আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। এমনকি স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে সেনা পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাশিয়ার সমালোনায় সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা মোতায়েনকে কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং যুদ্ধের অজুহাত সৃষ্টিতেই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
রয়টার্সে জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশই রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে বিদমান সকল পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে চীন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এবং একইসঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষণার পরিপন্থি।
আর পড়ুন: এখন দেখা যাবে কারা আসল বন্ধু
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, রাশিয়ার নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সমগ্র ইউক্রেন, সমগ্র ইউরোপ এমনকি সারা বিশ্বেই মারাত্মক ফলাফল দেখা দেবে। ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় দেড় লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি।
যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় অঞ্চল দু’টি সেনা পাঠানোরও ঘোষণা দেন তিনি। পুতিনের দাবি, রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চল দু’টিতে শান্তি রক্ষার কাজ করবে।
সোমবার রাতের বৈঠকে লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন মিনস্ক চুক্তিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি (পুতিন) যে এখানেই থেমে যাবেন, সেটি আমরা বিশ্বাস করি না।
অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আমরা এখনও কূটনৈতিক পথ খোলা রেখেছি। যাইহোক, ডনবাসে (দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক) নতুন করে রক্তপাত হতে পারে, এমন কোনো কিছু আমরা চাই না।
আর পড়ুন: টিকার প্রথম ডোজ চলবে
তিনি সব পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমন ও কূটনৈতিক পন্থায় সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান।এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর অঞ্চল দু’টির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকেও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটি। এএফপি জানিয়েছে, ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলে যেকোনো ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ, ব্যবসা বা অন্য কোনো ধরনের লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তার এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেউ এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে তাকেও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া একজন মার্কিন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মঙ্গলবার আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তিনি দাবি করেন, ওয়াশিংটন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এগুলো তা নয়।
সাননিউজ/এমআরএস