ফয়সল চৌধুরী, হবিগঞ্জ: বৃষ্টির পানিতে ভাসছে হবিগঞ্জ শহর। গত শুক্রবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েক ঘন্টা বৃষ্টি হয়েছে। এতে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে জাল টাকাসহ যুবক গ্রেফতার
ফলে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। শহরের অধিকাংশ বাড়িঘরের সামনেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মানুষের দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ড্রেনগুলো ভরে গিয়ে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা উপচে এসে রাস্তায় ভাসছে। হবিগঞ্জ শহরে গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হয়েছে।
আজ রোববার (১৮ জুন) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
গত বছর বর্ষায় মাত্র দুই ঘন্টার বৃষ্টিতে পুরো শহর ডুবে গিয়েছিল। জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে শহরবাসী সোচ্চার হলেও নাগরিক কর্তব্য পালনে পৌর কৃর্তপক্ষ সচেতন নন। তবে পরিবেশবাদী ও সচেতন ব্যক্তিরা বহু বছর ধরে শহরের পুরাতন খোয়াই নদীসহ জলাধারগুলো ভরাট ও দখলের জন্যই বৃষ্টির পানি নির্গমনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। এছাড়াও ধরে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় দেয়াল ধসে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের থানার মোড় থেকে শায়েস্তানগর ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত পানিতে ভাসছে। সেই রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনগুলোর চাকা পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। শহরের সবচেয়ে বেশি পানি জমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে চলাচলের জন্য নৌকা নিয়েও রাস্তায় নেমেছেন কেউ কেউ।
সড়কের দু’পাশে বারান্দা ডুবে দোকানগুলোর ভেতরে পানি চুঁই চুঁই করছে। এছাড়াও শহরের ব্যাক রোডের ফায়ার সার্ভিসের সামন থেকে বেবিস্ট্যান্ড, পুরাতন পৌরসভার রাস্তা, সিনেমা হল এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
শহরের সার্কিট হাউজ, গণপূর্ত অফিস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়, সদর মডেল থানা, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং (পিটিআই), রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাঙ্গণ ডুবে গেছে। শহরের ঘোষপাড়া, অনন্তপুর, ফায়ার সার্ভিস, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা, ইনাতাবাদ, শায়েস্তানগর, জঙ্গল বহুলা, নিউ মুসলিম কোয়ার্টার, শ্যামলী এলাকাগুলোর বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকার উপক্রম অবস্থা। ভারী বৃষ্টিপাত হলে তাহলে ওই এলাকাগুলোর বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করবে।
আরও পড়ুন: পাবনায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ১
শহরের সার্কিট হাউস ও শায়েস্তানগর এলাকায় গেলে সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তারা গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা সমস্যায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকার রাস্তাগুলো ডুবে যায়। বাসার সামনে পানি চলে আসে। রাস্তাগুলোতে হাঁটু পানি হওয়ায় বাড়ির মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
হবিগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে ওঠেছে। এই সমস্যার জন্য হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন পড়তে হয় সমালোচনার মুখে। তবে অসচেতনতা ও নাগরিক দায়িত্ব পালনে অনীহার জন্যও জলাবদ্ধতা একটি অন্যতম কারণ বলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হবিগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়- পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ অপচলশীল ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলা হয়। পৌরসভার ময়লার ভ্যান ও ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। শহরে চলাচলরত অটোরিক্সার পেছনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের সত্যতা সরেজমিনে ঘুরে চোখে পড়ে। শহরের প্রতিটি ড্রেনের মুখ পলিথিন ও প্লাস্টিকে ভরে রয়েছে। আবর্জনা ফেলার জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে ড্রেনের সাথে পাইপ যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে খামারির মৃত্যু
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, পুরাতন খোয়াই নদীসহ শহরের জলাধারগুলো দখল হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি নির্গমন কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম জানান, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারাদিন শহরের পানি নিষ্কাশনে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল দেখতে পেয়েছি। নাগরিকগণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা উঠোন বৈঠক, যানবাহনে বিজ্ঞাপন, মাইকিং করা হয়। তাদেরকে ডাস্টবিন ও পৌরসভার ভ্যানে ময়লা ফেলার অনুরোধ জানানো হয়।
সান নিউজ/এইচএন