স্বাস্থ্য

লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাসের

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের আগে দেশে শিশু জন্ম দিতে গিয়ে প্রসূতির মৃত্যুর হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ (হাজারে)। ২০২১ সালের মধ্যে তা ১ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল স্বাস্থ্যনীতিতে। এ লক্ষ্য পূরণে অনেকটা এগোনো সম্ভব হলেও তা পরিপূর্ণভাবে অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

প্রসবকালে বা প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে কোনো প্রসূতির মৃত্যু হলে তাকে মাতৃমৃত্যু বলা হয়। ২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। নানা বাধা বিপত্তি ছাড়াও চলমান মহামারীর কারণে এ লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে দেশের স্বাস্থ্য খাত অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে প্রসূতি মৃত্যুর হার নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা শুরুর আগে এ হার ছিল ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

তবে চলতি বছর স্বাস্থ্যসেবায় মহামারী জনিত চাপের কারণে এ হার আবার বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আগস্টের শুরুতে রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় হেলেনা খাতুন (২৮) নামের এক প্রসূতির।

জামালপুর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশু জন্মদানের সময় মৃত্যু হয় তার। জানা গিয়েছে, মহামারীর কারণে প্রসবপূর্ব সেবা ব্যাহত হওয়ায় তার গর্ভের সন্তান উল্টে গিয়েছিল। পরিস্থিতিকে আরও সঙ্গিন করে তুলেছিল হেলেনা খাতুনের উচ্চরক্তচাপ। এভাবে করোনাকালে প্রসূতি সেবা ব্যাহত হওয়ায় অনেক মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

করোনাকালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে গাইনি চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল এন্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। সংগঠনটি জানায়, করোনা মহামারীর আগে বাড়িতে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মাতৃমৃত্যুর হার ৩২ শতাংশ থাকলেও এখন তা ৫৪ শতাংশে উঠেছে।

সংগঠনটির সম্পাদকীয় বোর্ডের সম্পাদক অধ্যাপক সাবেরা খাতুন বলেন, করোনার সময় অনেক মাতৃমৃত্যুর রেকর্ড নেই। তবে করোনা মহামারী না এলেও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে স্বাস্থ্যনীতিতে বর্ণিত লক্ষ্য অর্জন হতো বলে মনে হয় না। মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে আরো কাজ করা দরকার ছিল।

এ বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক ইশতিয়াক মান্নান বলেন, দেশে প্রতি বছর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে পাঁচ-ছয় হাজার মায়ের মৃত্যু হয়। করোনার কারণে বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। এ সময় ৫৩ শতাংশ মা বাড়িতে সন্তান প্রসব করেছেন। ফলে সাধারণ সেবা হতে জরুরি সেবা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।

জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে ২০২১ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৪ থেকে ক্রমান্বয়ে ১৫-তে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখনো হাজারে ৪০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।

এর মধ্যে নবজাতকের (২৮ দিন বয়স পর্যন্ত) মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ৩০টি। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ মৃত্যুহার হাজারে ৪৫টি। এক বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে প্রতি হাজারে ৩৮টি শিশু।

নবজাতকের মৃত্যুর হার সম্পর্কে জানাতে গিয়ে নিপোর্টের গবেষণা শাখা বলছে, দেশে নবজাতক মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে জন্মকালে শ্বাসরোধ হয়ে পড়ার কারণে। সেপসিস, নিউমোনিয়া বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয় ২৪ দশমিক ৭ শতাংশের। অপরিণত জন্ম এবং জন্মের সময় কম ওজন হওয়ার কারণে মৃত্যু হয় ১৭ দশমিক ২ শতাংশের। ৩৩ দশমিক ১ শতাংশের মৃত্যু হয় অন্যান্য কারণে।

পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য) ড. মোহাম্মদ শরীফ জানান, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি দেশে প্রশিক্ষিত ধাত্রীরও স্বল্পতা রয়েছে। প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবপরবর্তী প্রসূতি সেবা এবং নবজাতকের সেবা বাড়াতে ইউনিয়ন থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে।

জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে বর্ণিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। তবে ২০৩০ সালে এসব আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারব। এইচপিএনএসডিপি-২০২২-এর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিও অনেকটাই অর্জিত হবে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা