প্রদীপ ও লিয়াকতের নেতৃত্বে ১৬১ ‘ক্রসফায়ার’
সারাদেশ

প্রদীপ ও লিয়াকতের নেতৃত্বে ১৬১ ‘ক্রসফায়ার’

সান নিউজ ডেস্ক:

মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ ১৬১ জন নিহত হয়েছে। এর বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে এলাকাটি ‘ক্রসফায়ার জোন’ হয়ে উঠলেও থামেনি ইয়াবার কারবার। ওসি প্রকাশ্যে মাদক কারবারিদের নির্মূল করার ঘোষণা দিলেও তার এই মিশনে শীর্ষ কারবারি হাজি সাইফুল ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ নিহত হয়নি।

নিহতদের বেশির ভাগই ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আত্মসমর্পণের নামে শীর্ষ কারবারিদের রেহাইয়ের সুযোগ দিয়ে এবং চুনোপুঁটিদের দমন করে চলছে ‘ক্রসফায়ার বাণিজ্য’।

গত ৩১ জুলাই মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ‘ভিন্ন রকম ত্রাসের’ অভিযোগ মিলছে।

সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে টেকনাফে এসে ‘আস্থাভাজন ওসি’ বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করেন প্রদীপ। গোপালগঞ্জে বাড়ি এবং ছাত্রলীগ করতেন বলে পরিচয় দেন লিয়াকত। এসব কারণে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, পুলিশও তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া অনেক ব্যক্তিকে ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে বড় ইয়াবা কারবারি বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিছু পরিবার টাকা আদায়েরও অভিযোগ করছে।

ওসি প্রদীপ কুমারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, টেকনাফের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার ইয়াবা কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হবে। যাদের পাওয়া যাবে না তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, যানবাহন সমূলে উৎপাটন করা হবে। তাদের বাড়িতে গায়েবি হামলা হবে। কোনো কোনো বাড়ি ও গাড়িতে গায়েবি অগ্নিসংযোগও হতে পারে। ওসির এই ভীতিকর ভিডিও বার্তা নিয়ে কক্সবাজারে ব্যাপক আলোচনা চলে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, গত দেড় বছরে টেকনাফে ১৫০টি বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সরকারের ইয়াবা নির্মূলের জন্য বিশেষ অভিযান চালানোর সুযোগ নিয়ে ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত বাহারছড়া, মেরিন ড্রাইভসহ কিছু এলাকাকে কিলিং জোন বানিয়েছেন। গরীব ‘বহনকারীদের মেরে’ তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাহবা কুড়িয়েছেন। আর শীর্ষ কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তাদের সমঝোতায় অনেকে আত্মসমর্পণ করেছে। অনেকে আত্মসমর্পণ না করেও তাদের ‘ম্যানেজ করে’ এলাকায় ফিরেছে। যারা ম্যানেজ করছে না তাদের বাড়িতেই হামলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ দেন ওই জনপ্রতিনিধি।

পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের মে মাস থেকে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮৭ জন নিহত হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ১৭৪ জন, বিজিবির সঙ্গে ৬২ জন এবং র‍্যাবের সঙ্গে ৫১ জন। শুধু টেকনাফেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই।

২০১৮ সালেই টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে ১০ জনের পরিবার দাবি করে, নিহতরা কারবারে জড়িতই ছিল না। তাদের সাতজনের নাম কারবারিদের তালিকায় নেই। ছিল না মামলাও। তবে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ, ওই নিহতরা খুচরা বিক্রেতা। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর অভিযানে নিহত হন নাজিরপাড়ার কামাল হোসেন।

কামালের মা নূরুন্নাহার বিলাপ করে বলেন, ‘গরুর ব্যবসা করে কোনোমতে সংসার চালাত কামাল। তার নিজের ঘরও নেই। অভিযানের সময় কৌতূহলে এগিয়ে গেলে পুলিশ কামালকে আটক করে। পরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর পাই।’ তাঁর মায়ের দাবি, পুলিশের এক সদস্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। দিতে পারেননি তাঁরা।

সাবরাংয়ের সিকদারপাড়ার সুলতান আহমেদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন নিহত হন ওই বছরের ২৭ অক্টোবর। সাদ্দামের মা জোহরা বেগম ও ভাই শামসুল আলম বলেন, তাঁদের এলাকায় কালামের ছেলে সাদ্দাম ইয়াবা কারবার করেন। নিহত সাদ্দাম মাছের ব্যবসা করতেন। স্থানীয় দফাদারের সঙ্গে বিরোধের কারণে ভুল তথ্য দিয়ে তাঁদের সাদ্দামকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, টেকনাফ থানার পুলিশ এখন মাঠ পর্যায়ে কারবারিদের কাছ থেকে টাকা তোলার দায়িত্ব দিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার-দফাদারদের। প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা আদায়কারী চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পেয়ে থাকেন। চৌকিদার-দফাদাররা ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক চুক্তির কমিশন বাবদ আয় দিয়ে সবাই এখন বড়লোক বনে গেছেন। সূত্র মতে, থানায় বসে সব দিক সামলান ওসি। আর ক্রসফায়ারসহ প্রভাব বিস্তারের কাজটি করেন পরিদর্শক লিয়াকত। ডাকাত গ্রেপ্তারে পাহাড়ে অভিযান, ইয়াবা ধরাসহ কিছু ভালো কাজ করে লিয়াকতও ওসি প্রদীপের মতো ‘আস্থাভাজন’ তকমা লাগিয়েছেন। ফলে তাঁর অভিযান নিয়েও কেউ প্রশ্ন তোলে না। সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ নিহতের পর তাঁকেসহ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সব সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবার তাঁদের ‘ক্রসফায়ার’ বাণিজ্যের তথ্য বের হবে বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন।

অভিযোগের ব্যাপারে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘এসব ডাহা মিথ্যা। আমি টেকনাফে আসার পর ইয়াবা কারবারিদের সাইজ করেছি। এসব কারণে তারা আমার ওপর ক্ষীপ্ত। তাই তারা বানোয়াট অভিযোগ তুলে আমাকে সরাতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের সাংবাদিকরাও জানেন আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি দুর্নীতির আশ্রয় নিইনি।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

সান নিউজ/ আরএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজধানী থেকে গ্রেফতার মমতাজ

মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহান...

ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি

পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে প্রায় একমাস ধরে চারদফা আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।...

পুশ ইন করা ৭৫ বাংলাদেশি এবংতিন ভারতীয়কে উদ্ধার

সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জোরপূর্বক পুশ ইন করা ৭৫...

সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে আগরতলায় বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে...

মিঠাপুকুরে বালি চাপা দেওয়া শিশুর মরদেহ উদ্ধার, আটক-১

রংপুরের মিঠাপুকুরে হত্যার পর বালি চাপা দেওয়া অবস্থায় এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার কর...

কটিয়াদীতে সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা শুরু

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া ইউনিয়নের মসুয়াগ্রামে অস্কার বিজয়ী বিশ্ব...

নীলফামারীতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেলাই মেশিন ও সিলিং ফ্যান প্রদান

নীলফামারী জেলা পরিষদ এর উদ্যোগে হতদরিদ্র ১৪ নারীকে সেলাই মেশিন ও ১১টি শিক্ষা...

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার ভারত-পাকিস্তানের

চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যে দুই কর্মকর্তাকে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার করেছে দুদেশ। তা...

ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রকে ৬০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার হুমকি দিল ইরান

মধ্যপ্রাচ্য সংকট যেন বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনার...

প্রথম ভালোবাসায় কী হয়েছিল প্রীতি জিনতার?

অভিনয়ে না থাকলেও প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন ‘কাল হো না হো’ তারকা প্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা