স্বপন দেব, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে যাবে বোরো ধানের উৎপাদন। রমজান মাসেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ঝড়বৃষ্টি, আগাম বন্যাসহ বিরূপ আবহাওয়া থেকে বোরো ধান রক্ষা করতে জেলার সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে। এতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তায় কৃষকরা দ্রুত সময়ে ধান কেটে গোলায় ভরছেন।
জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারীর মতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বোরো ফলন বেশি হবে।
হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলা অংশ ভুকশিমইল ইউনিয়নের কানেহাত, বড়দল, চিলারকান্দি, সাদিপুর, মীরশঙ্কর, গৌড়করণ এলাকায় গেলে ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান শুকানোসহ বোরো ধান নিয়ে কৃষকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। রমজান মাস হওয়ায় কৃষক নিজে ধান কাটতে পারলে সেই ধান জমি থেকে মাড়াই করার স্থানে আনতে শ্রমিকের দরকার হয়।
বড়দল গ্রামের কৃষক মালিক মিয়া (৬৫) জানান, তিনি ১০ কিয়ার (বিঘা) জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। রোজার কারণে তিনি নিজে ধান কাটতে পারছেন না। ৭ জন ধান কাটা শ্রমিক লাগিয়েছেন। কিন্তু তারা প্রতিদিন আধা বিঘা জমির ধানও কাটতে পারে না। অথচ ৩ বেলা খাবার দিয়েও শ্রমিকদেরকে দিতে হয় প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে। ফলে ৭ শ্রমিকে প্রতিদিন খাবারসহ খরচ কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার টাকা।
তারা দুইদিনে এক বিঘা জমির ধান কাটলে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এছাড়া ধান মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ তো রয়েছে। এই ধানের উপর নির্ভরশীল তাদের ৮ জনের পরিবার। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও প্রতিমণ ধানে খরচ প্রায় হাজার টাকা। অথচ হাওরে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধান ৪ থেকে ৫শ টাকার বেশি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ধান চাষে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি মৌসুমে কুলাউড়া উপজেলার ৭ হাজার ৯১২ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে প্রতি হেক্টরে। তবে আমরা আশা করছি, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, কৃষকদেরকে সচেতন করার জন্য হাওর এলাকাসহ বোরো চাষ হয়েছে সেসব এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। কৃষকদের বলা হয়েছে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলে কৃষকরা যেন সেই ধান কেটে ফেলেন।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভাসহ কুলাউড়ায় ইউনিয়ন ১৪টি রয়েছে। এরমধ্যে ছয়টি ইউনিয়নে বোরো ধান হয় সবচেয়ে বেশি হয়। এ ইউনিয়নগুলো হাকালুকি হাওর সংলগ্ন। এ উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নেই সবেচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপন্ন হয়েছে।
কৃষিবিভাগ কৃষকদের ধান কাটা শ্রমিক দেয়ার পাশাপাশি ধান কাটা ও মাড়াই দিতে কৃষকদের ৫টি (কম্বাইন্ড হারবেস্টার) মেশিন দেয়া হয়েছে। একেকটি মেশিন ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটতে পারে। ফলে কৃষকরা কম খরচে ও তুলনামূলক কম সময়ে বেশি ধান কাটতে পারবে।
সান নিউজ/কেটি