বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মায়ের পেটে ৩৭ সপ্তাহ পেরুনোর আগেই জন্ম নেয় বহু শিশু। যারা অপরিণত শিশু নামে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী এখনো নবজাতক শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে এই অপরিণত শিশু জন্ম।
এই সব অপরিণত শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী তৈরি করেছেন কৃত্রিম মাতৃগর্ভ। তারা জানিয়েছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে কৃত্রিম মাতৃগর্ভ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীদের দাবি সত্যি হলে এর মাধ্যমে বহু প্রিম্যাচিউরড বেবি বা অপরিণত শিশুদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ দেখতে একটা প্লাসিক ব্যাগের মতো। এর ভেতরে থাকবে অপরিণত শিশুটি। তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া পাইপ দিয়ে রক্ত ও অন্যান্য তরল তার জন্য আসবে। ঠিক মায়ের গর্ভের মতোই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে সেখানে।
নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্সিমা মেডিকেল সেন্টারে এই মূহুর্তে এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরির কাজ চলছে, যা প্রধানত খুবই অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশুদের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভের নকশা তৈরি করছেন লিসা ম্যান্ডিমেকার।
তিনি বলেন, কৃত্রিম মাতৃগর্ভ হবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের মত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীতে চলে এসেছে যে শিশু, মায়ের পেট থেকে বের করার পরপরই তাকে সেই ব্যাগে ঢোকানো হবে। সেখানে সে চার সপ্তাহ অবস্থান করবে। তারপর নতুন করে সে আরেকবার পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবে।
তিনি আরো জানান, এই মূহুর্তে পাঁচটি বড় বড় বেলুন বানানো হয়েছে, প্রত্যেকটির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য পাইপ। এই বেলুনগুলোর মধ্যে শিশুরা মাতৃগর্ভে যে তরলের মধ্যে সাঁতার কাটে, তার ব্যবস্থা করা হবে। আর বিভিন্ন পাইপের মাধ্যমে সেখানে তরল ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে।
লিসা বলছেন, প্রতিটি বেলুন তৈরি করা হবে একটি শিশু মাতৃগর্ভে সর্বশেষ যে ওজনে রয়েছে, তার দ্বিগুণ আকৃতিতে। এতে শিশুটির চলাফেরা মাতৃগর্ভের মতোই স্বাভাবিক থাকবে।
এই গবেষণা দলে রয়েছেন এই ল্যাবের গাইনি চিকিৎসক গিড ওয়েই। এই পেশায় গত ২৭ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। কর্মজীবনে তিনি বহু নবজাতকের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছেন, বহু মা-বাবার আক্ষেপ আর হতাশাও দেখেছেন।
চিকিৎসক গিড ওয়েই বলেন, কৃত্রিম মাতৃগর্ভের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা তরলে পূর্ণ থাকবে। এখানে একটি ইনকিউবেটর বাতাসে পূর্ণ থাকবে। এখন অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়, যা আসলে ওই শিশুটির জন্য একটি বৈরি অবস্থা। কারণ ইনকিউবেটরের বাতাস শিশুর ফুসফুসের ক্ষতি করে। তার বদলে এখন অপরিণত শিশুদের কৃত্রিম মাতৃগর্ভে ঢুকিয়ে দেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, কৃত্রিম মাতৃগর্ভে শিশুটিকে কৃত্রিম প্লাসেন্টা বা নাড়ি দিয়ে সংযুক্ত করা হবে। এতে সেখানে সে মায়ের গর্ভের মতোই প্রয়োজনীয় পরিমাণ তরলের ভেতর থাকবে। সেখানে পানি এবং সব ধরনের খনিজ উপাদান থাকবে। ফলে আম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে শিশু তার প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন এবং অন্য পুষ্টি উপাদান পেতে থাকবে।
ওই অবস্থায় চার সপ্তাহ থাকার পরে শিশুটিকে বের করা হবে। নতুন করে ভূমিষ্ঠ হবে সে। আর এভাবেই বাঁচানো যাবে লাখ প্রাণ।
অনেক মা-বাবার কাছে এটা একটা স্বপ্ন সত্যি হবার মত ব্যপার। কারণ এখনো প্রতিবছর বিশ্বে দেড় কোটির বেশি শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়, যার অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।
লিসা বলছেন, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক্ষুণি হয়তো ভাবতে পারছে না মানুষ। তবে এর মাধ্যমে অসংখ্য শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ ছেড়ে কৃত্রিম পদ্ধতি কতটা নৈতিক হবে, তা নিয়ে অনেকেই তুলেছেন প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে সমালোচকরা বলছেন, এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরির ফলে আগামী দিনগুলোতে নারীরা সন্তান ধারণকালীন জটিলতা এড়াতে প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সূত্র- বিবিসি বাংলা।
সান নিউজ/সালি
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.