জাতীয়

গত ২৫ দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৫ দিনে করোনায় এক হাজার ৩৫৭ জন মারা গেছে। যা এপ্রিলের পরে করোনায়মারা যাওয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে প্রথম মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় ১৮ মার্চ। এরপরে মাস হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী মারা যায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে মৃত্যু হয় এক হাজার ২৬৪ জনের। তবে ২০২১ সালের এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সেই পরিসংখ্যান। এই মাসে মারা যায় দুই হাজার ৪০৪ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। একদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ, আর অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে অনীহা। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় পুরো দেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি।

শুক্রবার (২৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এরপর থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত পর্যন্ত দেশে ১৩ হাজার ৯৭৬ জন মারা গেছে ভাইরাসটিতে।

দেশে ২০২০ সালের মার্চে পাঁচজন, এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে’তে এক হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে এক হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে এক হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন ও ডিসেম্বরে ৯১৫ জন মারা যান।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন, মার্চে ৬৩৮ জন, এপ্রিলে দুই হাজার ৪০৪ জন এবং মে মাসে এক হাজার ১৬৯ জন মারা যায়। চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ৩৫৭ জন মারা গেছে। যা মাসের হিসেবে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু।

চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় সম্প্রতি ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে এই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে। এতে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনা হলে মৃত্যুর হারও বেড়ে যাবে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিধিনিষেধ থাকুক না থাকুক, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন, লকডাউনসহ যা কিছু করা হোক না কেন— যে বা যারা মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, তাদের কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। আবার তারা নিজেরা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও কম থাকবে। প্রত্যেককেই যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানো সম্ভব হয়, তাহলেই কেবল সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।’

পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে বর্তমানে সংক্রমণ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আর তাই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাটডাউন দেয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘শাটডাউন মানে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া। অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ থাকবে। সবাই বাসায় থাকবে।’

শাটডাউন পদ্ধতিতে প্রতিবেশি দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দিল্লি এবং মুম্বাইতে শাটডাউন দিয়ে ফলাফল পেয়েছে। সেখানে ছয় সপ্তাহ গণপরিবহন বন্ধ ছিল, এছাড়াও দিল্লিতে ছিল তিন সপ্তাহ। দিল্লিতে প্রতিদিন একসময় ২৮ হাজার শনাক্ত হতেন। কিন্তু এখন সেখানে ১৫০ শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও কমে এসেছে।’

এদিকে চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ মানাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে মৃত্যু। সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হতে অনুরোধ করা হলো।

সাননিউজ/এমএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পান্নার গণসংযোগ

রাজীব চৌধুরী, কেশবপুর : আসন্ন কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে...

বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কুপিয়ে জখম

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বজ্রপাতের সময় করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক: চলমান তাপপ্রবাহ...

নিজ্জর হত্যায় সন্দেহভাজন ৩ জন গ্রেফতার 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় বসবাসর...

মৃত্যু থেকে বাঁচলেন দেব

বিনোদন ডেস্ক : কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা দীপক অধিকারী দেব। ভার...

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশ...

ফরিদপুরে স্টপেজের দাবিতে মানববন্ধন 

বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর: ফরিদপুরে রেল...

পাবনায় আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত

পাবনা প্রতিনিধি: ‘জলবায়ু স...

অস্ট্রেলিয়া গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি সফরে অস্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা