মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : সবেমাত্র মেট্রিক পাশ করে এইচএসসিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতেছিলো মেধাবী ছাত্র নারায়ণ কান্ত গাঙ্গুলী। কিন্তু আর এইচএসসি ভর্তি হতে পারেননি তিনি। পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে নিতে বাবার উপর হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে সারা-জীবনের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে তাকে। পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ বছর বয়সেও করতে হচ্ছে তাকে একা জীবন-যাপন, দাম্পত্য জীবনে সঙ্গী হয়নি কেউ! ৩০ বছর যাবৎ অন্যের কাঁধে ভর করে জীবন-যাপন করছেন তিনি।
আরও পড়ুন : মাটিরাঙ্গায় ৪ বস্তা অবৈধ ঔষুধ উদ্ধার
মুষ্টিমেয় সম্পত্তি ৩০ বছর আগে তাকে ও তার পিতাকে মারধর করে দখলে নিয়েছে স্থানীয়দের ভূমিদস্যু পরিবার। নিজের সম্পত্তি বলতে শেষ সম্বল বসত বাড়িটুকুও দখলে নিতে মরিয়া ঐ একই ভূমিদস্যুরা। শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে দ্বারে- দ্বারে ঘুরে প্রতিকার না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পঙ্গু নারায়ণ কান্ত গাঙ্গুলী।
সোমবার (৮এপ্রিল) দুপুর ১ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের শফিউদ্দিন আহমেদ মিলনায়তনে তার বড় ভাই লক্ষীকান্ত গাঙ্গুলী ও ভাবি অর্চনা রানি গাঙ্গুলীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
নারায়ন কান্ত গাঙ্গুলী টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের স্বর্গীয় নরহরি গাঙ্গুলীর ছোট ছেলে।
আরও পড়ুন : বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল কিশোরের
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার বাবা স্বর্গীয় নরহরি গাঙ্গুলীর কাছে ১৯৮০ সালের দিকে আমাদের পাশের দশত্তর গ্রামের আঃ রহমান মাঝি ও মৃত করিম মাঝি তাদের থাকার জমি না থাকায় আমাদের বাড়িতে থাকতে চাইলে, তাদের ঘর তুলে থাকতে দেয়।
১০ বছর তারা আমাদের বাড়িতে থাকার পর ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে একদিন রাতে করিম মাঝি আমার বাবাকে ঘর হইতে ডেকে নিয়া যায়। পরে বাবা ৩ দিন নিখোঁজ ছিল।
নিখোঁজের বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জানালে ৩ দিন পর আমার বাবা পাগলের মতো আমাদের বাড়িতে ফিরে আসে। তারপর হতে সে সম্পূর্ণ অসুস্থ এবং মানসিক রোগী হয়ে পরে।
আরও পড়ুন : রং নম্বর পরিচয়ে অপহরণ করে ধর্ষণ
সে সময় আমিসহ আমার পরিবারের অন্য ভাইয়েরা ছোট থাকায় আঃ রহমান মাঝি ও করিম মাঝি আমাদের পাচঁগাঁও ও চিত্রকড়া মৌজার সাড়ে ৫ একর সম্পত্তি এক এক করে দখলে নিতে থাকে।
সম্পত্তি দখলে নিতে গিয়ে ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে তারা আমার বাবাকে উঠানে ফেলে আমের চলা দিয়ে বেধক পিটিয়ে জখম করতে থাকলে, আমি আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য শরীরের উপরে গিয়ে পরি।
এ সময় তারা আমাকে আম গাছের চলা দিয়া বাইরাইয়া আমার মেরুদন্ডের হাড় ভাঙ্গে ফেলে। তাদের আঘাতে আমি সে সময়ে পঙ্গু হয়ে যাই। ৩০ বছর যাবৎ আমি পঙ্গু অবস্থায় জীবন-যাপন করছি।
আরও পড়ুন : বাসের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
বর্তমানে আমার বাবা ও চাচাদের সাড়ে ৫ একর সম্পত্তি করিম মাঝির ছেলেরা এবং রহমান মাঝি জোর করে দখল করে রাখছে। আমাদের বসতবাড়ির অধিকাংশ দখল করে নিয়েছে বাকি অংশটুকু দখল করার পাঁয়তারা করছে।
পরে গত ৪ মে করিম মাঝির ছেলে বুলেট মাঝি, রমজান মাঝি, রজ্জব মাঝি, রহমান মাঝির ছেলে রুহল মাঝি, আমির মাঝি তাদের সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের গাছে আম পারতে যায়। আমার ভাই লক্ষীকান্ত গাঙ্গুলী আম পারতে নিষেধ করলে তারা আমার ভাই ও তার স্ত্রী অর্চনা রানী গাঙ্গুলীর উপর হামলা করে মারধর করে এবং ভাবিকে রেপ করার হুমকি দেয় ।
এতে ভাবি অর্চনা রানী গাঙ্গুলী বাদী হয়ে, এ ঘটনায় টঙ্গীবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তারা কোন মামলা নেয়নি।
আরও পড়ুন : রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসে র্যালি
এ ব্যাপারে অর্চনা রানী গাঙ্গুলী বলেন, আমাদের কোন ছেলে সন্তান নাই। ৩টি মেয়ে আছে। বড়কে বিয়ে দিয়েছি। ওরা আমাদের ও আমাদের মেয়েদের প্রতিনিয়ত অশ্লীল গালিগালাজ হুমকি ধামকি দেয়। ওদের ভয়ে আমার এক মেয়েকে হোস্টেলে রেখে লেখাপড়া করাই।
গত ৪ মে ওরা আমাকে মেরে আমার কাপড় ছিঁড়ে ফেলছে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে রেপ করার হুমকি দেয়। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি কিন্তু পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি।
আরও পড়ুন : সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোবারক হোসেন বুলেট মাঝি বলেন, আমরা কাউকে মারিনি। নারায়ণ আগে থেকে অসুস্থ। আম পাড়া নিয়ে তাদের সাথে আমাদের একটু দ্বন্দ্ব হয়েছে। আমরা তাদের সাথে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে বসবাস করছি। আমরা তার বাবার কাছ হতে জমি কিনছি, বৈধ কাগজ আছে।
এ ব্যাপরে টঙ্গীবাড়ি থানার (ওসি) মো. রাজিব খাঁন বলেন, আম পাড়ার ঘটনায় ২ পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। জমির বিষয়ে মামলা রয়েছে। যদি তাদের কেউ রেপ করার হুমকি দেয়। থানায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সান নিউজ/এইচএন