ঐতিহ্য ও কৃষ্টি
হারিয়ে গেল মসলিন

এক মসলিনেই চারমাস

আহমেদ রাজু

মুঘল রাজদরবারে মলবুস খাস নামে যে মসলিন পাঠানো হতো, তার একটি তৈরি করতেই লাগতো চারমাস। মধ্যম মানের একটি মসলিন তৈরিতে লাগতো দুই থেকে তিনমাস।

ধামরাই, সোনারগাঁও, জঙ্গলবাড়ি ও বাজিতপুর মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিলো। জঙ্গলবাড়ির বেশিরভাগ লোকের পেশা ছিলো মসলিন বোনা। উনিশ শতকের শুরুর দিকে জঙ্গলবাড়িতে ছিলো একশোঘর তাঁতী। তারা মসলিন বুনতো।

বাজিতপুরে উন্নত মানের কার্পাস উৎপাদন হতো বলে সেখানে উন্নতমানের মসলিন তৈরি হতো।

মসলিন তৈরির কাজ ছিলো প্রচণ্ড কঠিন ও জটিল। অসামান্য নৈপুণ্য, শ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন হতো। সুতোকাটা থেকে একটি মসলিন বুনতে একজন তাঁতীর লাগতো দুজন সহযোগী।

সাধারণত মেয়েরাই করতো সুতোকাটার কাজ। সুতোকাটতে কম তাপ ও আর্দ্রতার প্রয়োজন হতো। এই কাজ চলতো সকাল ও বিকেলে।

আর্দ্রতার জন্য নদীতে নৌকোয় বসেও করা হতো সুতোকাটার কাজ। কাজটি এতোই শ্রমসাধ্য ছিলো যে একজন মহিলা মাসে আধাতুলা সুতোকাটতে পারতেন।

অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ ছিলো বলে ধীরে ধীরে সুতোকাটুনির সংখ্যা কমতে থাকে। উনিশ শতকের শুরুতেই দক্ষ মহিলার সংখ্যা একেবারে কমে যায়।

মসলিন তৈরির পর সেটা ধোয়া হতো সোনারগাঁও-এর কাছে এগারোসিন্ধুর জলে। দক্ষ ধোপা ছাড়া কেউ ধুতে পারতো না। ক্ষার ও সাবানের সঠিকমাত্রায় ব্যবহার না হলে কাপড় নষ্ট হয়ে যেতো।

আঠারো শতকের গোড়ায় দিকে এক টুকরো মসলিন ধোয়ার খরচ পড়তো দশ টাকা। ধোয়ার জন্য একটা বিশেষ শ্রেণি তৈরি হয়েছিলো। সবাই মসলিন ধুতে পারতো না।

ধোয়ার সময় নানা প্রকার ফলের রস দিয়ে কাপড়ের দাগ উঠাতে হতো। নারোদিয়া নামের এক শ্রেণির লোক ছিলো, তারা ধোয়ার সময় কাপড়ে কোথাও সুতো সরে গেলে তা রিপু করতো।

এরপর কুণ্ডুগার নামের আরেক শ্রেণির লোক চালধোয়া জল ছিটিয়ে শঙ্খ বা ছোট মুগুর দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতো। সেটিও ছিলো অত্যন্ত সতর্কতার কাজ।

কোনো কোনো মসলিনে সুঁচের কাজ বা চিকনের কাজ করা হতো। ঢাকার চিকনের কাজের সুনাম ছিলো। কোনো কোনো কাপড়ে রঙ করা হতো। এরপর করা হতো কাপড় প্যাক। এই কাজ যারা করতো, তাদের বলা হতো বস্তাবন্দ।

মসলিন সংগ্রহের জন্য ইংরেজদের কুঠি ছিলো তেজগাঁও। সব কাজ শেষে প্যাকিং করে সেখান থেকে পাঠানো হতো কোলকাতায়। কোলকাতা থেকে যেতো ইউরোপে।

সান নিউজ/এমএইচ-০৯

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্রাজিলে মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে ৪ পুলিশসহ ১১৯ জন নিহত

ব্রাজিলে মাদকচক্রের বিরুদ্ধে এক বড় পুলিশি অভিযানে...

২০৩৪ সালের ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জনে নারীই চালিকাশক্তি: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়

আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য...

‘হ্যাঁ’ ভোটে বিএনপির জন্ম, ‘না’ ভোটে মৃত্যু

জামায়াত ও বিএনপি কুতর্ক বাদ দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জা...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

বোয়ালমারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার মালামাল লুট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির...

জনগণের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনীতির সাজানো সম্মতি?

গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের একটি পদ্ধতি, যে...

এবার ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’ 

নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন যু...

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বনদস্যু, তিন শতাধিক জেলে অপহরণ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার নামে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা