প্রতীকী ছবি
মতামত

সার্বজনীন পেনশন স্কিম: কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দিকে আরও এক ধাপ

ড. আতিউর রহমান: ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতারকালে আরেকটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত ১২-১৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কল্যাণমুখী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে বহুলাংশে সফল হওয়ার কারণে দেশকে যে শক্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো গেছে তার ফলেই এই ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়া এই সাফল্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। সত্যিই তিনি বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশকে প্রকৃত অর্থেই কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দিকে সুচারুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমাদের প্রবৃদ্ধি শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক থেকেছে। অর্থনীতির গতিময়তা যেন প্রান্তে থাকা মানুষের কাছেও পৌঁছে সে দিকটিতে তিনি সব সময় সংবেদনশীল থেকেছেন।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু

তাই ‘গ্রামেও শহরের সুবিধা’ নিশ্চিত করার নীতি নিয়ে বর্তমান সরকারকে এগুতে দেখা যাচ্ছে। এই সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অভিযানের কারণে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ হতে পারে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর বিকাশের ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ব্যাপক হারে আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবা ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি। আর এসবের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে ক্রমবর্ধমান জাতীয় বাজেটেরও কম-বেশি এক-দশমাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে।

আরও পড়ুন: দেশে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

প্রায় প্রতি বছরই বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি সমসাময়িক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন নতুন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই এক দশক আগেও আমাদের সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যে ছিলেন মূলত দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারি প্রান্তিক ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকেরা। সে সময়কার বাস্তবতায় এমনটিই প্রত্যাশিত ছিল। গ্রামে থাকা বিপন্ন নারীদেরকে ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া কিংবা কাজের অভাবে ভুগতে থাকাদের জন্য ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি)’-এর মতো কর্মসূচিগুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করে আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনা গিয়েছে বলেই তাদের কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতার কারণেই করোনা মহামারি আসার আগে আগে দেশের দারিদ্র্য হার ২০ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্য হার ১০ শতাংশের আশেপাশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিলো।

আরও পড়ুন: কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে

মহামারি ও তার পরের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে এই অভিযাত্রা একটি ধাক্কা খেয়েছে। তবে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও বাস্তবায়িত হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি এবং গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি এগুলোর মধ্যে আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য।

সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা নাগরিকদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে এহেন ধারাবাহিকতার জন্য বাংলাদেশের সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই ধারাবাহিকতার কল্যাণেই আমাদের সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থান এমন একটি স্তরে উন্নিত হয়েছে যেখানে সামাজিক সুরক্ষার ধারণা ও এ সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তন কাম্য। সহজভাবে বললে বলা যায়– এক দশক আগে আমাদের মূল ভাবনার জায়গায় ছিল সকলের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করা, কেউই যেন কাজের অভাবে না ভোগেন সেটি নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো। কিন্তু আজকে কেউই আর অভুক্ত থাকছেন না, প্রায় সকলেরই মাথার ওপর ছাদ আছে, গ্রামেও অ-কৃষি খাতের বিকাশ ঘটছে। এখন তাই বিপদগ্রস্ত বিধবা কিংবা কর্মহীনতায় ভুগতে থাকা অতিদরিদ্র পরিবারের মতো সুনির্দিষ্ট গ্রুপের কল্যাণের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি আমাদেরকে সকলের জন্যই আরেকটু সুরক্ষিত জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন: কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে

আমরা খুবই আশান্বিত হয়েছি যখন জানা গেলো যে সরকারও বরাবরের মতো সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতি সময়োচিত সংবেদনশীলতা দেখিয়ে সে পথেই এগুচ্ছে। এ বছরের শুরুতেই সরকারের পক্ষ থেকে সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর নীতি-উদ্যোগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। জুনে বাজেট অধিবেশনেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

সর্বশেষ আগস্টে ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল ২০২২’ মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পর্যালোচনা সাপেক্ষে এই বিলটি অচিরেই আইনে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়। এর মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

আগেই যেমনটি বলেছি– অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতার কল্যাণে আমাদের জনবলের বড় অংশটিই এখন কাজে নিয়োজিত আছে এবং দারিদ্র্য পরিস্থিতিরও নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। এর ফলে অন্য অনেক সূচকে উন্নতির পাশাপাশি এ দেশের নাগরিকদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। তবে হালের মূল্যস্ফীতির কারণে এই অর্জন খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বললে ভুল হবে না। বর্তমানে দেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিক মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। কর্মক্ষম এই নাগরিকরা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এক সময় প্রবীণ হবেন। জনমিতিক হিসাব বলছে ২০৩১ সাল নাগাদ ৬০-এর বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা হবে ২ কোটিরও বেশি। ফলে এই নাগরিকদের প্রবীণ বয়সের সুরক্ষা নিশ্চিত করার রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ থাকা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অন্যদিকে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের মাথাপিছু আয়ও বাড়ন্ত। আয় বৈষম্য তো রয়েছেই। তবুও ধারণা করা যায় কর্মক্ষম নাগরিকদের একটি বৃহত্তর অংশেরই এখন থেকে শেষ বয়সের জন্য কিছুটা বিনিয়োগ করে রাখার সামর্থ রয়েছে। অথচ আনুষ্ঠানিক পেনশন সুবিধা আর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন নাগরিকদের একটি তুলনামূলক ছোট অংশ। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিকদের নিজেদের নিয়মিত চাঁদা এবং আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে সেই সঞ্চিত চাঁদা বিনিয়োগ করে তার লভ্যাংশের মাধ্যমে সকল প্রবীণদের জন্য একটি পেনশন স্কিম চালু করা এখন সময়ের দাবি। এ কারণেই সরকারের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের নীতি-উদ্যোগটিকে সময়োচিত এবং প্রাসঙ্গিক বলতে হয়।

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২-এর একটি খসড়া উন্মুক্ত করা হয়েছে। ওই খসড়াটি পাঠ করে এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে যে কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই আশাব্যঞ্জক।

খসড়া প্রস্তাবনাগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীলতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, পেনশনারবৃন্দ যেন সহজে পেনশনের টাকা মাসিক ভিত্তিতে তুলতে পারেন সে জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যায় এই কর্তৃপক্ষ টাকা জমা নেওয়ার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি, এমএফএস এবং অ্যাজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বিকল্প পথেও টাকা জমা ও উত্তোলনের সুযোগ রাখা উচিত হবে বলে মনে করি। তাতে কেবল পেনশনারদের সুবিধা হবে তাই নয়, বরং পুরো ব্যবস্থাটিই আরও সাশ্রয়ী ও সুরক্ষিত থাকবে। পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারি নাগরিকরা মাসে মাসে পেনশনের জন্য যে চাঁদা দেবেন সেটিকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে কর রেয়াত দেওয়ার প্রস্তবনাটিও জনচাহিদার প্রতি সংবেদনশীলতা প্রমাণ করে। কর রেয়াতের কারণে প্রাথমিকভাবে অনেকেই এই স্কিমে অংশ নিতে আগ্রহী হবেন। সর্বোপরি সকল নাগরিকের পক্ষে এই স্কিমে একই মাত্রায় নিয়মিতভাবে চাঁদা দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার অনেকে হয়তো আকস্মিক কোনও জটিলতার কারণে এই চাঁদা দেওয়ার সক্ষমতা হারাতে পারেন। এ জন্য দুঃস্থ চাঁদাদাতার চাঁদার একটি অংশ সরকারে তরফ থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে এই খসড়ায়।

আরও পড়ুন: মানুষ গোপনে ভোট দেবে

আমরা বৈদেশি মুদ্রায় প্রবাসী আয়ের পুরোটা আনুষ্ঠানিক পথে পাচ্ছি না। বিরাট অংশ হুন্ডিতে আসছে। হুন্ডি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অকল্যাণের প্রতীক। তাই যদি বলা হয় যে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক পথে টাকা পাঠালে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই পেনশন স্কিমে যুক্ত করা হবে তাহলে তাদের এ পথে টাকা পাঠাবেন। এ বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে বলছি।

একথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, সার্বজনীন পেনশন স্কিম সময়োচিত হলেও বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের অনবদ্য সাফল্যের ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। সে অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই কাজে দেবে। তবে ওইসব ‘টার্গেটেড’ কর্মসূচির সঙ্গে এই সার্বজনিন তথা ‘ইউনিভার্সাল’ কর্মসূচির পার্থক্যের জায়গাগুলোর বিষয়েও সদাসচেতন থাকা চাই। এ বাস্তবতার নিরিখেই সম্ভবত সরকার প্রাথমিকভাবে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকে ঐচ্ছিক রেখে ধীরে ধীরে বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের নতুন সভাপতি খাড়গে

তবে প্রাথমিক পর্যায়েই এই কর্মসূচির বিষয়ে বৃহত্তর জনগণকে আস্থার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন নাগরিক নিয়মিত মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়ে নিজের শেষ বয়সের সুরক্ষার জন্য এখানে টাকা সঞ্চয় করবেন। এই পদ্ধতির সুফলগুলো সম্পর্কে শুরুতেই তাদের সচেতন করে না তুললে সকলকে আগ্রহী করে তোলা কঠিন হবে। তাই জনপরিসরে পেনশন স্কিমের প্রাসঙ্গিকতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে ততোই মঙ্গল। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সকলের জন্য প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি উন্মুক্ত করে দেওয়াটি নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এর পাশাপাশি জন-সংলাপ, গণশুনানি ইত্যাদি আয়োজন করা দরকার। আশা করা যায় সরকারের দিক থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে নাগরিক সংগঠন, গবেষক, অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ জন্য উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

জন-পরিসরে এই প্রস্তাবিত স্কিম এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা হলে কিছু কিছু বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী প্রস্তাবনা দাঁড় করানো সম্ভব বলে মনে হয়। যেমন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রতিষ্ঠানগুলোরও অংশগ্রহণের সুযোগের কথা বলা হলেও সেটার শর্ত ও সুবিধাদি নিয়ে খুব স্পষ্ট করে বলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যথাযথ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা গেলে তারা বেশি বেশি আগ্রহ দেখাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ দেওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে শাখা খোলার জন্য এমন প্রণোদনা দিয়ে তার সুফল পেয়েছি। পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারিদের দেওয়া চাঁদা নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যমে এগুলোর সুফল তাদেরকে পেনশনের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলা আছে। কোন খাতে কত মেয়াদে বিনিয়োগগুলো করা উচিৎ এ নিয়েও জন-পরিসরে আলোচনা হওয়াটাও খুবই জরুরি। জনগণের আস্থা অর্জন করতে এর বিকল্প নেই। আমার মনে হয় আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে কোন খাতে এই স্কিমের বিনিয়োগগুলো হতে পারে তা নিয়ে একটি গভীরতর গবেষণা করা দরকার। সরকার বিআইডিএস-কে এই দায়িত্ব দিতে পারে। তাদের সেই সক্ষমতা আছে, এবং নাগরিকদেরও তাদের গবেষণার ওপর আস্থা রয়েছে। বিনিয়োগ বিষয়ে স্কিম কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেখানে গণশুনানি এবং গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময়কে আইনি বাধ্যবাধকতায় নিয়ে আসার কথাও ভাবা উচিত বলে মনে হয়।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের নতুন সভাপতি খাড়গে

মনে রাখা চাই এই তহবিলটি এক সময় বিরাট আকার ধারণ করবে। সুতরাং এর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে। সে জন্য রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে শুরু থেকেই জোর দিতে হবে।

‘লক্ষ্য ও শিক্ষা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন যে একটি জাতি উন্নতির পথে যতই এগিয়ে যাবে সেখানে মানুষেরা তত বেশি ‘মনুষ্যত্বের পুরো গৌরব’ দাবি করতে পারবে। সার্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য তেমনি আরও বেশি মানবিক একটি জীবন নিশ্চিত করতে পারবো। ফলে এই স্কিমটি হতে পারে আমাদের উন্নতির একটি নতুন মাইলফলক। তবে এগুতে হবে সতর্কভাবে সবদিক বিবেচনা করে। বঙ্গবন্ধু ‘করে করে শেখা’র পক্ষে ছিলেন। আমরাও তাই যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভালোমন্দ বিবেচনা করে সার্বনজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় পরিবর্ধন-পরিমার্জন করতে করতে এগুবো। বাংলাদেশের মানবিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে সব কাজ বিফলে যাবে: সিইসি

প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশী...

২৯ এপ্রিল: বিপ্লবী রবি নিয়োগীর জন্মদিন

রবি নিয়োগী ১৯০৯ সালের ২৯ এপ্রিল শেরপুরে এক বিখ্যা...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের...

সাবেক সংসদ সদস্য তুহিনের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহ...

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা