হাজার টন আলু। বর্তমানে হিমাগার গুলোতে ৫০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। যা প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬ থেকে ৭ টাকা। অথচ আলু উৎপাদন, হিমাগার ভাড়া ও যাতায়াত খরচ নিয়ে হিমাগারের আলুর কেজি প্রতি কৃষকের খরচ পড়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেলো বছর এ জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছিল। আর আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদিত আলুর মধ্যে জেলার ৬৪ টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু।
সরেজমিনে সদর উপজেলার পঞ্চসার হিমাগার ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শরীফ কোল্ড স্টোরেজ এবং ইউনুস কোল্ড ষ্টোরেজসহ বেশ কয়েকটি হিমাগারের সামনে পুরনো আলুর বস্তার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
এদিকে আলুর দাম না থাকায় আলুর পাইকাররা হিমাগার মালিকদের বের করে দেওয়া আলু কোথায় বিক্রির জন্য পাঠাবেন এ নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
এ ব্যাপারে আলুর পাইকার রাজু বেপারী বলেন, এ বছর আলুর ব্যবসায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হইছে। কিছু আলু রেখে দিয়েছিলাম শেষ সময়ে দাম বাড়ার আশায়। কিন্তু এখন আলু ৩০০ টাকা বস্তাও বিক্রি করতে পারছিনা। কোল্ডষ্টোর মালিক পক্ষ আলু বের করে হিমাগারের সামনে ফেলে রাখছে। বাধ্য হয়ে আলু গুলো বাছাই করতেছি। বাছাই শেষে আলুর আড়ত গুলোতে খোঁজ নিব যে আড়তে দাম একটু ভালো আছে সেখানে আলুগুলো পাঠাইয়া দিমু।
আরও পড়ুন: মদপানে চারজনের মৃত্যু
অপর ব্যবসায়ী মান্নান বলেন, টঙ্গীবাড়ির সোবহান কোল্ড ষ্টোরেজে আলু রাখছিলাম। কোল্ড ষ্টোর মালিক বাইর কইরা স্টোরের সামনে ফালাইয়া রাখছে। মাঝে মাঝে আইসা পাহাড়া দিতাছি আর খোজঁ নিতাছে কোন আড়তে আলু কত দামে বেচাঁকেনা হচ্ছে। গাড়ি ভাড়া না পোশাইলেতো আর আড়তে পাঠাইমুনা। গরু মালিকদের কাছে যা মূল্য পাই সেই মূল্যে বিক্রি করে ফেলাইমু।
পাইকার আ: রহিম বলেন, আলু বাইর কইরা ফেলাই রাখছে স্টোর মালিকরা। তাই বাধ্য হয়ে লেবার নিয়ে সেই আলু বাছাই করছি আর খোঁজ নিচ্ছি কোন আড়তে দাম বেশি পাওয়া যায়। যে আড়তে দাম বেশি পামু সেই আড়তে আলুগুলো পাঠাইয়া দিমু।
পঞ্চসার কোল্ড স্টোর লেবার সর্দার মজিবুর বলেন, এখন আর আমাদের হিমাগারে আলু নেই। আগামী বছর আলু রাখতে হবে তাই আমরা সব আলু বের করে দিছি।
আরও পড়ুন:
শরীফ কোল্ড ষ্টোরেজের ক্যাসিয়ার আলমগীর কবির বলেন, আগামী বছর আলু রাখার জন্য আমাদের হিমাগার মেরামতের কাজ চলছে। আলু পাইকাররা আলু না নেওয়াতে আমরা আপাতত সাড়ে ৬ হাজার বস্তা আলু বের করে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। ভিতরে আরো সাড়ে ৬ হাজার বস্তা আলু এখনো রয়ে গেছে।
টঙ্গীবাড়ির মুটুকপুর ইউনুস কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. আহসানুল রাব্বি বলেন, এখনো আমাদের হিমাগাওে ৯ হাজার ১০০ বস্তা আলু রয়ে গেছে। অথচ ৩০ নভেম্বর আলু সংরক্ষণের সময় শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হিমাগার ভাড়া প্রতিবস্তা ২২০টাকা আর আমারা প্রতিবস্তায় লোন দিয়েছিলাম ৩০০ টাকা। লোনের সুদ ৩০ টাকা সব মিলিয়ে বস্তাপ্রতি আলুতে আমাদের বিনিয়োগ এখন ৫৫০ টাকা অথচ আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০টাকা । তাই যারা ঋণ নিয়েছেন তারা আলু নিতে আসছে না। বাধ্য হয়ে আমরা চিপ ফ্যাক্টরীকে ডেকে আলু নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছি। সামনে আলু রাখার জন্য হিমাগার সংস্কার করতে হবে তাই আলু বের করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি।
আরও পড়ুন: সরকারি জায়গার গাছ কেটে নিলেন ইউপি সদস্য!
জেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন হিমাগারে এখনো ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু রয়ে গেছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আলু আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৬ হেক্টর।
সান নিউজ/এসআই