ছবি : সংগৃহিত
সারাদেশ
সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড

১৬ লাশ শনাক্ত করা যায়নি, হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন!

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর ছিল ২৩ ডিসেম্বর। গত বছরের এই দিন গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারনে বিস্ফোরিত হয়ে ৪৭ জনের প্রানহানির ঘটনা ঘটে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায়নি অজ্ঞাত মরদেহের ডিএনএ রিপোর্ট।

আরও পড়ুন : গাইবান্ধায় ট্রাকের ধাক্কায় হেলপার নিহত

এ ঘটনায় এখনও ১৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ঝালকাঠিতে স্থাপন করা হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন।

প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, ২৩ নভেম্বর রাতে প্রায় ৬/৭ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে এসে বরগুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলো অভিযান-১০। লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধার মোহনায় এলে ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে লঞ্চটি। মুহুর্তেই পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে নদীর মধ্যে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে পুরো লঞ্চ জ্বলছিলো। পরে ভাসতে ভাসতে দিয়াকুল এলাকার চরে আটকে পরে লঞ্চটি। জীবন বাচাতে যে যেভাবেই পারে নদীতে ঝাপিয়ে পড়তে থাকে। এরই মধ্যে অনেকেই পুড়ে আঙ্গার হন। ডেকের যাত্রীরা জীবন বাচাতে পানীতে যাপ দিতে পারলেও কেবিনের যাত্রীরা বুঝে উঠার পূর্বেই পুরো লঞ্চে অগুন ছড়িয়ে পড়ায় তারা আর কেবিনেই মারা যান তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় ৩৭ জনের মরহেদ উদ্ধার করা হয়। পরে নদী থেকে ৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়।

আহত ও স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযান লঞ্চে আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যদি দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারতো তাহলে এতো প্রান হানির ঘটনা ঘটতো না। তবে অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার এবং তাদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত রাখেন ঝালকাঠি শহরের লোকজন।

আরও পড়ুন : গাইবান্ধায় অগ্নিকাণ্ডে ৭ কোটি টাকা ক্ষতি

বিশেষ করে দিয়াকুলের সাধারণ গ্রামবাসী। লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে অনেকে প্রাণ বাঁচান। সেদিনের সেই ভেঁজা কাপড় আজও দিয়াকুল গ্রামে ভয়াল স্মৃতি হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর সেই রাতের কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন। তবে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে জানিয়েছে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় পুরান ঢাকার মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে ঝালকাঠি থানায় ৪ মালিকসহ ৮ জনের নামে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি নৌ আদালতে হস্তান্তর করা হয় এবং পোড়া লঞ্চটি আদালত মালিক পক্ষের জিম্মায় দেন। বর্তমানে মামলাটি নৌ আদালতে চলমান রয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রছেছে।

পুড়ে মারা যাওয়া ১৬ ব্যক্তির ডিএনএ রিপোর্ট এখনও যাওয়া যায়নি। ওই রিপোর্ট পেলে তাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক

অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৭ জন মারা যাওয়ার ৪১ দিন আগে সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী নামে একটি তেলের জাহানে অগ্নিকাণ্ডে ৭ জনের মৃত্যু হয়। সুগন্ধা নদীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। দ্রুত নৌ ফায়ার ষ্টেশন স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর।

সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল গ্রামের রুবেল শরিফ বলেন, সেই দিনের ভয়াল ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে। জীবন বাজি রেখে কত মানুষকে আমরা নদী থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম তা আজও মনে পড়লে গা শিউরে উঠে। এই গ্রামের লোকজন তাদের কাপড় ও খাবার দিয়েছে সাধ্যমত।

ঝালকাঠির ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ঝালকাঠি থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা ও কোলকাতা যায় অনেক নৌযান।

এছাড়াও বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকায় পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন জরুরী হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন : স্ত্রীর শরীরে গরম ডাল ছুড়ে দিল পাষণ্ড স্বামী

ঝালকাঠি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবীর সাগর বলেন, আগুনের লেলিহান শিখা অনেক দুর থেকেই দেখা যাচ্ছিল। লোকজনসহ ট্রলার নিয়ে নদী থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি।

কিন্তু এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে, যাতে ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হয়। এতে ডুবুরি দলও থাকবে, দুর্ঘটনা হলে দ্রুত ঘঁনাস্থলে পৌঁছানো যাবে।

ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলা ঢাকার নৌ আদালতে চলমান রয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে মামলাটি তদন্ত করেছি, আলামতও জব্দ করেছি। আদালতের নির্দেশে পোড়া লঞ্চটি মালিক পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এক বছর হলেও আমরা এখনো ১৬ জনের ডিএনএ রিপোর্ট পাইনি।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযানে ব্যাপক গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবে...

কাঁচা আমের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গ্রীষ্মকালের সু...

মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ’লীগের লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন...

১০ জেলেকে মুক্তি দিল আরকান আর্মি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাফ নদীতে মাছ শ...

বজ্রপাতে একদিনেই প্রাণ গেল ১০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখের তীব্র দ...

হাসপাতাল থেকে বাসা ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা