আদিল সরকার, ইবি: অত্যাধিক মাদক সেবনের ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুনর্জন্ম মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।
সাফিন নামের (ছদ্মনাম) ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা হারা ছেলেটির একমাত্র ‘মা’ ছাড়া আর কেউ নেই পরিবারে। একমাত্র ছেলেকে মাদকাসক্তের কারণে বিকৃত অবস্থায় দেখে পাগলপ্রায় যেন তার মাও।
ঘটনাটি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তার সহপাঠীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সহজলভ্যতা ও আবাসিক হলসমূহে প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় মাদকাসক্তে শিক্ষার্থীর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে মাদক দূরীকরণে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান প্রদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকমাস আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি গণরুমে (১০৪ নম্বর কক্ষ) উঠেন ওই শিক্ষার্থী। এরপর গণরুমের অন্য বন্ধুদের ও হলের বড় ভাইদের কাছ থেকে ইশারা পায় মাদকের। তারপর অন্যদের টাকায় শুরু হয় মাদকসেবন। অল্প সময়েই উঠে আসে মাদকসেবিদের প্রথম কাতারে। বর্তমানে অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে পাগল হয়ে পড়েছে সে। তার অস্বাভাবিক আচরণের মাত্রা বেড়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপরেই বেড়িয়ে আসে ভয়ানক তথ্য। গাজা, ইয়াবা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর মাদক গ্রহণ করতো সে বলে জানান ডাক্তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক পারভেজ হাসান জানান, ওই শিক্ষার্থী গাঁজা, ইয়াবা ছাড়াও প্যাথিটিন, ন্যালবানসহ অন্যান্য মাদক অতিরিক্ত মাত্রাই গ্রহণ করতো। এগুলো অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলেই মানসিকভাবে বিকৃত হয়ে পড়েন সে।
এদিকে, ছেলের এই খবর শুনে তাকে দেখতে ক্যাম্পাসে আসেন তার মা। এ সময় বাড়িতে থাকা অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী মাদক সর্ম্পকে জানতো না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর কিভাবে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তা আক্ষেপ করে বলতে থাকেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকের পরামর্শে বিভাগীয় শিক্ষকদের সহযোগিতায় গত ১৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয় তাকে।
একই হলে অবস্থানরত তার বন্ধুরা জানায়, গত একমাস ধরে তার ভারসাম্যহীন আচার-আচারণ বোঝা যায়। তার মোবাইল ফোনটি বিক্রি করেও মাদক ক্রয় করেন। এছাড়াও সে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে সারাদিন বাহিরে থাকতো বলে জানায় তার বন্ধুরা।
প্রসঙ্গত, রাতের আধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত মাদকের আড্ডা বসায় শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে হলের ছাদেও বসে তারা। এছাড়াও বর্তমানে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দিন ও রাতে মাদকের আসর জমায় তারা। এ সকল মাদক বহিরাগত স্থানীয়রা ক্যাম্পাসে সরবরাহ করেন বলে জানা গেছে। তবে ক্যাম্পাসে মাদক নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন দৃশ্যমান প্রদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই মাদকাসক্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পুনর্জন্ম মাদকাসক্তি পূনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক হাসান কবির শিহাব বলেন, ‘আসক্ত ছেলেটি এখনো মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। নিয়মিত মাদক সেবন করার পর একটা সময় মাদক না পেলে অনেকে আসক্তের মধ্যে আত্মহত্যা করতে চায়। তার মধ্যেও এমন প্রবণতা দেখছি। আমরা তার দেখাশোনার জন্য সবসময় ২-৩ জন রেখেছি। বর্তমানে সে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছেন। আশা করছি তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে সে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে অবহিত হয়েছি। মাদক প্রতিরোধে আবাসিক হলসমূহের প্রভোস্ট ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলেছি। শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সান নিউজ/এমকেএইচ