জাতীয়

যে যেভাবে পারছেন ঢাকা ছাড়ছেন

রাসেল মাহমুদ : সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। এরমধ্যেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এ বছরের ঈদযাত্রা সুখকর হচ্ছে না। বরং পথে নানা ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। এতে একদিকে যেমন বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও প্রবল হচ্ছে। এরপরও কোনোভাবেই ঈদ যাত্রা বন্ধ করতে পারেনি সরকার। বাধ্য হয়ে ফেরি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত মাসের ১৪ তারিখ থেকে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। যা চলতি মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এ সময়ে বন্ধ রাখা হয় দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। তবে জেলা শহর ও সিটির গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়া, মোটরবাইক, সিএনজি, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহন শুরু থেকেই চলছিলো। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ঈদ যাত্রায় এসব বাহনই প্রধান হয়ে উঠেছে ঘরমুখো মানুষদের কাছে।

গত রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধনীর বিভিন্ন প্রবেশপথ ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ঈদ যাত্রার নানা কৌশলের চিত্র। অনেকটা যে যেভাবে পারছেন ঢাকা ছাড়ছেন অবস্থা। এ সময় পায়ে হেঁটে, অধিক ভাড়া দিয়ে, পিকআপ ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে এমনকি নদীতে ট্রলার যোগেও ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।

রোববার রাজধানীর গাবতলী এলাকায় গিয়ে হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষের দেখা মেলে। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার কোনো গাড়ি নেই। তবে পিকআপ, মাইক্রোবাস আর মোটরসাইকেলে অধিক ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে মানুষকে। অনেক যাত্রী আবার পায়ে হেঁটেই গাবতলী ছেড়েছেন।

গাবতলীর একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনে বাস না চললেও রাতে দূরপাল্লার বাস চলছে। সিটির বাসগুলোও সুযোগ পেলে যাত্রী নিচ্ছেন। এছাড়া সারাদিনই পিকআপে যাত্রী টানা হচ্ছে।

গাবতলীতে কথা হয় রাজবাড়ীর আকিদুল ইসলামের সাথে। তিনি রাজবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুই ঘণ্টা গাবতলীতে অপেক্ষা করলেও কোনো গাড়ীতে উঠতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করেন। সাননিউজকে তিনি জানান, কয়েকজন বলেছে, আমিন বাজার গেলে গাড়ি পাওয়া যাবে। তাই হাঁটছি।

সোহেল নামের এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, প্রতিদিনই মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখছি। যে পরিমান গাড়ি দরকার তার ন্যূনতমও নাই। এ অবস্থায় আমরা কিছু যাত্রী নিচ্ছি। তবে ভাড়া এ ক্ষেত্রে বেশি নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেন সোহেল।

সোমবার মহাখালী বাস টার্মিনালেও অনেকটা একই দৃশ্য দেখা যায়। এই টার্মিনালে দূরপাল্লার বাসগুলো পার্কিং করা রয়েছে। প্রচুর যাত্রী থাকলেও বাস ছাড়ছে না। তবে টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় মাইক্রোবাস ও পিকআপ চালকরা যাত্রীদের ডাকছেন। সেগুলোতেই গাদাগাদি করে মানুষ বাড়ির পথে রওনা হচ্ছে। ভাড়াও অনেক বেশি।

সরাসরি রাজশাহীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৭ সিটের নোয়া গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভার আবুল কালাম জানান, আমার গাড়িতে ৭ জন যা্ওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য ভাড়া লাগবে জনপ্রতি দুই হাজার টাকা।
জানা গেছে, যাত্রীরা বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।

আলম নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি দোকানে কাজ করি। যে টাকা পাই সেটা দিয়ে আর যাই হোক দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। তাই অপেক্ষা করছি কম ভাড়ায় যদি কোনো বিকল্প পাই।

মহাখালী বাস টার্মিনালের বাইরে আরও দেখা গেছে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু যুবককে। তারাও যাত্রী পরিবহন করছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা ভালুকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে তারা যাত্রী পরিবহন করছেন।

এমন একজন বাইকার রবিন। টঙ্গীর এই বাইক রাইডার জানান, ঈদে সবাই ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাচ্ছে বা মোটামুটি কাছের দূরত্বে যাদের বাড়ি তারা বাইকে যাচ্ছেন। একটু আগে গাজীপুর চৌরাস্তায় একজন নামিয়ে দিলে এলাম। ওখান থেকে উনি উত্তরবঙ্গে যাবেন।

এছাড়া হিউম্যান হলারে করেও ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে। এমন একটি হিউম্যান হলারের দেখা মেলে কারওয়ানবাজারে। এর চালক গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছেন ৪০০ টাকা।

ভাড়া এতো বেশি কেন নিচ্ছেন তা জানতে চাইলে চালক আলমগীর হোসেন বললেন, শুধু যাওয়ার সময় লোক পাওয়া যায়। আসার সময় লোক পাওয়া যায় না। পথে আরও অনেক খরচ আছে।

হিউম্যান হলারে বসে থাকা তিনজন যাত্রীর একজন সোলায়মান মৃধা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি সোলায়মান যাবেন নাটোর। তিনি বললেন, চন্দ্রা থেকে নাকি নাটোরের সরাসরি বাস পাওয়া যাচ্ছে।

সোলায়মান যে শুনেছেন চন্দ্রা থেকে নাটোরের বাস পাওয়া যায় এটা আংশিক সত্যও। এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে দূরপাল্লার বাস প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অথবা ‘ম্যানেজ’ করে চলছে। মাঝে মাঝে বাসগুলো ধরে জরিমানাও করছে স্থানীয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকেও সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের দিকে অনেক যাত্রীকে যেতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজি, সিটি বাসে সাইনবোর্ড পর্যন্ত গেলে সেখানে মিলছে অন্যবাহন।

আলতাফ নামের কুমিল্লাগামী এক যাত্রী জানান, সাইনবোর্ড থেকে অনেক মাইক্রোবাস কুমিল্লাসহ ঐ অঞ্চলের জেলাগুলোতে যাচ্ছে।

এদিকে, সরকারি নির্দেশে দূরপাল্লার বাস, ট্রেনের পাশাপাশি লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও বরিশাল, ভোলা, শরিয়তপুর, চাঁদপুর যাওয়া যাচ্ছে ট্রলারে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে।

জানা গেছে, টার্মিনালে লঞ্চ না থাকলেও চাঁদপুরের অনেক যাত্রীই ছোট ছোট ট্রলার এবং নৌকার সাহায্যে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে পথ ঘুরে যাচ্ছেন নয়ারহাট ও হাইমচর ঘাটে।

এ সময় সদরঘাট টার্মিনালের কোনো প্লাটুনে লঞ্চ দেখা না গেলেও, নদীতে দেখা যায় অনেক নৌকা ও ট্রলারের ছড়াছড়ি। মূল টার্মিনালে বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকায় ট্রলারগুলো একটু দূরে বাবুবাজার ঘাট ও ফরাশগঞ্জ ঘাট থেকে ছেড়ে যায়।

যদিও অনেক ট্রলার পোস্তগোলা ব্রিজের নিচেই কোস্ট গার্ডের জেরার মুখে পড়ছে। তবুও কিছু ট্রলার কোস্টগার্ড জরিমানা করে ছেড়ে দিলেও সব নৌকা বা ট্রলার আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই নদীর ওপার শ্যামবাজার, জিঞ্জিরা, বাদামতলী ঘাটে যাওয়ার কথা বলে নৌকায় বা ট্রলারে ওঠে। এরপর মাঝির সাহায্যেই চলে যায় নারায়ণগঞ্জের পাগলা এবং কাঠপট্টি ঘাটে। সেখান থেকে আবার ট্রলার পরিবর্তন করে গন্তব্য চাঁদপুর।

চাঁদপুর কীভাবে যাওয়া যাবে তা জানতে চাইলে ট্রলারচালক আক্কাস আলী বলেন, এইখান থেকে পাগলা যেতে হবে। পাগলা থেকে কাঠপট্টি। ডিরেক্ট কাঠপট্টি যেতে দেয় না। পাগলা থেকে রিকশা, অটো নিয়ে যেতে হবে। কাঠপট্টি থেকে আবার ট্রলারে সরাসরি চাঁদপুর। একবারে হাইমচরে নামিয়ে দিবে।

শুধু চাঁদপুর নয়, ট্রলারে করে বিভিন্ন জেলার মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।

তবে এবার নারীর টানে বাড়ী ফেরাকে আত্মঘাতি বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল তিনি বলেন, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যেভাবে ফেরি পারাপার হয়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছে সেটা সুইসাইড সিদ্ধান্তের শামিল।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। ভারতীয় নতুন ভ্যারিয়েন্টটি এখন নেপালে ছড়িয়ে গিয়ে সেখানে ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট এখন আমাদের দেশেও চলে এসেছে। এইরকম ক্রিটিকাল সময়ে এই ভাইরাস দেহে নিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষ যদি গ্রামে চলে যায়, তাহলে গ্রামে থাকা পরিবার পরিজনসহ গ্রামবাসী গণহারে আক্রান্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, শহরাঞ্চলেও মানুষ এখন বেপরোয়া চলাফেরা করছে। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহরে শপিংমলসহ বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে মানুষ চলাফেরা করছে। এভাবে চলতে দিলে ঈদের পর দেশে ভারত, নেপালের মতো ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

সাননিউজ/আরএম/বিএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা