নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি বাবা শরীফ ইমরান ও জাপানি মা নাকানো এরিকো তাদের দুই কন্যা সন্তানের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেননি। ফলে দুই মেয়ে শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সরিয়ে আপাতত উন্নত পরিবেশে রাখা যাচ্ছে না। কারণ আদালত বলেছিলেন, মা-বাবা একমত হলেই কেবল তাদের দুই শিশু মেয়েকে উন্নত পরিবেশে নেওয়ার আদেশ দেবেন।
সোমবার (৩০ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এরিকো-ইমরান ও তাদের আইনজীবীরা জুম মিটিংয়ে যুক্ত হন। কিন্তু তারা সমঝোতায় না পারেননি। তাই মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা, এদিন দুই শিশুকে আদালতের হাজির করাতে হবে। বাবার পক্ষে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন- মায়ের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
শিশির মনির বলেন, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মেয়েকে রাজধানীর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। মেয়েদের আরও উন্নত পরিবেশে রাখতে রাতে আমরা জুম মিটিংয়ে যুক্ত হই। বাবা চেয়েছেন তাদের বাসায় রাখতে। মা চেয়েছেন একটি আলাদা বাসা ভাড়া করে মেয়েদের রাখতে এবং একইসঙ্গে মাও তাদের সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু এতে দুই পক্ষই পরস্পর বিরোধী ছিলেন। তা একমত হননি।
বাবা-মা একমত হয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করলে জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে উন্নত হোটেলে রাখার আদেশ দেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। দুই শিশুর বাবার করা এক আবেদন শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এর আগে আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে সেরে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
সাননিউজ/এমআর