নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে কয়েক দফায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। শুরুর দিকে এটি সঠিকভাবে মানলেও পরে তা ভিন্ন রূপ নেয়। অসতর্কতা ও সরকারের দেয়া বিধি-নিষেধ অমান্য করেই চলাফেরা করে লোকজন। এ অবস্থায় গত এক মাস ধরে ভাইরাসটিতে প্রতিদিনের সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার নতুনভাবে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। আগের থেকে এবারের লকডাউন সম্পূর্ণ ভিন্ন।
লকডাউন বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে মাঠে নেমেছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের তৎপরতায় সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা। কিন্তু গলিগুলোতে দেখা গেছে ভিন্নতা।
রাজধানীর প্রায় প্রত্যেক গলিতেই ছিল লোকজনের উপচেপড়া ভিড়। এর পাশাপাশি দোকানের শাটার ওঠা-নামার খেলা তো আছেই। অনেকেই বলছেন রাস্তায় কেমন লকডাউন তা দেখতে বেরিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সারাদিন পল্টন, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, রামপুরা ওয়াপদা রোড, পূর্ব রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি গলি এলাকায় এসব দৃশ্য দেখা যায়। ওইসব এলাকার রাস্তায় কিছু প্রাইভেট যানবাহনের পাশাপাশি রিকশা চলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে দেখা যায়।
নয়াপল্টন মসজিদ গলিতে দেখা যায় বেশ কিছু দোকানের অর্ধেক শাটার খোলা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শাটার নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে বুঝাই যাচ্ছে না, দোকানের ভেতর কেউ আছে। এ ছাড়াও সবজিসহ নানা রকম জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব জিনিসপত্র ঘিরে প্রত্যেক দোকানেই লোকজনের ভিড় দেখা যায়।
এই ব্যাপারে পল্টনের লিওন কবীর জানান, আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। লকডাউনের জন্য অফিস বন্ধ। তাই বিকেলে রাস্তায় দেখতে এসেছি কেমন কড়াকড়ি।
ফকিরাপুল বাজারে দেখা গেছে আরও ভিন্ন রূপ। সেখানে প্রায় প্রত্যেক দোকানেই খোলা ছিল। এ বিষয়ে এক দোকানি বলেন, ‘এসব লকডাউন-টকডাউন কিছুই না। কেউ মানে না। সকাল থেকে আগের মতোই দোকান খোলা রেখেছি। বেঁচাকেনাও হচ্ছে।’ তবে, সন্ধ্যার পরপরই বাজারের সব দোকান বন্ধ করে ফেলা হয়।
বিভিন্ন এলাকায় খাবারের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসার ব্যবস্থা ছিল না। অনেকেই দোকানের ভেতর থেকেই খাবার-বিক্রি করেছেন। ওলি-গলিতে জনসমাগম করে লকডাউন বিষয়ে আলোচনা করতেও দেখা গেছে অনেককে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৩০১ জন। এ থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৩ জন।
এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬ জনের। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
সাননিউজ/এনএম/এফএআর