সারাদেশ
চট্টগ্রাম কাস্টমস 

দুর্নীতির রসুইঘরে কোনো দুর্নীতি পায়নি দুদক!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : দুর্নীতির রসুইঘর চট্টগ্রাম কাস্টমস। এটা সবার জানা। কিন্তু সেই রসুইঘরে কোনো দুর্নীতি পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এমন সনদে বিস্মিত সবাই। খোদ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অনেকেই বিশ্বাস রাখতে পারছেন না দুদকের এই সনদে।

সনাক ও টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী এটা অবিশ্বাস্য মন্তব্য করে বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করার পবিত্র দায়িত্ব যাদের হাতে রাষ্ট্র ন্যস্ত করেছে, আইন মানার দায় যাদের বেশি তারাই আইন মানছে না। যাদেরকে ধরবে তাদের চাইতে যারা ধরবে তাদের সমস্যাটা বেশি। দুর্নীতিবাজ ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া ব্যক্তিরা তাদেরকে বশে নিয়ে ফেলছে। ফলে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগ থেকে সংশ্লিষ্টরা সহজে দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন।

আকতার কবির চৌধুরী বলেন, দুর্নীতিবাজরা এখন বুক ফুলিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, বলবে আমি নির্দোষ, নিরপরাধ, সৎ ছিলাম বলেই তদন্তে আমার বিরুদ্ধে কিছু আসেনি। তার চেয়ে তদন্ত না হওয়া অনেক ভালো ছিল। তদন্তে ছাড় পাওয়ার একটা সার্টিফিকেটের চেয়ে তদন্ত না করাটা অনেক ভালো। দুদককেই সততা, স্বচ্ছতার জায়গায় আনতে হবে। দুর্নীতি তদন্তের নামে জাতির সাথে তামাশা করা একেবারে উচিত নয়।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে- এমন একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের পর দুর্নীতির কোনো সত্যতা মেলেনি বলে সনদ দেয় দুদক।

ফলে এই মামলায় অভিযুক্তদের অব্যাহতিও প্রদান করা হয়। তবে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান করেও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণও তুলে ধরা হয়নি।

গত বছর ৯ নভেম্বর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান) সাঈদ মাহবুব খান অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার বিষয়টি দুদকের সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দিয়ে জানান। এর আগে ওই বছরের ৩১ আগস্ট অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা অভিযোগটি নথিভুক্ত করার মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেন।

অনুসন্ধানের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে- এমন একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে। ২০১৭ সালে অভিযোগটির অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়।

অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, উপপরিচালক এস এম আখতার হামিদ ভূঞা ও মোছা. সেলিনা আখতার মনি। এরপর দীর্ঘ প্রায় চার বছর অনুসন্ধান করেও শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগটির সত্যতা পাননি দুদক কর্মকর্তারা!

এছাড়া ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ, ঢাকা কাস্টম হাউজ, কমলাপুর আইসিডি, ঢাকার বন্ড কমিশনারেটের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি ও শুল্ক নির্ধারণে দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয় দুদকে। ২০১৫ সালে উক্ত অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য টিম লিডার নিয়োগ দেয়া হয় দুদক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীকে।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কাস্টম হাউসগুলোতে বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে দুদক থেকে চিঠি দেয়া হয়। এভাবে প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধানের পর গত বছরের ১৮ অক্টোবর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান) সাঈদ মাহবুব খান দুদকের সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে উক্ত অভিযোগগুলো নথিভুক্ত করার বিষয়টি জানান। অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তি হিসেবে কারও নাম উক্ত চিঠিতে উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করা ফিরোজ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী রুনা লায়লার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। একই বছর অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব পান দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মলয় কুমার সাহা। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে বদলি করা হয় ফিরোজ উদ্দিন আহমেদকে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান করে ফিরোজ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী রুনা লায়লার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাননি দুদক কর্মকর্তা মলয় কুমার সাহা। গত বছরের ৩১ আগস্ট অভিযোগটি নথিভুক্ত করে নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেন তিনি। এ প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৬ নভেম্বর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান) সাঈদ মাহবুব খান অভিযোগটি নিষ্পত্তির বিষয়টি রুনা লায়লাসহ দুদকের সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে জানান।

দুদকের মুখপাত্র ও পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে দুদক কাউকেই ছাড় দেয় না। অনুসন্ধানে কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলেই কেবল অব্যাহতি দেয়া হয়। কমিশন কোনো মামলা করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করে থাকে।

দুদক সূত্র জানায়, গণমাধ্যম, হটলাইন, ইমেইল, গোয়েন্দা সংস্থা ও অভিযোগ বাক্সসহ বিভিন্ন উৎস থেকে দুর্নীতির অভিযোগ-তথ্য পাওয়ার পর তা দুদকের এক বা একাধিক যাচাই-বাছাই কমিটি খতিয়ে দেখে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশ করলেই কেবল অনুসন্ধান শুরু করা হয়।

সে হিসেবে যেসব অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়, স্বাভাবিকভাবে তার ভিত্তি থাকতে হয়। এ ধরনের অভিযোগ পেয়েই বিগত সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও গিয়েছেন।

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধ...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইরান ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিল, দাবি নেতানিয়াহুর

ইরানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের সবচেয়ে ব...

দেশ ছাড়ার ভাবনা গায়ক তাসরিফ খানের

জনপ্রিয় গায়ক, সমাজসেবক, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কুঁড়েঘর ব্যান্ডের ভোকাল ত...

আজ সোমবার থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া গেছে। দেশের বেশিরভা...

ঈদযাত্রা ‘স্বস্তিদায়ক’ না হওয়ায় ‘দুর্ঘটনা ও হতাহত বেড়েছে’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

উৎসব বা আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় নিরানন্দে পরিণত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তাই যথা...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা