জাতীয়

‘৫০ শতাংশ অনিয়ম দূর’করণে ভূমিকা রাখলেন না অ্যাটর্নি জেনারেল

মাহমুদুল আলম : প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছিলেন, ‘তার সবচেয়ে বড় কথা ছিল বিচার অঙ্গনে যত অনিয়ম আছে, এগুলো দূর করতে হবে। তিনি আমাকে বলেছেন, সেন্ট্রাল ফাইলিং করেন। যদি করেন তাহলে কোর্টের ৫০ শতাংশ অনিয়ম দূর হয়ে যাবে। আমি বারের (সুপ্রিম কোর্ট বার) নেতাদের বলেছি, আপনারা যদি সেন্ট্রাল ফাইলিংয়ে আসেন, তাহলে বারের যে অনিয়ম আছে, তার ৫০ শতাংশ চলে যাবে। কিন্তু বার থেকে বলল, সেন্ট্রাল ফাইলিং হবে না। আমরা (বার) আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কোর্ট নির্বাচন করব।’

মাহবুবে আলমের স্মরণে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক শোকসভায় ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন।

পরদিন ৮ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। নিয়োগ পাওয়ার পর ওইদিন তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্যার যেভাবে কাজ করে গেছেন, সেই আলোকে তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করবো। এ জন্য আমি সবার দোয়া চাই।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে যারা কোর্টের অনিয়ম দূর করাকে প্রাধান্য দিয়ে ভাবেন, তাদের অনেকেই মনে করেছিলেন, সদ্যপ্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের চাওয়া ‘সেন্ট্রাল ফাইলিং' পদ্ধতির মাধ্যমে এবার কোর্টের অনিয়ম অর্ধেক কমে যাবে। তাদের মনে করার কারণ ছিল একাধিক। সেগুলো হচ্ছে- নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সদ্য প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের জুনিয়র হিসেবে সরাসরি কাজ করেছেন। তাই তিনি তার সিনিয়রের জনস্বার্থমূলক এই চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আবার যেহেতু এ এম আমিন উদ্দিন একইসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে কাজ করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন, সেহেতু তার জন্য কাজটি করা সহজও হবে। তাছাড়া প্রধান বিচারপতি নিজেও চান এই পদ্ধতি চালু হোক।

তবে দেখতে দেখতে এ এম আমিন উদ্দিনের সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতির মেয়াদ পুরিয়ে গেছে প্রায়। যদিও ৫০ শতাংশ অনিয়ম দূর’করণে ভূমিকা রাখলেন না তিনি।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, সেন্ট্রাল ফাইলিং হলে একটি মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এখতিয়ার সম্পন্ন যথাযথ বেঞ্চগুলোর কোন একটিতে চলে যাবে। আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালিকায় মামলাটি আসবে। এভাবে অনেক কিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। যার ফলে মামলা তালিকায় এগিয়ে আনা বা পিছিয়ে রাখা, এক বেঞ্চে চাওয়া পূরণ না হলে বেআইনীভাবে একই আবেদন নিয়ে অন্য বেঞ্চে যাওয়াসহ নানা অনিয়ম নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।

তারা বলছেন, বেআইনী এসব কর্মকাণ্ডে হয় বেআইনী লেনদেন। আর বেআইনী লেনদেনের জন্য এসব টাকা-পয়সা নেয়া হয় সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকেই। এক্ষেত্রে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বলা হয়- মামলা তালিকায় তুলতে, শুনানির জন্য তারিখ পেতে বা রায়ের কপি পেতে খরচ করতে হবে।

কিন্তু সেন্ট্রাল ফাইলিং পদ্ধতিতে গেলে এসব কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। ফলে বেআইনী লেনদেন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

সেন্ট্রাল ফাইলিং পদ্ধতি বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাননিউজকে বলেন, ধরুন কেউ কোনও মামলা নিয়ে একটি বেঞ্চে নিজের পক্ষে আদেশ পেলেন না। অথবা মামলাটি কোন একটি বেঞ্চ গ্রহণ করলো না। তখন তিনি মামলাটি নিয়ে অন্য বেঞ্চে গেলেন। কিন্তু সেন্ট্রাল ফাইলিং হলে একবার একটি বিষয় নিয়ে কোনও বেঞ্চে গেলে সেটির বিভিন্ন তথ্য সেন্ট্রাল ফাইলে থেকে যাবে। তাই অন্য বেঞ্চে আবার বিষয়টি নিয়ে গেলে তা ধরা পড়বে। ফলে একই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বেঞ্চে যাওয়া যাবে না।

এই পদ্ধতিতে কোর্টের অনিয়ম ৫০ শতাংশ কমবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেও মনে করেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনিও হ্যাঁ সূচক জবাব দেন।

তবে তিনি একইসঙ্গে দুইটি পদে থাকার পরও এই বিষয়ে ভূমিকা রাখেননি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বর্তমানে মহামারি করোনার মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। জজ সাহেবদের অনেকেই কোর্টে আসেন না। আগের মতো অবস্থা হলে, জজ সাহেবরা কোর্টে আসলে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যেত।

একটা পদ্ধতিতে যেতে হলে সেটি কী, এই পদ্ধতিতে গেলে কী সুবিধা হবে এসব বিষয় তো তুলে ধরতে হবে। এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে না।

যদিও এই করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পদে আছেন। তিনি ২০১৯-২০ মেয়াদে বারের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ ২০২০-২১ মেয়াদেও তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি পদে আছেন।

যদিও একই সঙ্গে দুই পদে থাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সেন্ট্রাল ফাইলিং পদ্ধতিতে গিয়ে কোর্টের ৫০ শতাংশ অনিয়ম দূর করার সুযোগ কমে আসছে এ এম আমিন উদ্দিনের। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বারের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে গেছে, অচিরেই বারের সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে তাকে।

কিন্তু একসাথে দুই দায়িত্বে থাকার পরও পদ্ধতিটি চালু করে সুপ্রিম কোর্টের অনিয়ম দূর করার কাজে ভূমিকা না রাখায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অনেকেই মনে করছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কথা রাখেননি। তিনি কোর্টের অনিয়ম দূর করার কাজে বিরল সুযোগ পেয়েও ভূমিকা রাখেননি। তিনি তার সিনিয়রের প্রতি যে শ্রদ্ধার কথা বলেছিলেন, কাজে তার প্রমাণ রাখেননি।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলা বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিত

ভোলা প্রতিনিধি: বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভ...

সৌদি গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর পবিত্র হজের প্রথম ফ্লাইটের আনুষ্...

মে মাসে ৮ দিনেই বজ্রপাতে ৪৩ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি মে মাসের গত ৮ দিনে সারা দেশে বজ্রপাতে...

মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান...

ঢাকায় পরবর্তী মনোনীত রাষ্ট্রদূত 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেব...

বজ্রপাতে গাভির মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় বজ্রপাতে ২টি গাভির ম...

নিজ বাড়ি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোপালগঞ্জ জেলার...

রাফাতে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ই...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা