সান নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশবাসী এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের । একই সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের (২০২৩) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন : ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের ১০১ বছর
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে্ শুভেচ্ছা জানিয়ে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারের সকল কেন্দ্র এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও সেন্টারগেুলো থেকে একযোগে প্রচার করা হয়।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। একই সঙ্গে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা- বোন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ সব শহীদকে।
আরও স্মরণ করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত, ২০০১ সালের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে।
আরও পড়ুন : আদালত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন
সমবেদনা জানান বিএনপি-জামাত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি ।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, তা বিচার-বিশ্লেষণের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী।
অপরদিকে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন চলত লোডশেডিং। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করত, তেমনি চুলা জ্বলত না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল।
এরকমই এক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি।’
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
তিনি আরও বলেন,‘খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই রাসায়নিক সারের দাম কমিয়ে দেই। এরপর আরও দুই দফায় সারের দাম হ্রাস করে কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় আনা হয়। এমনিভাবে প্রতিটি খাতে আমরা পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিই।’
তিনি জানান, সরকার গঠনের পর ইশতেহারের আলোকে আশু করণীয়; স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কীভাবে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘স্থবির অর্থনীতিকে সচল করতে শুরুতেই কৃষি, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ছোট বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করি।’
আরও পড়ুন : আরও বেড়েছে শীতের তীব্রতা
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।
বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, ‘রূপকল্প-২০২১ এর পর আমরা রূপকল্প-২০৪১ এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প-২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি।’
আরও পড়ুন : ৫৩ জনের মনোনয়ন দাখিল
‘রূপকল্প-২০৪১ এর লক্ষ্য হচ্ছে—২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। ব-দ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে টিকিয়ে রাখা।’
সর্বশেষ, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
সান নিউজ/জেএইচ/এইচএন
