সারাদেশ

চাষের আওতায় আসছে সিলেটের পতিত জমি

এস এ শফি, সিলেট: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া গ্রামের প্রবাসী আখলাস আহমদ। বছর দশেক আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে তিনি ৮ একর ধানী জমি ক্রয় করেন। দীর্ঘদিন থেকেই পতিত অবস্থায় ফেলে রেখেছেন এই জমি। আগে এসব জমিতে ধান চাষ হলেও আখলাস আহমদ ক্রয়ের পর থেকেই জমিগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

আরও পড়ুন: দেশে আরও একজনের মৃত্যু

জমি পতিত ফেলে রাখা সম্পর্কে আখলাক বলেন, আমরা দেশে থাকি না। বর্গা দিলে কোনো ফসল পাওয়া যায় না। বর্গা চাষীর কাছ থেকে একেক বছর একেক অজুহাত শুনতে হয়। বন্যা, খরা, পোকাড় আক্রমন, মড়ক ইত্যাদি। অনেক সময় ধান চাষের জন্য আমাকেই খরচ জোগাতে হয়। তারউপর জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে অহরহই। তাই চাষের বদলে জমি ফেলে রাখাই উত্তম। এতে অন্তত বেদখল তো হবে না।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল জলিল দেশেই থাকেন। তবু নিজের কৃষি জমিতে আবাদ করেন না জলিল। এ প্রসঙ্গে জলিল বলেন, টিলাভূমি হওয়ায় এখানে সেচ সঙ্কট প্রবল। সেচের জন্য পানি পাওয়া যায় না। এছাড়া শ্রমিকও পাওয়া যায় না। ফলে চাষ করেও ভালো ফসল পাওয়া যায় না। খরচই উপরে পড়ে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়লো

সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ এলাকারই চিত্র এমন। আবাদযোগ্য জমি পতিত ফেলে রাখার দুর্নাম রয়েছে সিলেটের। প্রবাসীবহুল এই অঞ্চলে নানা সঙ্কটে পতিত ফেলে রাখা হয় আবাদযোদ্য বিপুল পরিমান জমি। সেচ আর শ্রমিক সঙ্কটরে কারণেও পতিত থাকে জমি। এতে প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। তবে এসব পতিত জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে একটি প্রকল্পগ্রহণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দুইশ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ১২ লাখ সাড়ে ২৪ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে ৪ লাখ ৬১ হাজার হেক্টরের বেশি জমি প্রতিবছর অনাবাদী পড়ে থাকে।

আরও পড়ুন: অন্ধকার পথ অবলম্বনেই বিএনপির আগ্রহ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সেচ ও শ্রমিক সঙ্কট, কৃষকদের অনীহা, জমির মালিক প্রবাসী হওয়াসহ নানা কারণে সিলেটে প্রতিবছর বিপুল পরিমান জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। তারা জানান, সিলেটে পতিত জমির বেশিরভাগই প্রবাসী। বেহাত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জমি বর্গা দেন না। পতিত ফেলে রাখেন।

সংশ্লিস্টরা জানান, সিলেটের মাটির নিচে পানি পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস ও পাথর উঠে আসে। এছাড়া জমিগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় এতে সেচ প্রদান প্রয়াশই সম্ভব হয় না। ফলে এসব জমিগুলোর বেশিরভাগই থেকে যায় অনাবাদি। কেবল সেচের ব্যবস্থা করতে পারলেই সিলেট অঞ্চলে বোরোর আবাদ অনেকটা বেড়ে যেতো। সেচের সংকট ছাড়াও শ্রমিক সংকটের কারণেও সিলেটে অনাবাদী থেকে যায় অনেক জমি। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে সিলেটের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে ‘সিলেট অঞ্চলের পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার কর্মপরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়। এই উদ্যোগে সাফল্যও মেলে। প্রায় ২৫ হাজার ১৯৬ হেক্টর হেক্টর পতিত জমি নতুন করে চাষের আওতায় আসে। এবার পতিত জমি আবাদে নেওয়া হয়েছে বড় আকারের প্রকল্প।

আরও পড়ুন: ৪৫ কূটনীতিককে বহিষ্কার করছে পোল্যান্ড

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. কাজি মজিবুর রহমান, সিলেট অঞ্চলের বোরো জমিগুলো ছাড়া বাকী জমিগুলোর বেশিরভাগই অনাবাদী অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এগুলো চাষের আওতায় আনলে খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। তাই আমরা এসব জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি।

নতুন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা মূলত কৃষকদের উদ্ভূদ্ধ করে পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। এছাড়া সেচ সঙ্কটসহ যেসব সমস্যাগুলো রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হবে এবং প্রদর্শনী করা হবে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হাসপাতালে

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, কেবল কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করলেই হবে না, কোন জমিতে কি ফসল চাষ হবে, ওই ফসল চাষের ব্যাপারে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। চাষের কৌশল শেখানো হবে। এছাড়া বীজ, সারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিও দেয়া হবে।

প্রশাসনিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই প্রকল্পের কাজ শুরুতে আরও মাস দুয়েক সময় লেগে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, রবি মৌসুমে এই অঞ্চলে ভালো ফসল হয়। মোট অনাবাদী জমির প্রায় ২৬ শতাংশ এই মৌসুমে অনাবাদী থাকে। সেচের ব্যবস্থা করলে এই মৌসুমের সব অনাবাদী জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। আর খরিপ-১ মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই আউশসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করা যেতে পারে। তবে খরিপ-২ মৌসুমে এখানকার বেশিরভাগ জমিই পানির নিচে থাকে। ফলে এই সময়ে জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসা কঠিন।

নতুন প্রকল্পের আওতায় প্রবাসীদের জমির সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জমি যাতে তাদের হাতছড়া না হয় সেদিকে নজর থাকবে। তাদের জমির সুরক্ষার বিষয়টিও নতুন প্রকল্পে গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

বিরক্ত হয়েই শাকিবের পরিবার এই সিদ্ধান্ত 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে নতুন করে...

এলপি গ্যাসের দাম কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোক্তা পর্যায়ে আরেক দফা কমানো হলো তরলীকৃত...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ জনের

জেলা প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃ...

ঢাকায় ফিরল ৮ বাংলাদেশির লাশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউ...

শনিবার খুলছে স্কুল-কলেজ, রোববার প্রাথমিক 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র রমজান, ঈ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা