অপরাধ

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া আসলাম আবারও খুনের মামলায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসলাম ফকিরের ফাঁসির সাজা ২০১৫ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ২০১৭ সালে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন বিপুল বিক্রমে। তবে তিন বছর পর আবারও আরেকটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়েছেন সেই আসলাম ফকির।

এবার ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহীদ মাতুব্বরকে খুনের সরাসরি অভিযোগ আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে। এই হত্যা মামলায় আসলাম ফকিরকে প্রধান আসামি করে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর আগে একই উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব আলী মিয়াকে হত্যার ঘটনায় তার ফাঁসির দণ্ড হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্যাহর সহযোগিতায় আসলাম ফকির শুধু ফাঁসির সাজা থাকে রক্ষা পাননি, মুক্তি পেয়েছিলেন কারাগার থেকেও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, তখন তো তারা বলেছিলেন আসলাম ফকির মানসিক রোগী। যদি আসলাম ফকির এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ তো রীতিমতো প্রতারণা!

ফরিদপুরের পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন আসলাম। আওয়ামী লীগের নেতা কাজী জাফরউল্যাহর কাছের লোক হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত। ওই আসনের স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত বর্তমান সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) সমর্থকদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায় লক্ষ্মীপুর গ্রামে বাড়ির বৃষ্টির টিনের পানি আরেক বাড়িতে পড়া নিয়ে আবারও দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর আসলাম ফকির ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে একই এলাকার শাজাহান মাতুব্বরের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে আসলাম ফকিরের লোকজন শাজাহান মাতুব্বরের সমর্থক শহীদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। শহীদ পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে মারা যান। তিনি একজন কৃষক ছিলেন। তিনি নিক্সনের কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসলাম ফকিরের নেতৃত্বে এত বড় সংঘর্ষ হয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি যা ইচ্ছা তাই করছেন। তিনি থানা-পুলিশ কাউকে পরোয়া করেন না। তার বিরুদ্ধে আগেও থানায় অভিযোগ এসেছে। মূলত স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আসলাম ফকির পলাতক। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।

এ ঘটনায় শহীদ মাতুব্বরের চাচা শাজাহান মাতুব্বর ভাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে আসলাম ফকির। তার ইন্ধনে ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আমার ভাতিজা খুন হয়েছে। আসলাম ফকির যত দিন কারাগারে ছিল, তত দিন গ্রামে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।’

ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও তাঁর স্ত্রী সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহর সঙ্গে এলাকার নানা কর্মসূচিতে দেখা গেছে আসলাম ফকিরকে। স্থানীয় লোকজন জানান, আসলামের ইচ্ছা তিনি দলের নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, সাংসদ মুজিবুর রহমানের লোকেরা নিজেরা মারামারি করেছেন। আসলাম ফকির নির্দোষ। তার কোনো লোক ওখানে যাননি। সাংসদ এখন নৌকার সমর্থকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। পুলিশ তাহলে কেন মামলা নিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংসদ এখন ক্ষমতায়। পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী সবাই তাদের কথা শোনে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজী জাফরউল্যাহ আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন।

স্থানীয় সাংসদ বলেন, আসলাম ফকিরের ফাঁসির সাজা মওকুফের সময় তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু কাজী জাফরউল্যাহ সংবর্ধনা দিয়ে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন, তার কত ক্ষমতা। তিনি কীভাবে আসলাম ফকিরকে মুক্ত করে এনেছেন। ওই সাহসই আজ আরেকটি খুন করতে তাকে উৎসাহিত করেছে।

আইনজীবী শাহদীন মালিক সামগ্রিক ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রযোজ্য নয়। আইন তা বলে না। প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার করা লজ্জাজনক। দোষী যেন এবার শাস্তি পান, তা নিশ্চিত করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা উচিত।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের আসলাম ফকির ২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব আলী মিয়াকে হত্যা করেন। দুজনই পর্যায়ক্রমে ওই ইউপির চেয়ারম্যান হয়ে আসছিলেন । জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসলাম ফকিরকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টে রায় বহাল রাখেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ মে খুনের দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন আসলাম ফকির। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর তা নামঞ্জুর হয়। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিন ধার্য হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু ১২ নভেম্বর বন্দী আসলাম ফকির এমন আচরণ শুরু করেন, কারাগারের নথির ভাষায় যেটা ছিল ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘অসুস্থতা’। ফলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়। ওই দিনই আসলামের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় প্রাণভিক্ষার আবেদন গৃহীত হলে আসলামের দণ্ড হ্রাস করা হয় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিশেষ দিবসে বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা লাভের সুযোগ নিয়ে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক চিঠি (ডিও লেটার) দেন সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহ। কিন্তু সে সময় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ১৩ বছর ২ দিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম। সূত্র: প্রথম আলো

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তরুণ প্রজন্ম কোন নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, "আমরা কোন দলের...

২১ বছর ধরে শিশুশিক্ষায় তালপাতার পাঠশালা

শিশুশিক্ষার হাতে খড়ির প্রচলন হিসেবে একটা সময় ছিলো তালপাতার প্রচলন। আর লেখনী হ...

সুন্দরবনের উপকূলে বিলুপ্তির পথে মাটির মটকি

গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্ব ঐতিহ...

সুন্দরবনের উপকূলে ইলিশের সুবাস

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্য ভান্ডার...

নিখোঁজের দুইদিন পর খালে মিলল প্রতিবন্ধী শিশুর মরদেহ

সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের মেঘা খাল থেকে ওই শি...

হেলমেট-মাক্স ঢেকে নিষিদ্ধ আওয়ামিলীগের ঝটিকা মিছিল

মানিকগঞ্জে হেলমেট-মাস্কে মুখ ঢেকে আবারো প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করেছে কার্যক্রম...

গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক পরিবেশ বিনষ্ঠের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক...

বাঁশ ও বেত শিল্পে ধ্বস

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্...

তপু ও ধলা পাহাড়ের হৃদয়স্পর্শী সম্পর্ক

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান আলী (র:) মাজারের দিঘিতে থাকা কুমিরের সম্পর্কে। ম...

লক্ষ্মীপুরে আরএসডি'র কর্মকর্তাদের জাগ্রত করতে প্রতীকী জানাযা

লক্ষ্মীপুরে খানাখন্দভরা সড়কগুলো মেরামতের উদ্যােগ না নেওয়া এবং সড়ক ও জনপদের ঘু...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা