শিল্প ও সাহিত্য
জাপানের গল্প - ৮

সাংবাদিকতার শুরু

পি আর প্ল্যাসিড

মিতুল ছাত্র থাকা অবস্থায় একসময় দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন স্মরণিকায় লেখালেখি করেছে। প্রতিদিন নিয়মিত বাংলা পত্রিকা পড়েছে। এমনকি রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় গিয়ে গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতার বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়েছে অথচ জাপান আসার পর এখানে কোন বাংলা পত্রিকাই চোখে দেখে না সে।

জাপানে প্রতিদিন চলার পথে যা কিছু-ই দেখে সবই তার কাছে নতুন মনে হয়। এসব থেকে অনেক কিছু তার শেখার আছে মনে করে। নিজের মনের ভাব এমন হয় যে পারলে প্রতিদিনের বিষয় সে লিখে রেখে দেশের মানুষকে জানাতে চায়। তার এসব লেখা পড়ে দেশের মানুষ জাপান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবে বা শিখতে পারবে। কিন্তু সে কোথায় কিভাবে লিখে পাঠাবে সে নিয়েও চিন্তা করে।

কোন এক ছুটির দিন কফি হাউজে বসে তার চোখে জাপান এবং জাপানিদের নিয়ে বেশ বড় একটি লেখা লিখে দেশের এক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের ঠিকানায় পাঠায়। জাপানের উপর লেখা তৈরি করে পাঠানোর পর সেটি ছাপা হয়েছে কিনা সে তা জানার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো না থাকার কারণে সে সহজে জানতে পারে না। একদিন সে তার এক পরিচিত জনের কাছ থেকে দেশ থেকে চিঠি পায়। সে চিঠিতে জানায়, লেখার সাথে তার ঠিকানা প্রকাশ করেছে। তাই সেই ঠিকানা পেয়েই সে মিতুলকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখা। একইভাবে তার আরো কয়েক শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, দেশের ম্যাগাজিনে তার লেখা পড়ে অনেকেই এই জাপান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছে। এজন্য মিতুলকে ধন্যবাদ দিয়ে এভাবে আরো নিয়মিত লেখা পাঠাতে বলে তাকে।

মিতুল চিঠি পাবার পর, প্রবাস থেকে দেশের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তার নাম প্রকাশের কথা শুনে অনেক উৎফুল্ল হয়। এরপর একদিন টোকিওর মাচিয়া শহরে বাংলাদেশিদের একটি দোকান আছে শুনে সে সেখানে সময় করে যায় ঘুরতে। উদ্দেশ্য, সেখানে গেলে বাংলাদেশি কোনো খবরের কাগজ বা কোনো সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে নিয়ে আসা।

পরিচিতদের কাছ থেকে মাচিয়া শহরের সেই দোকানের ঠিকানা নিয়ে একদিন সন্ধ্যার কিছুটা আগে মিতুল সেই দোকানে গিয়ে হাজির হয়। দোকানে যেতেই দেখে টেবিলের উপর দেশের অনেকগুলো বাংলা পত্রিকা আর ম্যাগাজিন ভাঁজ করে রেখে দিয়েছে। অনেকদিন পর এক সাথে এতোগুলো বাংলা পত্রিকা দেখে অস্থির হয় মিতুল। সবগুলো পত্রিকা একসাথে পড়ে শেষ করার ইচ্ছে হয় তার। এরপর পত্রিকাগুলো ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মিতুল। পত্রিকা দেখে মূহুর্তের মধ্যে ভাবে, যেন সে এখন দেশেই আছে।

পত্রিকাগুলো আবার টেবিলে রেখে একটার পর একটা পত্রিকা উল্টাতে থাকে। পত্রিকা হাতে নিয়ে ভাবে, প্রিয় দেশ আর দেশের মানুষ সবাই যেন এখন তার সামনে। পত্রিকার প্রধান সংবাদ শিরোনাম আর সংবাদের সাথে দেয়া ছবি দেখে মনে মনে প্রশ্ন করে, প্রিয় বাংলাদেশ তুমি কেমন আছ? যেই দেশ দীর্ঘদিন ছিল একজন স্বৈরাচার শাসকের হাতে সেই দেশ সম্প্রতি স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন থেকে বাংলার মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে। মিতুল কল্পনা করে, কেমন হবে দেশে সেই গণতন্ত্র?

দোকানের ক্যাশে বসা এক লোক এগিয়ে এসে মিতুলকে বলল, ভাই, আপনাকে আগে কখনো তো এই দোকানে দেখিনি। নতুন এসেছেন বুঝি জাপান?
মিতুল উত্তর করে, কয়েক মাস হতে চলেছে এসেছি। তবে আপনাদের এই দোকানে আজই প্রথম এসেছি। বলে মিতুল চুপ করে পত্রিকার পাতা উল্টাতে থাকে। এ সময় সেখানে আরো একটি বাংলা পত্রিকা দেখতে পায় মিতুল যা দেখে সে বুঝতে পারে এটি বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো পত্রিকা নয়। হাতে নিয়ে উল্টিয়ে ভালো করে সেখানে লেখা ঠিকানা দেখে বুঝতে পারে সেটি ছিল জাপান থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা। পত্রিকাতে তেমন আকর্ষণীয় কোনো সংবাদ না থাকলেও পত্রিকার পাতায় লেখাগুলো বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। স্থানীয় পত্রিকা দেখে মিতুল আরো বেশি আপ্লুত হয়। জাপানের মতো দেশে বাংলাদেশিরা বাংলায় পত্রিকা প্রকাশ করে এটা তার জন্য অনেক বেশি অবাক করার বিষয়। বলা যায় অপ্রত্যাশিত তার কাছে এটি।

কারণ বিগত কয়েক মাস যে ধরণের বাংলাদেশিদের দেখা সে পেয়েছে তারা এই বাংলা পত্রিকার গুরুত্ব দেয়া দূরের কথা অধিকাংশই তাদের ঠিক মতো নিজের নাম লিখতে পারে না। এমন শ্রেণীর লোকের সংখ্যা বেশি। তাই তারা এমন কাজ করতে পারে না। বাংলা পত্রিকাটি দেখে ভাবে জাপানে তাহলে এমন সংস্কৃতি মনা বাংলাদেশি আছে। ইচ্ছে হয় তার এই পত্রিকার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে পরিচিত হবার। তাই মিতুল দোকানদারের কাছে এই পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক সম্পর্কে জানতে চায়। সে সাথে এর সাথে কারা জড়িত এবং তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে কিনা সেই বিষয়েও জানতে চায় মিতুল।

দোকানদার এর সাথে জড়িত সবার সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে মিতুলের নাম জানতে চাইলেন। মিতুল তার নাম বললে দোকানদারও তার নিজের নাম সরূপ বলে বললেন, আপনি এই পত্রিকার সাথে জড়িতদের সম্পর্কে জানার এতো আগ্রহী কেনো? প্রশ্ন করলে মিতুল বলল, আমি দেশে থাকাকালে এসব লেখালেখির সঙ্গেই জড়িত ছিলাম। বিদেশের মাটিতে বাংলা শিল্প সাহিত্য নিয়ে কাজ করা এটা তো বিশাল ব্যাপার। যারা এমন কাজ করেন তাদের সম্মান করা উচিত। সবার পক্ষে তো আর এসব করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া চাইলেই সবার দ্বারা এসব করা সম্ভবও নয়। আমি মনে করি, যারা এ ধরনের কাজ করেন তারা সাধারণ কেউ নয়। সুতরাং তাদের সাথে জড়িত হওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।

দু'জনের মধ্যে দেশের শিল্প সাহিত্য নিয়ে আলাপ বেশ জমে উঠে। মিতুলের নাম শুনে সরূপ বললেন,- আপনার এই নামটি আমার কেনো যেন খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। কোথায় যেন আপনার এই নামটি শুনেছি বা দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। মিতুল বলল,- আপনার দোকানে যেহেতু দেশের পত্র-পত্রিকা আনা হয়, হতে পারে দেশের কোন ম্যাগাজিনে দেখে থাকতে পারেন। আমি জাপান নিয়ে দেশের কিছু ম্যাগাজিনে প্রবাস থেকে বিভাগে নিয়মিত লিখছি। এমনও হতে পারে, আপনি আমার সেই লেখা পড়ে থাকতে পারেন, তাই আমার এই নামটি আপনার কাছে পারিচিত মনে হচ্ছে।

মিতুলের কথা শুনে সরূপ চিৎকার দিয়ে এগিয়ে এসে মিতুলকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আরে আমরা তো আপনার কথা প্রায়ই বলাবলি করি। আপনি আজকে আসছেন, ভালো হয়েছে। একটু পরেই এই পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক আসবে এখানে। এখন রাস্তায় আছে।
এ কথা বলাতে মিতুলের আনন্দ হবার পরিমাণ বেড়ে যায়। তার ভিতর যেন নতুন করে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। সে ভাবে, এ যেন তার জন্য নতুন এক কাজের দুয়ার খুলে যায়। অনেকটাই, মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।
এরপর আগ্রহ নিয়ে প্রত্যাশিত সেই লোকের অপেক্ষা করে মিতুল। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয় না। এসময় সরূপ মিতুল সম্পর্কে বিস্তারিত যা জানার সব জেনে নেয়। একসময় দোকানের বাইরে কাছেই ভ্যান্ডিং মেশিন থেকে একটি কফির ক্যান কিনে মিতুলকে দিয়ে বললেন,- আপনার লেখা আমি নিয়মিত পড়ি। খুব ভালো লিখেন আপনি।

সরূপের মুখে মিতুল তার লেখার প্রশংসা শুনে খুশি হলেও সেটা আর প্রকাশ করে না। মিতুলের পরিচয় জানার পর সরূপ বললেন,- আমিও এই পত্রিকার সাথে জড়িত। আমরা আরো আলোচনা করছিলাম কিভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করে আমাদের সাথে জড়িত করতে পারি। কিন্তু আপনার কোনো কন্টাক নাম্বার আমাদের কারো জানা না থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে এটাও ঠিক যে আমরা আপনাকে খুঁজছিলাম।

এ সময় জাপানের সেই বাংলা পত্রিকার সম্পাদক এবং তার সাথে আরো এক বাঙালি দোকানে আসতেই সরূপ বলছেন,- এই যে মিষ্টার, আপনার প্রত্যাশিত লোক এসে গেছে। বলেই মুখ উঁচু করে বললেন,- এই হচ্ছে পত্রিকার সম্পাদক আর সাথে উনি হচ্ছেন এই দোকানের মালিক। আমি হচ্ছি এখানকার কর্মচারী।
মিতুল লোক দু'জনের সাথে পরিচিত হয়। এর মধ্যেই একদল লোক এসে দোকানে ভিড় করে। সম্পাদক আর দোকানের যিনি মালিক তারা দু'জনকে মনে হলো দোকানের ভিতর এসে ভিড় জমানো লোকগুলোকে কিছুটা এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তাই সম্পাদক মিতুলকে অনেকটা তাচ্ছিল্য করে বললেন,- তুমি মিয়া আইছো জাপান, আমগো লগে যোগাযোগ করো না। এখন থেকে আমগো লগে যোগাযোগ করবা, বোঝছ। কিছু করলে এক সাথে থাহ। বলেই বললেন,- চলো তোমারে লইয়া বাইরে যাই, একটু বিয়ার খাই। এরপর প্রশ্ন করলেন,- তুমি বিয়ার খাও তো?

লোকটি এমন ভাবে বিয়ার খাওয়ার কথা বললেন, যেন মিতুল জীবনে কখনো বিয়ার খাওয়া তো দূরের কথা বিয়ারের কথা কখনো শুনেছে কিনা সেটাই ইনডাইরেক্টলি জানতে চাইলেন। লোকটির এমন তিরষ্কার মূলক কথা শুনে মনে মনে বলে,- আরে মিয়া, আমি সেই ষোল বছর বয়স হতেই দেশে হুইস্কি খাই। বিয়ার আমার কাছে অনেক হাল্কা মনে হয় কিন্তু মিতুল আর তাকে মুখ ফুটে কিছু বলে না। লোকটির এমন করে কথা বলায়, তখনই মিতুল বুঝে যায়, লোকটি যে বেশি সুবিধার হবে না। ভাব দেখে মনে হয়, নিজেকে এই জাপানে বাঙালিদের মাঝে সম্রাট মনে করে।

দোকানের ভিতর লোকগুলো একেবারে সদর ঘাটের পাবলিকদের মতো জোরে জোরে কথা বলছে আর এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে দেখে দোকানের মালিক সুন্দর করে মিতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,- ভাই, আপনার সাথে এখানে আমাদের কথা বলা হবে না। চলেন বাইরে যাই, কোথাও বসে একটু গলা ভিজাই আর শিল্প সাহিত্যের কথা বলি গিয়ে। মিতুল দোকানের মালিককে এমন সুন্দর কবিতার ভাষায় কথা বলতে শুনে মনে করে, এই তো সে সমগোত্রীয় লোক পেয়ে গেছে। তাই তাদের দু'জনকে সাথে নিয়ে বাইরে কাছেই মাচিয়া সাবওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি একটি ২৪ ঘণ্টার কনভেনিয়েন্স দোকানে গিয়ে প্রথমে তিনজনের জন্য তিন ক্যান বিয়ার কিনে নেন দোকানের মালিক।

এরপর দোকানের বাইরে রাস্তার ধারে গোল করে দাঁড়িয়ে বিয়ারের ক্যান হাতে নেয়। তিনজনই প্রায় একই সময় বিয়ারের ক্যান খুলে চিয়ারস করে। অন্য দুজন তাদের মুখে বিয়ার ঢালতেই মিতুল তার বিয়ারের অর্ধেক এক চুমুকে প্রায় শেষ করে বিয়ারের ক্যান একটু ঝাঁকা দিয়ে দেখে আর বাকি আছে কতটুকু বিয়ার। এমনভাবে সে বিয়ার ডগডগ করে খায় যেন তার গলা বিয়ার খাবার জন্য অনেকটা শুকিয়েই ছিল।

মিতুলের বিয়ার খাওয়া দেখে পত্রিকার সেই সম্পাদক খেই মেরে বললেন,- ওই মিয়া, বিয়ার কী মানুষ এমন কইরা খায়? আস্তে আস্তে খাও, না হইলে আবার দেখবা মাতাল হইয়া বাসায় ফিরা যাইতে পারবা না।
এরপর বিয়ার খেতে খেতে কথা হয় তাদের মাঝে। পত্রিকা প্রকাশ করা এবং পত্রিয়ায় লেখালেখি নিয়ে। তারা ফাইনালি কথা বলে মিতুল কিভাবে পত্রিকার সাথে জড়িত হতে পারে তা নিয়ে। প্রবাসে বাংলায় প্রকাশিত পত্রিকার বিষয়ে মিতুলও যে কোনো ধরনের কাজে সহযোগিতা করার কথা ব্যক্ত করে। এজন্য তাকে তার কাজ করতে সুবিধার জন্য পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনের কোথাও স্থান দিতে বলে।

মিতুলের সাথে যেহেতু তাদের নতুন পরিচয়, তাই তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার বিষয়টি প্রকাশ করে সম্পাদক বললেন, তুমি তোমার মতো কাজ করতে থাকো। লিখতে শুরু করো এখনই। একসময় তামার নাম আমরা পত্রিকাতে ছেপে দেবো। সমস্যা নেই।

মিতুল কিছুটা লোকটির কথা বলায় বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন আপনি কি সবাইকেই এভাবে তুই তুমি সম্ভোধন করে কথা বলেন? এটা কী আপনার আদবের মধ্যে পড়ে নাকি? কথা শুনে তো মনে হয় আপনি এখানে অন্য সবাইকে আপনার থেকে অনেক অযোগ্য মনে করে কথা বলেন।

মিতুলের এমন কথায় সম্পাদক হোচট খেয়ে বললেন, আরে আপনি এতে মাইন্ড করছেন? এটা তো আরো আন্তরিকতার ডাক।
এটা ভারতের মানুষেরা করে। আপনি কি ভারতের নাকি বাংলাদেশের। বাংলাদেশের হলে, আমাদের দেশি স্টাইলে বলা ভালো না? দেখবেন মানুষ এতে আপনার উপর খুশি হবে, সম্মানও করবে। আপনি যেভাবে পরিচয়ের শুরুতেই তুই তুমি বলে মানুষকে সম্ভোধন করেন এটাতে তো মনে হয় মানুষকে আপনি মানুষই মনে করেন না। এভাবে মিতুল তাকে অপমান করার স্টাইলে কথা বলবে বিষয়টি ভাবতে পারেনি। তাই অনেকটা নেশার ভাব করে এড়িয়ে যায়। মিতুল বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারে। এরপর সেদিন তাদের কাছ থেকে বিদায় নেয় মিতুল।

পরের মাসে পত্রিকার নতুন সংখ্যা প্রকাশ হলে মিতুল দেখে পত্রিকায় তার নাম ছাপা হয়েছে। কিন্তু সেই নামের পাশে তার যে পজিশন দেয়া হয়েছে সেটার বেলাতেও সম্পাদক তার সাথে কোনো কিছু পরামর্শ না করে ইচ্ছে মতো একটা পদবী বসিয়ে দেন। এটা দেখেও মিতুল বুঝতে পারে লোকটি যে তাকে অবমূল্যায়ন করছে বা অপমান করতেই এমনটা করেছেন। বিষয়টি দেখে মুখে সে আর কোনো কিছু বলে না তাকে। নীরবে কিভাবে পত্রিকার কাজে সহযোগিতা করা যায় সেই চিন্তা করে।

মিতুল জানে, বিনা পারিশ্রমিকে পত্রিকার জন্য কাজ করলে একদিন না একদিন মানুষ তার কাজের মূল্যায়ন করতে বাধ্য হবে। যদি তার কাজ হয় সততা এবং আন্তরিকতার সাথে এবং উদ্দেশ্য যদি হয় সুন্দর, তাহলে একদিন আগে বা পরে সে সফল হবেই কিংবা নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর পথকে কেউ তাকে ঠেকাতে পারবে না।
এরপর মিতুলের জাপান থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকার বিষয়টি মাথায় রেখে দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠতি বাংলাদেশিদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। যেখানে যে জমায়েতই হয়, মিতুল যায় সেখানে এবং তা লিখে পাঠায় দেশের বিভিন্ন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে প্রকাশ করার জন্য। সেগুলো ছাপাও হতে থাকে প্রতি সপ্তাহের ম্যাগাজিনে। মাচিয়ার সেই দোকানে এসব ম্যাগাজিন মাসে একবার দেশ থেকে একত্রে সব আনা হয়, তখনই সে তার পাঠানো লেখা গুলো ম্যাগাজিনের প্রবাস থেকে কলামে ছাপা অক্ষরে দেখতে পায়।

জাপানে দেশ থেকে এসব ম্যাগাজিন আসলে পুরো জাপানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের বাংলা খাবার এবং মসলার সাথে পৌঁছে দেয়া হয় দোকানের পক্ষ থেকে। এতে ম্যাগাজিনে মিতুলের জাপান সম্পর্কে লেখা প্রবাসী অনেকেই পড়ে। এভাবে মিতুল হয়ে উঠে জাপানে বাঙালিদের মাঝে পরিচিত জন। এতে আস্তে আস্তে সবাই তাকে এখানে সাংবাদিক হিসেবে ডাকা শুরু করে। কোথাও গেলে মিতুলকে দেখে বাঙালিরা বলাবলি করে, ঐযে সাংবাদিক আসছে। এমনকি সেখানে তাকে সবাই অনেকটা আলাদা চোখে দেখতে শুরু করে, সম্মানও করে বেশ। মিতুলের এতে অনেক ভালো লাগে। মিতুলও নিজেকে একসময় সাংবাদিক ভাবতে থাকে। পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার স্বপ্ন দেখে পুরোপুরি ভাবে সে জাপানে।
এভাবেই মিতুল জাপানে হয়ে উঠে বাংলাদেশি কমিউনিটেতে একজন পরিচিত সাংবাদিক।

(চলবে)

লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বড়াইগ্রামে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের উদ্বোধন

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামে বোরো ধান, চাল ও গম সংগ্...

ঢাবিতে ‘আগুনমুখা’র নেতৃত্বে ফাহাদ-সামদানী

নুসরাত জাহান ঐশী: বাকিবিল্লাহ ফাহাদকে সভাপতি ও মু. তানযীম সা...

খাগড়াছড়িতে চোলাই মদসহ নারী আটক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে...

হরিপুরে একদিনে ২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: এসএসসি পরীক্...

ভালুকায় তিন রাস্তার উদ্ধোধন

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩টি নবনি...

সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও...

সজনে পাতার গুণাগুণ

লাইফস্টাইল ডেস্ক: অলৌকিক গাছ নামে...

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা যেন চলতে না পার...

ইন্দোনেশিয়ায় ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় নিহত ৫৮ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ায় ভ...

নির্বাচন ফেলে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা