ফিচার

ঢলুবাঁশের চুঙ্গা পিঠা বিলুপ্তির পথে!

সাখাওয়াৎ লিটন:

বাঁশ দেয়া-নেয়ার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে ঘটে। বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারের কথাও আমরা জানি। কিন্তু বাঁশ দিয়ে পিঠা তৈরি করা যায় এ খবর কজনইবা জানে। হ্যাঁ বাঁশ দিয়ে পিঠাও তৈরি হয়, যাকে আঞ্চলিক ভাষায় চুঙ্গা পিঠা বা চুঙ্গাপুড়া পিঠা বলে। চুঙ্গা হলো বাঁশের টুকরা। মূলত এ পিঠা সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি।

বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্য হলেও মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় এ পিঠার প্রচলন দেখা যেত বেশি। এ পিঠার অন্যতম উপকরণ হলো পাহাড়ি ঢলু বাঁশ, যা দিয়েই মূলত এ পিঠা তৈরি করা যায়।

প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠা-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো এখন আর গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন খুব একটা চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য এখন নেই বললেই চলে।

গৃহস্হ বাড়িতে শীত আসলেই এ পিঠার কদর বাড়ে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে বাড়িতে মেহমান আসলে আয়োজন চলে এ পিঠার।

শীতে এলাকায় বিভিন্ন ধরণের মেলা বসে। মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর, মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।

পাড়া প্রতিবেশি কিংবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ পিঠা খাওয়ার আয়োজন মৌলভীবাজার ও সিলেটের অন্যতম একটি ঐতিহ্য।

নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা, মাছ বিরান আর নারিকেলের মিঠা পরিবেশন করা একটা রেওয়াজ ছিল। তা না করলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো কনের বাড়ির লোকজনের। এখন অার সেই দিন আর নেই, নেই সে রেওয়াজও।

দিন দিন যেমন ঢলু বাঁশ হারিয়ে যাচ্ছে তেমন করে অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো বিন্নি ধানও আবাদ হয় না।

মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার টিলায়, বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো।

এর মধ্যে চুঙ্গাবাড়ী প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে।

অনেক আগেই বনদস্যু, ভুমিদস্যু এবং পাহারখেকোদের কারনে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। পাহাড়ে বাঁশ কমে যাওয়ায় বাজারে ঢলুবাঁশের দামও এখন বেশ চড়া।

ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ, ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে পুরোপুরি পুড়তে দেয় না।

ঢলুবাঁশে এরকম রস অত্যধিক থাকার কারণে বাঁশ আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা তাপে সিদ্ধ হয়।

পিঠা তৈরির উপাদান:

১.ঢলুবাঁশের চুঙ্গা।

২.বিন্নি চাল।

৩.দুধ, চিনি, নারকেল ও চালের গুড়া।

৪. খড়

পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া:

ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রথমে বাঁশকে নির্দিষ্ট মাপ দিয়ে টুকরো করে কেটে নিতে হয়। তারপর ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারকেল ও চালের গুড়া দিয়ে ঠেসে দিতে হয়। এভাবে চুঙ্গা ভর্তি হয়ে গেলে বাঁশের টুকরোগুলো খড়ের আগুনে দিতে হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা করা হয়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমানে ধানের খড় দরকার পড়ে।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চ...

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা