আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গবেষকরা আগেই বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব। এই দশকের শুরু থেকেই পৃথিবীর তাপামাত্রা বেড়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন, গরমের কারণে সামুদ্রিক বরফ গলছে দ্রুত। ফলে মেরু ভল্লুকের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে মেরু প্রদেশে। বরফ গলে যাওয়ায় ভল্লুকের প্রধান খাদ্য সিল চলে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। ফলে খাদ্য সরবরাহ কমছে। এ অভিশাপের মুখে যোগ্যতমের টিকে থাকার নীতিতে নিজেদের সন্তানকেই খাদ্য হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেছে মেরু ভাল্লুকের দল। এ অবস্থা চলতে থাকলে মেরু ভল্লুকের সংখ্যা ২৬ হাজার থেকে কমে ১৭ হাজারে দাঁড়াবে আগামী ৩৫ বছরেই।
সম্প্রতি মস্কোর একদল গবেষক এই তথ্য তুলে ধরেছেন। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে অদূর ভবিষ্যতে যে সব প্রজাতির প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মেরু ভাল্লুক।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এক তৃতীয়াংশ পোলার বিয়ার বা মেরু ভাল্লুক।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অফ নেচার (IUCN) তাদের এক রিসার্চ রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাদের ১৯টি বিভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে দুই শ্রেণির সংখ্যা কমছে লক্ষ্যণীয় ভাবে।
দুই মেরুতে বিরামহীন বরফ গলছে। অ্যান্টার্কটিকায় বরফের বুক চিরে বয়ে চলেছে নদী। বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, মেরু দেশের বরফ গলে সমুদ্রের তল উপচে উঠবে। ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বিশ্বের বহু শহর।
পরিবেশ বদলের এই নিরন্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখনই পাল্টে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলসহ মেরু এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। অভিযোজনের লক্ষ্যে অভ্যেসগুলো বদলে নিতে হচ্ছে মেরু ভাল্লুক ও পেঙ্গুইনদের মতো প্রাণীদের।
সরেজমিনে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, বেঁচে থাকার তাগিদে মেরু ভাল্লুকের দল ক্ষিদে মেটাতে নিজেদের সন্তানদেরই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে।
মস্কোর এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেরু ভাল্লুক বিশেষজ্ঞ ইলিয়া মর্দভিনস্তেভ জানাচ্ছেন, মেরু ভাল্লুকরা যে মাংসাশী তা দীর্ঘকাল আগে প্রমাণিত ছিল। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা বিরল বলেই মনে হচ্ছে। স্বজাতিকে ভক্ষণের প্রবণতা বাড়ছে ওদের মধ্যে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।
কিন্তু কেন এই প্রবণতা, সেই উত্তরও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা। তাদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে মেরু প্রদেশে। সাধারণত বরফের নিচে থাকা সিল শিকার করে খেয়ে এরা অভ্যস্ত। কিন্তু বরফ গলে যাওয়ায় সিলরাও সমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে খাদ্য সরবরাহ কমছে।
তাই এখন পূর্ণবয়স্ক মেরু ভাল্লুক নিজেদের স্ত্রী এবং শাবকদের আক্রমণ করে তাদেরই মাংস খাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, কখনও তাদের শিকার মেরে বরফের তলদেশে ভবিষ্যতের খাদ্যের সঞ্চয় হিসেবেও জমা করে রাখছে তারা।
তবে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত আর্কটিক অঞ্চল। এখান থেকে গ্যাস উত্তোলনে অভিযানও জোরদার করেছে ব্যবসায়ীরা। এর ফলে সেসব স্থান থেকে সিল বা মেরু ভাল্লুকদের উৎখাত হতে হচ্ছে। এটাও খাদ্য সংকটের একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যান্য প্রজাতির ভাল্লুকের চেয়ে মেরু ভাল্লুকরা দেরিতে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের আয়ুষ্কাল মোটামুটি ২৫-৩০ বছর হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে তারা খুব অল্প সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দেয়। এদের গায়ের লোম স্বচ্ছ ও সাদা রঙের হওয়ার কারণে এদের শুভ্র দেখায়। বর্তমানে পৃথিবীতে ২৫-৩০ হাজার মেরু ভাল্লুক রয়েছে। তাদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে।
ভিডিও লিঙ্ক: https://www.youtube.com/watch?v=QHaJdznlRBg
সান নিউজ/সালি
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.