লাইফস্টাইল

অংকে ভয়? আর নয়!

সান নিউজ ডেস্ক:

বেশিরভাগ বাচ্চাদের মধ্যেই অংকভীতি কাজ করে। অথচ কয়েকটা ছোটখাটো নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু জব্দ করা যায় অংক জুজু।

ভয় কাটাতে হলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, অংকের যে কোনও চ্যাপ্টারের মূল নিয়ম বা বেসিক্‌স শেখায় যেন গোঁজামিল না থাকে। বেসিক সম্বন্ধে ধারণা স্বচ্ছ না হলেই ভীতি আসে। বাবা-মা খেয়াল রাখুন, শিক্ষক যেন ধৈর্য ধরে তার সব প্রশ্নের উত্তর দেন। অনেক বাচ্চা প্রশ্ন করে না। সেখানে তার মনে প্রশ্ন খুঁচিয়ে তুলে উত্তর দেওয়ার দায়িত্বও শিক্ষকের। আর হ্যাঁ, বাচ্চার হাতের কাছে যেন অংকের নোটবই না থাকে। খুলে দেখতে হবে না, কিন্তু সমাধান হাতের কাছে থাকলেও চেষ্টার আন্তরিকতা কমে যায়।

অংকের ভয় কাটাতে কয়েকটি জিনিস মেনে চলতে হবে প্রথম থেকেই। মাত্র পাঁচটি বিষয় মনে রাখলেই, অংকে ভয় কাটানো যায়। দায়িত্ব নিয়ে বাবা-মাকেই মনে রাখতে হবে বিষয়গুলো।

প্রথমত, যে কোনও বোর্ডেই ক্লাস টেন পর্যন্ত অংক বাধ্যতামূলক। সুতরাং, অংক সম্বন্ধে কোনও নেগেটিভ বা ভয়-ধরানো কথা যেন বাবা-মা কখনও না বলেন। তাতে বাচ্চারা মনে মনে দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘আমায় দিয়ে অংক হবে না’—এমন মনোভাব তৈরি হয়। বাচ্চাদের যথাসম্ভব পজ়িটিভ এবং উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ভাল অংক করার জন্য তিনটি জিনিস দরকার হয়, রিডিং এবিলিটি, কগনিটিভ স্কিল এবং মনঃসংযোগ। এখন বাচ্চাদের ভিসুয়াল অ্যাকটিভিটি বেশি, মোবাইল ল্যাপটপে বেশি সময় কাটায়। রিডিং এবিলিটি তৈরি করার জন্য বাচ্চাদের পড়ার অভ্যেস বাড়াতে হবে, ইংরেজি, বাংলা যা-ই হোক। কগনিটিভ পাওয়ার বাড়াতে হলে, বাচ্চাকে দু’তিনটি জিনিস একসঙ্গে শেখানোর অভ্যেস জরুরি। যেমন, লাল আপেল চেনানো। এর রং লাল, আকৃতি গোল, এটি একটি ফল ইত্যাদি একসঙ্গে মনে রাখতে বলতে হবে। সেখান থেকে শেখাতে হবে বিভিন্ন শেপ ও প্যাটার্নের ধারণা। এতে অংকের দখল বাড়ে। তার পর মনঃসংযোগ। সেরোটোনিন এবং এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণে মনঃসংযোগ বাড়ে। ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলাধুলো এর জন্য উপকারী। বাদ্যযন্ত্র, কবিতা আবৃত্তি, নাটক শেখার মাধ্যমেও স্মৃতিশক্তি ও মনঃসংযোগ দুই-ই বাড়ে। বাবা-মাকে রুটিনমাফিক পড়াশোনার বাইরে এ সবেও সময় দিতে হবে।

তৃতীয়ত, নিয়ম করে রোজ অংক প্র্যাকটিসের কোনও বিকল্প নেই। গোসল করা, দাঁত মাজার মতোই অংকের অভ্যেস গড়ে তুলুন ছেলে বা মেয়ের মধ্যে। রোজ অন্তত ১৫টা, বেশি হলে ২০-৩০টা অংক কষতেই হবে। ভাল না লাগলেও করতে হবে। বাচ্চাকে অভ্যেস করানোর জন্য মিক্সড ব্যাগ পদ্ধতি নিতে হবে। একেবারে ছোটদের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ মিলিয়ে মিশিয়ে, যাদের প্রশ্নের অংক শুরু হয়ে গিয়েছে, তাদের সাধারণ অংক, প্রশ্নের অংক ভাগ করে অভ্যেস করাতে হবে। যারা অংক ভাল করে অভ্যেস করে, তাদের প্যাটার্ন রিলেটেড চিন্তাভাবনা বাড়ে, সমস্যা সমাধানের মানসিকতাও উন্নত হয়। এরা জীবনের বহু জটিল সমস্যাকেও সহজ প্যাটার্নে ফেলে সরল সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

চতুর্থত, বাবা-মায়ের বকাবকির জন্যও বাচ্চাদের মনে ভয় তৈরি হয়। বাবা-মা নিজেদের সঙ্গে তুলনা করে ফেলেন— আমি তো ছোটবেলায় পারতাম, এ পারছে না কেন! রাগারাগি মারধর করেন, খাতা ছুড়ে ফেলে দেন ইত্যাদি। বাবা-মাকে, বিশেষ করে অংক করানোর ক্ষেত্রে খুব সংযত হতে হবে, খুব সাবধানে অংক করাতে হবে। কোনও বাচ্চার একই ভুল পরপর তিন মাস ধরে হয়ে চললেও তাকে ওই ধাঁচের অংক নানা রকম ভাবে অভ্যেস করিয়ে যেতে হবে। এটা বাবা-মায়ের এক্সারসাইজ়। এতে মেজাজ হারালে চলবে না, প্রয়োজনে বাবা-মাকে নিজেদের কাউন্সেলিং করাতে হবে। তা না হলে কিন্তু বাচ্চাদের স্মৃতিতে রাগারাগি, মারামারি, বকাবকি স্থায়ী হয়ে বসবে। অংক বিষয়টাকে কোনও দিনই সে ভালবাসতে পারবে না।

পঞ্চম বা শেষ কথা, বাচ্চার সঙ্গে অংক নিয়ে কথা বলুন। খেলার ছলে নামতা পড়া বা ছোটখাটো হিসেব করা, ঘড়ি দেখে সময়ের হিসেব করা কিংবা দোকানে বাজারে ছোটখাটো টাকা পয়সার হিসেব করা... এ সবের মাধ্যমে জড়তা বা ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করুন। অংকের ধাঁধা-মজা-হেঁয়ালি সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটান।

এখন বিভিন্ন ব্রেন জিম হয়েছে, যেখানে বাচ্চাদের ভর্তি করেন অনেকে। এখানে মনকে দ্রুত একাগ্র করার নানা পদ্ধতি শেখানো হয়। এতে মনঃসংযোগ বাড়ে। এ সবের অনলাইন ট্রেনিংও হয়। বাবা-মা শিখে নিয়েও সন্তানকে শেখাতে পারেন। আনন্দময় পরিবেশ রাখাটাই বড় কথা।

বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন, অংক জিনিসটা শুধু সিলেবাসের মধ্যেই গম্ভীর হয়ে বসে নেই, সে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তার অনেক রং, অনেক রূপ। সে শুধু রাগী মাস্টারমশাই নয়, পাশের বেঞ্চের টিফিনে আচার শেয়ার করা বন্ধুও— বাচ্চাকে সেই চেহারা চিনতে সাহায্য করুন। ভয় কেটে যাবে। অংকের কোনও একটি বিষয়ে ভয় বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক সময় তৈরি হতে দেখা যায়। এর পিছনে শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে দু’টি কারণ কাজ করে। শিক্ষকের কাছ থেকে শিখতে গিয়ে কিছু দুর্বোধ্যতা তৈরি হচ্ছে, না হলে প্র্যাকটিস কম হচ্ছে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।

কিছু বাচ্চা লেখাপড়া নিয়েই উদ্বেগ বা টেনশনে ভোগে। অংক তথাকথিত শক্ত বিষয় বলে মানুষের ধারণা, অংক নিয়ে সেই কারণেই ভয় তৈরি হয়। সাধারণ ভাবে তাদের আশ্বাস দিতে হবে, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কোনও ভাবেই বিদ্রুপ বা হেয় করা চলবে না। আবার কিছু বাচ্চা সত্যিই অংকে কাঁচা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এর কারণ হয় এসএলডি বা স্পেসিফিক লার্নিং ডিজ়এবিলিটি। তখন কাউন্সেলর বা স্পেশ্যাল এডুকেটরের সাহায্য নিলে সুফল পাবেন। সব ক্ষেত্রেই পাশে থাকা এবং ভরসা রাখাটা খুব জরুরি।

বাচ্চার ভয় কমাতে গিয়ে নিজে প্যানিক শুরু করবেন না কিন্তু! তাতে সমস্যা বাড়বে। বহু বাচ্চা যুগে যুগে চল্লিশ-পঞ্চাশ শতাংশ থেকে স্থায়ীভাবে আশি-নব্বইয়ের কোঠায় উঠেছে। বিশ্বাস রাখুন, আপনার সন্তানও পারবে।

সান নিউজ/ বি.এম.

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সকালে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বা...

ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের দাবি

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধ...

২১ বছর পর পৃথিবীতে সৌরঝড়ের আঘাত 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২১ বছর পর পৃথিবীতে শক্তিশালী সৌরঝড় আঘাত...

খাগড়াছড়িতে বিশ্ব মা দিবস উদযাপন 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দিলো সৌদি 

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্...

এআইয়ের অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদ...

খাগড়াছড়িতে বিশ্ব মা দিবস উদযাপন 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড 

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা