নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। বন্ধ রয়েছে শিল্প কারখানা। বেকার হয়ে পড়েছে দেশের হাজার হাজার পোল্ট্রি খামারে কর্মরতরা। আয় উৎস বন্ধ হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ী, রিকশা, ভ্যান ও সিএনজি চালকদের। দীর্ঘদিন ধরে আয় বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে দরিদ্র কর্মহীনরা। এর প্রতিফলন দেখা গেল জামালপুরে। ঘরে খাবার না থাকায় জামালপুর পৌরসভার ত্রাণের ট্রাক আটকে চাল ও আলু লুট করে নিয়ে গেছেন কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষেরা।
গতকাল রবিরার (১২ এপ্রিল) এই লুটের ঘটনাটি ঘটে। জামালপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল পাশা জানান, দুপুরের দিকে ত্রাণের ৬০০ প্যাকেট চাল ও ৬০০ প্যাকেট আলু নিয়ে একটি ট্রাকটি সিংহজানী খাদ্য গুদাম থেকে বানিয়াবাজারের দিকে যাচ্ছিল। শহরের মুকন্দবাড়ি এলাকায় ট্রাকটি পৌঁছালে কর্মহীন হতদরিদ্র নারী-পুরুষরা ট্রাক আটকিয়ে চাল ও আলু লুট করে।
বিক্ষুব্ধরা জানান, বিভিন্ন জনের দারে দারে গিয়েও তারা আজ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাননি। এই করোনার পর থেকে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
তারা জানায়, "ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে আছি। আমাদের ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রাইখে দিছে প্রায় ১ মাস হলো।"
সব চাল পাচার করে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। বলে, তাই ট্রাক আটকিয়ে নিজেদের চাল নিজেরাই নিয়েছে।
গত কয়েকদিন আগে উন্নয়ন সংস্থ্য ব্র্যাকের একটি জরিপে উঠে এসেছে করোনাভাইরাসের ফলে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে দেশের ৮৯ ভাগ মানুষ। তাদের মধ্যে ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে নেই কোন খাবার। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ৬৪ জেলায় দুই হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে জামালপুরের এ ঘটনাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, সরকারের উচিৎ হবে দ্রুত এসব হতদরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়া এবং ত্রাণের সুষ্ঠ বন্টন করা। কেউ যেন অনাহারে না থাকে। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা সব জায়গায় ঘটতে থাকবে।
অনেক এলাকায় ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কর্মহীন দরিদ্ররা। তারা অভিযোগ করছেন, জনপ্রতিনিধিরা বেছে বেছে তাদের আত্মীয় স্বজনদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। এর ফলে অনেকে পাচ্ছেন খাদ্য সহায়তা।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে পরিমাণে ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাই সব নিম্ন আয়ের মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না। সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে জানান তারা।
দেশের এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির চাল চুরির ঘটনাও ঘটছে কোন কোন জায়গায়। অনেক স্থানে এসবের সাথে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব চোরদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করলেও কোন লাভ হচ্ছে না। দরিদ্রদের ত্রাণ চুরির ঘটনায় বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে কয়েকজন টিসিবির ডিলারের।
কর্মহীনদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কথা বলছেন সচেতন মহল। প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে ত্রাণ দেয়ার কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান কেউ কেউ।
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.