বাণিজ্য

গত ৬ মাসে রেকর্ড পরিমাণ কালো টাকা সাদা হয়েছে

সান নিউজ ডেস্ক : ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিয়মিত আয়কর প্রদানের স্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা করোনা মহামারির কারণে অর্জিত হবে না বলে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। তার মধ্যেই কালো টাকা সাদা করার রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে এতে করে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় প্রায় সাড়ে নয় শ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কারণ পুরো অর্থবছরেও কখনও এত বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করার উদাহরণ নেই।

রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেছেন, অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন এসেছে চলতি বছরের বাজেটে, যা করদাতাদের অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে উৎসাহিত করছে। প্রধান সমস্যাই হলো আইন। আইনটা এবার কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে আইনী বাধার কারনে তারা দেখাতে পারছিলো না।

এমন প্রশ্নের জবাবে আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেছেন, টাকা সাদা করার যে নজিরবিহীন রেকর্ড তৈরি হয়েছে তার পেছনে আছে দুটি সুবিধা, যা সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দিয়েছে। আগে ভয় কাজ করতো যে এনবিআরকে অপ্রদর্শিত আয়ের তথ্য দিলে দুদক বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে। কিন্তু এবারে পূর্ণ এ্যামনেস্টি দেয়া হয়েছে যে কোনও অথরিটি প্রশ্ন করতে পারবে না।

এতে আস্থা তৈরি করেছে অনেকের ক্ষেত্রে । আর আগে নিয়ম ছিলো যে অপ্রদর্শিত আয় থাকলে সেটার নিয়মিত কর এবং সাথে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। আর এবার সব মিলিয়ে মোট ১০ শতাংশ করের বিধান করা হয়েছে। আর মূলত এ দুটি সুবিধার জন্য এবারে রেকর্ড পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয় আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দেয়ার স্বাভাবিক সময় শেষ হয়েছে।

১ হাজার কোটি টাকার মতো কর এনবিআর সংগ্রহ করতে পেরেছে এসব ইনিশিয়েটিভের কারণে। এ সম্পদ সম্পদ বিবরণীতে ঢুকে যাওয়াতে কিন্তু আর করদাতা গোপন করতে পারবেন না। এ সম্পদ থেকে আয় আসলে তাও দেখাতে হবে আবার করের ওপর সারচার্জও দিতে হবে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে একটা ইতিবাচক কর প্রভাব তৈরি হবে।

কিন্তু কারা তাদের অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করেছেন সেটি গোপনীয় তথ্য হিসেবে প্রকাশ করে না এনবিআর। তবে তারা এটুকু বলেছে যে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা কালো টাকা প্রায় ২২ কোটি টাকা কর দিয়ে সাদা করেছেন ২০৫ জন। আর অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা, ফ্ল্যাট ও জমি বৈধ করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ করদাতা। আর এর বিপরীতে তারা কর দিয়েছেন প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, শুধু প্রশ্ন না করার সুযোগ কিংবা কর কমিয়ে দেয়া নয় বরং আরও কিছু সুযোগ দেয়া হয়েছে যার সুযোগ নিচ্ছেন কালো টাকার মালিকদের অনেকে। উৎস জিজ্ঞেস করা যাবে না এটা মূল কারণ। কিন্তু এছাড়াও এ বছর বলা হয়েছে যে কোনও ভূমি, ফ্লাট, বাড়ি, জমি লোকেশন ও প্রতি বর্গমিটার অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর দিয়ে সাদা করা যাবে।

এফডিআর বা কোনও সঞ্চয় থাকলে তাও সাদা করা যাবে। কোনও ক্ষেত্রেই উৎস জিজ্ঞেস করা যাবে না। তিনি বলেছেন, এমন বিধান করা হয়েছে করোনা পরিস্থিতি দেখিয়ে যে একই পেশার করদাতা নিয়মিত কর দিলে বেশি কর দিতে হচ্ছে আবার যারা কর দেননি আগে তারা এখন কম কর দিয়ে টাকা সাদা করে নিচ্ছেন। যারা বড় করদাতা তাদের কর কিন্তু ৩০ শতাংশে গিয়েও ঠেকে। যারা অনেক বেশি আয় করেন।

একজন সৎ করদাতার কাছে এনবিআর চার্জ করবে ১৫/২০/৩০ শতাংশ। আর যিনি নিয়মিত কর দিলেন না তিনি ১০ শতাংশ দিয়ে বৈধ করে নিলেন। এটা কিন্তু সৎ করদাতাকে নিরুৎসাহিত করবে।রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলেছে এবার অন্যদিকে তবে বাংলাদেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নতুন কিছু নয়। এবার করোনা পরিস্থিতিতে বিবেচনায় নিয়ে কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে বাজেটে।

বাজেট এক বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও এপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারে ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড, বা অন্য কোনও সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে দেখালে অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।

তবে এসব সুযোগ শুধুমাত্র চলতি অর্থ বছরের জন্যই দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তার সুনির্দিষ্ট কোনও হিসেব বা তথ্য নেই। এনবিআরের হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে বৈধ করার মোট টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবির করা অদৃশ্য অর্থনীতি শীর্ষক এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছিলো যে, জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে কালো টাকা ওঠানামা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলেছেন, করোনার কারণে বিদেশে সাথে সংযোগ সেভাবে হয়নি বা ব্যাহত হয়েছে। সে কারণে এ টাকাগুলো দেশের বাইরে চলে যাওয়া বা অপ্রদর্শিত রাখা সম্ভব হয়নি অনেকের পক্ষে। তারাই দেশে এখন বিশেষ সুবিধা নিয়ে টাকা গুলো সাদা করার সুযোগ নিয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা, আয়কর আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত আয়ের একটি বড় অংশই পেশাজীবীদের অপ্রদর্শিত আয়। যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এনজিও খাত কিংবা এমন অনেক পেশায় চাকরির বাইরেও পেশাগত চর্চার মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগ আছে।

এছাড়া ঘুষ দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা, আন্ডার কিংবা ওভার ইনভয়েসিং এবং জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কালো টাকা তৈরি হয়। সায়মা হক বিদিশা বলছেন বৈধ আয় কোনও ক্ষেত্রে হয়তো অপ্রদর্শিত আয়ে পরিণত হয়েছে কিন্তু এখন কালো টাকার বড় উৎস হলো ব্যাংক খাত আর দুর্নীতি।

বাংলাদেশে ২০১২-১৩ সাল থেকেই জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার একটা স্থায়ী নিয়ম তেরি করা হয়েছে। কিন্তু কালো টাকা বিশেষ সুযোগ দিয়ে শেয়ার বাজার বা আবাসন খাতের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে সত্যিকারভাবে কতটা ভূমিকা রাখে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, যেসব খাতে কালো টাকা আসে সেগুলো অর্থনীতিতে খুব বেশি অবদান রাখে না বলেই মনে করেন তিনি।

কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয় তাতেও খুব একটা আসে না বা সাদা হয় না। কিছু আসলেও সেটা উৎপাদনশীল খাত বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন খাতে আসে না। মূলত শেয়ার বাজার বা ফ্লাট কিংবা এপার্টমেন্ট কেনাতেই এগুলো বিনিয়োগ হয়। সেটা অর্থনীতির কতটা কাজে লাগে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে । আর এটা সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার স্বরূপ।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলেছেন, কালো টাকার নামে অদৃশ্য অর্থনীতির প্রভাব এড়াতে কালো টাকা তৈরির সুযোগই বন্ধ করা দরকার বলে মনে করেন তারা। একই সাথে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে যেসব বিশেষ সুবিধা চলতি বছর দেয়া হয়েছে সেটি অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে মন্তব্য করে তারা বলেন এ ধরণের সুযোগ আর দেয়াটাই উচিত হবে না। সূত্র : বিবিসি।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা