জাতীয়

সাগরের নোনা জোয়ারে চট্টগ্রামে বড় বিপর্যয়

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো :
সাগরের নোনা জোয়ারের প্রভাব চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমানে উপকুল ছেড়ে তা প্রবেশ করেছে অনেক গভীরে। একেবারে নিরবে। যার প্রভাবে বড় বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছে চট্টগ্রামের মানুষ।

এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছে মিঠা পানির মৎস্য চাষে। লবণাক্ততার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে এবার মিঠা পানির রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশসহ নানা প্রজাতীর মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি।

বিপর্যয় শুরু হয়েছে কৃষি উৎপাদনেও। হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসাও। কারণ ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে এখন লবণাক্ততার পরিমাণ অত্যাধিক। হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় ওয়াসার পানি উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরে পানি সরবরাহের আধার হচ্ছে কর্ণফুলী ও হালদা নদী। চট্টগ্রাম মহানগরীর মদুনাঘাট পানিশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে হালদা নদী থেকে এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা শেখ হাসিনা পানিশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী থেকে নগরীর সিংহভাগ পানি সরবরাহ হয়ে থাকে। যেখানে সাগরের জোয়ার আগে তেমন প্রবেশ করত না।

ফলে এসব স্থানে কর্ণফুলীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ০.৫ মিলিগ্রাম আর হালদার পানিতে লবণাক্ততা ছিল ০.২৫ মিলিগ্রাম পার লিটার। সেই জায়গায় গত ২৬ মে বুধবার হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা ছিল ৩ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম পার লিটার। আর কর্ণফুলী নদীতে ছিল ৪ হাজার মিলিগ্রাম পার লিটার। যা সহনীয় মাত্রার কয়েকহাজার গুণ বেশি। ফলে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।

বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাদেক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় সাগরের জোয়ারের পানি আগে হালদা নদীর মোহনা পর্যন্ত পৌছাত। প্রবল জোয়ার হলেও পানি শোধনাগার পর্যন্ত তেমন যেত না। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগরের জোয়ার কর্ণফুলী নদীর শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। পৌছে গেছে হালদা নদীর অনেক উজান পর্যন্ত। ফলে উৎপাদিত পানিতে লবণাক্ততা মারাত্নকভাবে বেড়েছে।

আর এই পানি ব্যবহারে জনস্বাস্থ্যে মারাত্নক ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে। যা চট্টগ্রামের জন্য বড় বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উজান থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়লে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদেও তেমন পানি নেই। এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

এদিকে নোনা জোয়ারের প্রভাবে মারাত্নক বিপর্যয় ঘটে গেছে মিঠা পানির জলাধার দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে। এ নদীতে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রবৃষ্টির সাথে ডিম ছাড়ত কার্প জাতীয় মা-মাছ। কিন্তু এবার পর পর তিনটি তিথি পার হয়ে গেলেও ডিম ছাড়েনি মা মাছ। গত ২৫ মে মঙ্গলবার রাতে শুধুমাত্র নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। যা থেকে ৬ হাজার ৫০০ কেজির মতো ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে সংগ্রহকারীরা।

এ জন্য হালদা নদীর পনিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, মিঠা পানিই হালদা নদীর চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সাগরের নোনা জোয়ার প্রবেশ করে নদীর সেই বৈশিষ্ট্য এবার নষ্ট করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, হালদা নদীতে আগের হিসেবে যেখানে লবণাক্ততা ছিল ১ পিপিটি, সেখানে এবার আমরা পেয়েছি ৩৬-৪০ পিপিটি। যার কারণে দু‘বার নমুনা ডিম ছেড়েও পর্যাপ্ত ডিম ছাড়তে পারেনি মা মাছ। অথচ গত বছরও হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়। যার মূল্য কয়েকশত কোটি টাকা।

তিনি বলেন, লবণাক্ততার কারণে মা মাছ শুধু ডিম ছাড়েনি তা নয়। মিঠা পানির অভাবে হ্যাচারিতেও ২-৩ হাজার কেজি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। ডিমের মানের উপর প্রতি ৪০-৬০ কেজিতে এক কেজি রেণু উৎপাদিত হয়। এক কেজি রেণুতে গড়ে আড়াই লক্ষ পোনা থাকে। যার দাম ৪-৫ কোটি টাকা।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, নদী থেকে সংগৃহীত ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে মিঠা পানির গুরুত্ব অপরিসীম। কুয়াতে মিঠা পানি ব্যবহার করে ডিম ফোটাতে হয়। কিন্তু এবার হ্যাচারিগুলোতে মিঠা পানির আকাল দেখা দেয়। তাই নদীর লবণাক্ত পানি ব্যবহার করায় কুয়াগুলোতে ২-৩ হাজার কেজি ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, প্রতি বছর হালদার পানি দিয়ে হ্যাচারিতে ডিম ফোটানোর কাজ চলে। এবার নদীর পানি সহনীয় মাত্রার ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ত হয়ে যাবে তা কারোর ধারণায় ছিল না। এতে করে মিঠা পানির সংস্থান রাখা হয়নি। মিঠা পানির সংস্থান করা গেলে এতগুলো ডিম নষ্ট হতো না।

তিনি বলেন, শুধু হালদা নদীতে নয়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, কক্সবাজারের চকরিয়া, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকুলীয় এলাকায় হ্যাচারিগুলোতেও লবণাক্ত পনির কারণে কোটি টাকার মাছের পোনা মারা গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে অনেকেই হ্যাচারি বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী, সাঙ্গুসহ বিভিন্ন নদীতে মাছের উৎপাদন এখন শূণ্যের কোটায়।

শুধু মৎস্য ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে তা নয়, লবণাক্ততার কারণে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর দুই পাড়ের ফসলেরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেত-খামার দেখে মনে হচ্ছে কেউ অ্যাসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা শামিম আহমেদ হেলাল।

তিনি বলেন, এ অবস্থা বিরাজ করলে খুব শীঘ্রই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্যভান্ডার রাঙ্গুনিয়া গুমাইবিল, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ির সবকটি বিলের চাষাবাদেও বিরুপ প্রভাব পড়বে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদনে মারাত্নক সংকট সৃষ্টি হবে।

সান নিউজ/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা