সান নিউজ ডেস্ক: লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে মানুষ সাধারণত মুখোশ ব্যবহার করেন। মাইকেল জ্যাকসন তার সন্তানদের পার্কে কিংবা কোন বিনোদন স্পটে যাওয়ার সময় মুখোশ পরিয়ে দিতেন যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন।
মুখোশ নিয়ে মুভিও হয়েছে, ‘মুখ ও মুখোশ’। আবার যারা নিজকে আড়াল করে চলেন বা ভিন্নরুপ ধারণ করেন ব্যবহারে, আচারে সমাজে তাদের মুখোশধারি আখ্যা দেন। আর যারা নিজকে একটু আড়ালে রাখতে চান, তাদের সুখবর এনে দিয়েছে হাল সমেয়ের মাস্ক।
২০২০ সালের একেবারে শুরু থেকে এই শব্দটা পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু ছড়িয়ে পড়েনি। তা নিত্তনৈমিত্তিক জীবনের অনুষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। আমরা যেমন লজ্জা নিবারণের স্বার্থে পোশাক পরিধান করি, তেমনই করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে বাইরে বেরোলেই এখন মাস্কের আড়ালে মুখ ঢাকাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
কেউ কেউ অবশ্য এখনও গোটা পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে তাতে পরিষ্কার আগামী দিনে শরীরের বাকি অংশের মতো নাক, মুখকে এই মাস্কের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু এই মাস্কের জন্ম কি হালেই ঘটেছে?
মানে নিদেনপক্ষে শিল্প বিপ্লবের আগে মাস্কের অস্তিত্ব ছিল বলে মনে হয় না।
আসলে আমাদের জানার পরিধিটা হয়ত ভুল। কারণ এই মাস্কের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আজকের নয়। অন্তত ৩ হাজার বছর আগেও যে এই মাস্কের অস্তিত্ব ছিল তার প্রমাণ মিলেছে। জানা গেছে সেই সময় মাস্কের আড়ালে মুখ ঢেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামিল হওয়া ছিল একশ্রেণীর অভিজাত মানুষের কাছে অন্যতম ফ্যাশন।
গোটা ঘটনাটা বরং জানা যাক। চিনের সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু অঞ্চলের শাংজিনদুই এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে গবেষকরা এক বিশেষ ধরনের মাস্ক খুঁজে পেয়েছেন। এই মাস্কটি ছিল সোনার তৈরি! ২৮০ গ্রাম ওজনের এই মাস্কটির ৮৪ ভাগই ছিল খাঁটি সোনার।
গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, এটি ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো সময়ের। পরে তারা বিস্তারিত নথি ঘেঁটে জানতে পারেন সেই সময়ে এই এলাকার অভিজাত মানুষের কাছে সোনার মাস্ক পরা ছিল অন্যতম ফ্যাশন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শাংজিনদুই সহ সিচুয়ান প্রদেশের মানুষজন সেই সময় সোনার মাস্ক পড়তেন। অবশ্যই এই ঘটনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরাই একমাত্র এই মাস্ক পরতে পারতেন।
কারণ তা সব সময় তৈরি হতো সোনা দিয়ে। মজার বিষয় হল এইসব অঞ্চলে অতীতে ব্রোঞ্জের তৈরি মাস্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনা বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, সেই সময় কোন ধাতুর তৈরি মাস্ক কে পরছে তার মাধ্যমে সমাজে মানুষের স্থান নির্ণয় করা হতো।
অর্থাৎ নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরা কখনও সোনার মাস্ক পরতো না। তারা সাধারণত ব্রোঞ্জের তৈরি মাস্ক পরতো। তবে একেবারে নিচুতলার যারা তারা কোনও রকম মাস্কই পরতো না বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
শাংজিনদুই ছিল অতীতে চিনের শু রাজ্যের অন্তর্গত। ইতিহাসের পাতায় খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩১৬ সালে এই রাজ্যের উল্লেখ আছে।
এই রাজ্যটি শিল্প ক্ষেত্রে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হিসেবে পরিচিত ছিল সেই সময়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চিনের সিচুয়ান প্রদেশ এই সোনার তৈরি মাস্ক খুঁজে পাওয়াটা আমাদের কাছে যে একটা অন্যদিগন্ত খুলে দিয়েছে তা বলাই যায়।
সান নিউজ/এমএম