এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রয়েছে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন আঠারোবাড়ি রাজবাড়ী। বিশিষ্ট সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক আবু ফাতেমা মুহাম্মদ ইসহাকের জন্ম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জেই।শুধু তাই নয় নন্দিত কথাসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্যেই দেখা মেলে সোহাগী রেলস্টেশনের।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ৩০০ কোটি ডলার
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম সোহাগী। এই ইউনিয়নের নামেই সোহাগী রেলস্টেশন। ওই এলাকার তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাঁশের চাটাইয়ের সুনাম দেশব্যাপী। ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরি হয়। উৎপাদিত হাজার হাজার চাটাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। বিশেষ করে ধানের মৌসুম গুলোতে তা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়। বোরো ধানের মৌসুমকে সামনে রেখে এখন পুরোদমে চলছে চাটাই তৈরির কাজ।
সরজমিন পরিদর্শন করে সোহাগী ইউনিয়নে দেখা গেছে, এখানকার বৃ-কাঁঠালিয়া, বগাপোতা, মুক্তাপুর, ভালকাপুর, খানপুর, হাটুলিয়া, দড়ি-বৃসহ বেশ কিছু গ্রামে তৈরি হচ্ছে চাটাই। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে চাটাই তৈরির ব্যস্ততা। সেই বেত দিয়ে বাড়ির গৃহবধূরা চাটাই বুনছেন।
হাটুলিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা বাঁশ কাইট্যা (কেটে) বেত দিয়া দাড়ি (চাটাই) বানাই।সোহাগী ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ির পাশেই একাধিক বাঁশঝাড় রয়েছে। এসব বাঁশ দিয়েই তারা চাটাই তৈরি করেন। এরপর সেই চাটাই বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সোহাগী বাজারে। সেখান থেকে চাটাই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার সোহাগীতে চাটাইয়ের হাট বসে।
এদিকে সোহাগী বাজারের ৬০ বছর বয়সী চাটাই ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দীন জানান,আমরা গ্রাম থেকে দারি(চাটাই) কিনে এগুলো আরও ভালো করে শুকিয়ে বড় বড় আঁটি বেধে ট্রেন ও ট্রাকযোগে সারা দেশে চাটাই। নির্মাণশিল্পের সাটারিংসহ নানাকাজে এসব চাটাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্রেতারা ফোনে তাকে পরিমাণ, পরিমাপ ও চাহিদার কথা জানিয়ে দেন। তিনি চাহিদা মোতাবেক হাট থেকে চাটাই কিনে সেগুলো বাঁধাই করে ট্রেনযোগে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেন।
ইসলাম উদ্দিনের মতো অনেকেই চাটাই কেনাবেচা, আবার কেউ চাটাই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার ইউনিয়নের অনেকে মূল পেশার বাইরে অবসর সময়ে চাটাই তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট
বগাপোতা গ্রামের চাটাই লেবার উমেস ছৌহান ও প্রদীপ জানান, আমি দারি(চাটাই) মাথায় করে ট্রেনে উঠিয়ে দিই ও মহাজনের সাথে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে সহয়তা করি।যেসময় কাজ বেশি থাকে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা কামাই (আয়) করতে পারি। আর কাজ কম থাকলে ৩০০ টাকা কামাই করতে পারি।এছাড়াও অবসর সময় তারা ও তাদের গিন্নিরা বাড়িতে চাটাই তৈরি করেন। বাড়িতে এ কাজে তার প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়।
সাননিউজ/এমআরএস