ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

শিশুদের উঁচু থেকে ছুঁড়ে মারা উৎসব 

ফিচার ডেস্ক: সন্তানের জন্য নানা রকম রীতি পালন দীর্ঘায়ুর জন্য বাবা-মারা । তবে এর অনেক কিছু আদিকালের নিরক্ষর মানুষের কুসংস্কারের ফলও। যার অনেক রীতি বিংশ শতাব্দীতে এসেও পালন হচ্ছে ঘটা করে। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত একটি রীতি হচ্ছে শিশুদের উঁচু জায়গা থেকে নিচে ফেলে দেয়া। পালিত হচ্ছে ৭০০ বছর ধরে।

এর আগে ফ্রান্সের একটি উৎসব বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিল। ঘটা করে পালন হয় সেই উৎসবও। উত্তর স্পেনের কাসট্রিলো ডি মুরসিয়া শহরে পালিত হয় এক অদ্ভূত উৎসব। শিশুদের উপর থেকে শয়তানের কু-প্রভাব তাড়ানোর জন্য সেখানকার বাসিন্দারা একটি উৎসব পালন করে। উৎসবের দিন প্রত্যেক নবজাতকের মা-বাবা তার শিশুকে রাস্তার উপরের সাদা বিছানায় শুইয়ে রাখেন।

ওই বিছানায় ছড়ানো থাকে গোলাপের পাপড়ি। সদ্য জন্মানো থেকে শুরু করে এক বছর বয়সী শিশুদেরকে রাস্তায় রেখে দেয়া হয়। এরপর তাদের শরীর থেকে শয়তানের প্রভাব কাটানোর জন্য থাকেন এক পাদ্রী। তিনি উৎসব চলাকালীন সময়ে শিশুদের শরীরের ওপর দিয়ে দৌঁড়াতে থাকেন।

বিংশ শতাব্দীতে এসে এখনো অনেকে হাজার হাজার বছর আগের এসব কুসংস্কার মেনে চলছেন। খুবই বিপদজনক এসব প্রথা পালনের পদ্ধতি। ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে ৭০০ বছর আগে যখন এই রীতি পালিত হওয়া শুরু হয়; তখন শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল। চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞানও খুব কম ছিল সবার। এমনকি ভালো কোনো চিকিৎসকও ছিল না।

তাই শিশুর মঙ্গল কামনায় ৩০ ফুট উঁচু থেকে শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় নীচে। ধর্মীয় কুসংস্কার অনুসারে ভারতের গ্রামীণ কিছু পরিবার (হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ই) তাদের শিশুদেরকে মাজারের ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে নীচে বিছানার চাদর দুই প্রান্তে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে শিশুর অভিভাবক। নিচে পড়া মাত্রই শিশুকে ধরে ফেলেন তারা।

শিশু জন্মের ২ মাসের মধ্যেই এই রীতিটি পালন করা হয়ে থাকে। মাজারের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা শিশু ছুঁড়ে ফেলার কাজটি করে থাকেন। নিচে বিছানার চাদর ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন শিশুর বাবা-মা। এই রীতি মানলেই না-কি সুস্থ থাকে শিশু, উজ্জ্বল হয় তার ভবিষ্যত! মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত এই রীতিটি পালিত হয়ে আসছে। ৭০০ বছর আগে যখন এই রীতি পালিত হওয়া শুরু হয়; তখন শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল।

চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞানও খুব কম ছিল সবার। এমনকি ভালো কোনো চিকিৎসকও ছিল না। জনশ্রুতি আছে, এক সাধু আদেশ দিয়েছিলেন যেসব বাবা-মায়ের সদ্যজাত সন্তান মারা গিয়েছে; তারা যেন একটি মাজার তৈরি করেন। এরপর সেখান থেকে সদ্যজাত সব শিশুদেরকে ছুড়ে যেন নিচে ফেলে দেয়া হয়। তবে তারা যেন মাটিতে পড়ে আঘাত না পায় সে বিষয়েও স্পষ্ট করে বলেছিলেন সাধু।

অলৌকিক হলেও সত্যিই যে, এরপর থেকেই মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যের কোনো মানুষের সন্তান আর আকস্মিকভাবে মারা যায়নি এবং সুস্থ সন্তানও জন্ম নিয়েছে! এরপর থেকে সেখানকার লোকেরা সন্তানকে বাঁচাতে, জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই এই রীতি পালন করেন।

৭০০ বছর ধরে পালিত এই রীতি অনুসারে গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, এই আচারটি তাদের সন্তানের দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। তারা জানায়, এই রীতি করতে গিয়ে কোনো শিশু কখনো আহত বা নিহত হয়নি। বরং যে শিশুর সঙ্গে এমনটি করা হয় না; তারই ক্ষতি হয়!

শত শত বছর পরে, ২০০৯ সালে প্রথম মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্য কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এই রীতি উদযাপনের বিষয়টি। তখন মহারাষ্ট্রের সোলাপুরের মাজার বাবা বাবা উমার দরগাহ থেকে রেকর্ড করা একটি ভিডিও দেখে নড়েচড়ে বসেন তারা। জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনকে এ বিষযে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানায়।

কমিশন তদন্ত করে নির্দেশ দিয়েছিল যে চাউল্ড টসিং বন্ধ করা উচিত। ভারতের জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনের মিডিয়া উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমরা এই কুসংস্কারমূলক আচরণকে সমর্থন করি না। এটা শিশুদের স্বার্থের পরিপন্থী। তারা সত্যিই ভীত হতে পারে এবং এটি তাদের মানসিক বিকাশে বাঁধা ফেলতে পারে।

শিশু অধিকার আইনে, এই অনুশীলনটি অবৈধ। যদিও স্থানীয় প্রসাশনের কঠোরতায় ২০১০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রীতি উদযাপন করা বন্ধ হয়েছে। তবে এখনও সেখানকার বিভিন্ন গ্রামে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে এই রীতি চলছে।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (৩ মে) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের পর্দায়।...

ফেনীতে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী বাদশা গ্রেফতার

ফেনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত এক ছিনতাইকারী চক্রের প্রধানকে গ্রেফতার...

সিন্ধু নদে বাঁধ দিলে ভারতে হামলার হুঁশিয়ারি পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ বন্ধ করলে পাকিস্তান সামরিক হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি...

ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস, ৭ অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত

দেশের সাতটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির হতে পারে। তাই সেসব এলাকার নদ...

হাসিনার মতো ভুল করবেন না, ড. ইউনূসকে সতর্কবার্তা হেফাজতের

বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতে ইসলামের নেতার...

ফেনীতে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর করুন মূত্যু

ফেনীর দাগনভুইয়ায় পুকুরে ডুবে দুই শিশুর করুন মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) দুপ...

সাবেক সাংসদ তুহিনের মুক্তির দাবিতে কৃষকদলের বিক্ষোভ

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহ...

মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে ফুলবাড়ীতে উত্তেজনা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে ত...

নীলফামারীতে ‘উদ্দীপ্ত তরুণ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৩ জনকে সম্মাননা প্রদান

নীলফামারীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উদ্দীপ্ত তরুণ ফাউন্ডেশন’ এর পঞ্চম...

বগুড়ায় সাংবাদিক নজরুলের ওপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলায় উদ্বেগ

মহান মে দিবস ও জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাতে বগুড়ার নন্দীগ্রামে সাংবাদিক নজরুল...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা