সান নিউজ ডেস্ক: নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের আজ বুধবার (১৮ আগস্ট) ৭২তম জন্মদিন। জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল এবং নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন চর্চা কেন্দ্র ফেনী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত এই নাট্য ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৯ সালের এই দিনে। ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে। বাবা মফিজউদ্দিন আহমেদ ও মা ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি৷ শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে৷ বাবার চাকরির সূত্রে এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷
সেলিম আল দীন ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি৷ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করোটিয়া সাদত কলেজে৷ সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে, কপি রাইটার হিসেবে।
১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই বেগমজাদী মেহেরুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের একমাত্র সন্তান মইনুল হাসানের অকালমৃত্যু হয়। মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতি নিযে গবেষণা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা নাট্যকোষেরও তিনি প্রণেতা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসিরউদ্দীন ইউসুফকে সাথি করে গড়ি তোলেন গ্রাম থিযেটার। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণকেন্দ্রিক এথনিক থিয়েটারেরও তিনি উদ্ভাবনকারী। গ্রাম থিয়েটারের মত প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে কর্ষণ করেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও লোকনাট্য আঙ্গিকসমূহের রূপ, রীতি ও প্রকৃতি।
সেলিম আল দীনের উল্লেখযোগ্য নাটক
জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন (১৯৭৫), বাসন (১৯৮৫), মুনতাসির, শকুন্তলা ও কীত্তনখোলা (১৯৮৬), কেরামতমঙ্গল (১৯৮৮), যৈবতী কন্যার মন (১৯৯৩), চাকা (১৯৯১), হরগজ (১৯৯২), প্রাচ্য (২০০০), হাতহদাই (১৯৯৭), নিমজ্জন (২০০২), ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল (২০০৭), পুত্র, ও বনপাংশুল।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি, কথাসাহিত্য পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে দাফন করা হয়।
সাননিউজ/এমআর/এমএম