ফিচার

হাতপাখায় স্বনির্ভর ঈশ্বরগঞ্জের নারী-পুরুষেরা

এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): গরম এলেই গ্রামেগঞ্জে বাড়ে হাতপাখার চাহিদা। এ হাতপাখা বানিয়ে স্বচ্ছলতা এসেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের ডাঙরি, পাড়া ডাঙরী, বড় ডাঙরি নশতি, কেশবপুর ও কাঁঠাল গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারে।

আরও পড়ুন: বাগদাদে সহিংসতায় নিহত ২০

দুরের মানুষেরা কাছে গ্রামগুলো এখন পাখার গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। বাড়ির উঠানে কেউ সুতা গোছাচ্ছেন, কেউ রঙ দিচ্ছেন পাখার কাপড়ে, কেউ করছেন বাঁশ কাটার কাজ, আবার কেউবা ব্যস্ত পাখা বুননের কাজে।

যেখানে গৃহকর্ম শেষে অবসর সময়ে এসব হাতের কাজ করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় অবদান রাখছেন নারী-পুরুষেরা। আবার অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী।

সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, একদিকে নারীরা রান্নার পাশাপাশি করছেন হাতপাখা তৈরির কাজ। আঙিনায় বিশ্রামের সময় গল্প করতে করতেও চলছে পাখার কাজ। অলস সময় না কাটিয়ে যখনই সময় পাচ্ছেন, বসে পড়ছেন পাখা তৈরির কাজে। ১০ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত করছেন এ কাজ। সকালে গৃহস্থালির একদফা কাজ শেষ করে আঙিনায় বসে যায় ঘরকন্যারা। রঙ্গিন সুতোয় পাখা বোনে। নানা কারুকাজে তৈরি করেন আয়নার পাখা, ছাপা পাখা,বেতের পাখাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখা।

অপরদিকে গ্রামের পুরুষরা কৃষি বা অন্য পেশায় যুক্ত থাকলেও পাখার হাতল, ডাটি, চাক তৈরিসহ বাঁশের কাজ তারাই করেন। আর পাখা তৈরির মূল কাজটি করেন নারীরা। গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে পাখা তৈরির দৃশ্য। এখানে-সেখানে, গাছের নিচে, পুকুরপাড়ে দু-তিনজন একসঙ্গে বসে গেছেন সুই-সুতো আর চাক নিয়ে। মোছাঃ আখলিমা আক্তার, রূপালী আক্তার,তামান্না আক্তার, নাজমা বেগমের মতো অনেকেই পাখা বোনে অবিরাম। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, স্রেফ নিজে নিজে শেখা। বড়দের দেখে দেখে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও হাত পাখা তৈরীর কাজ করছে।

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ

পাখা কারিগর নাজমা বেগম বলেন, বছরে ছয় সাত মাস পাখার বেচাকেনা চলে। পাঁচ গ্রামের মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার জড়িয়ে আছে পাখা বুননের সাথে। পাখা তৈরির পর কেউ কেউ গ্রামে গ্রামে বিক্রি করেন, আবার কেউ পাইকারের হাতে তুলে দেন। এ পাঁচ গ্রামের পাখা ঈশ্বরগঞ্জ ছাড়িয়ে চলে যায় ঢাকা- চট্টগ্রাম,রাজশাহী, মাধবী, নেত্রকোনা, মুনসিগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তে।

কথা হয় গৃহবধূ আখলিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম কৃষি কাজ করেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তাদের। পরে ১০ বছর আগে তিনি হাতপাখা তৈরির কাজ শুরু করেন। ১০০ পিস পাখা আগে ১ হাজার করে বিক্রি হতো ,এখন ২ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়। এখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের সংসারে এখন স্বচ্ছতা এসেছে।

পাখার কারিগর রূপালী আক্তার জানান, সংসারে সচ্ছলতা আনতে গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি পাখা বোনেন তিনি। উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার থেকে আনতে হয় সুতা। একেকজন দিনে সাত থেকে দশটা করে পাখা বুনতে পারে। পাইকাররা এসে বাড়ি থেকেই পাখা কিনে নিয়ে যায়। বছরের সাত-আট মাস চলে পাখা তৈরির কাজ। তবে ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত চাহিদা থাকে বেশী।

পাড়া ডাংরী গ্রামের পাখা তৈরী কাজে জড়িত ইসহাক জানান, শীতকালে তিন মাস পাখা তৈরির কাজ বন্ধ থাকে। ওই তিন মাস সুতো, বাঁশ, কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে মজুত রাখা হয়। বছরের প্রায় বাকি নয় মাসই চলে পাখা তৈরির কাজ। বিশেষ করে, গরমের সময়টায় পাখার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাজের চাপও বাড়ে। তিনি বলেন, পাখা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। ঋণ নিয়ে কাজ করতে হয়। তারপর পাখা বিক্রি হলে সেই ঋণ সুদে-আসলে শোধ করতে হয়।

হাত পাখাকেই ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পের মাধ্যমে তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে পাখা পল্লীর নারী-পুরুষেরা এই শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে ভাগ্যের আরও পরিবর্তন করতে পারবে। পাখা শিল্পে জড়িতদের আক্ষেপ, সম্ভাবনাময় এই কুটির শিল্পে এতদিনেও সরকারি কোনো ঋণদান সংস্থা থেকে ঋণ সহায়তা পাননি তারা। পাখার কারিগরদের দাবি, বিনা শর্তে ঋণ কিংবা শিল্পগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে এই হাতপাখা তৈরি শিল্পটির ব্যপ্তি আরও বাড়ানো সম্ভব।

বড়হিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক মিলন বলেন, এই পাঁচ গ্রামের মানুষ নিয়ে আমরা গর্ব করি। এখানকার নারী-পুরুষ কেউ বেকার বসে থাকেন না। তাই তাদের পরিবারে তেমন অভাব-অনটন নেই। আবার অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চ...

হেলিকপ্টার সংঘর্ষে নিহত ১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ান ন...

দেশবিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশবিরোধী একটি...

যোদ্ধা প্রত্যাহার করল মিয়ানমার গোষ্ঠী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল জান্তা সৈন্যদের স...

তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : তাপপ্রবাহ কমে...

স্বর্ণের দাম আরও কমলো

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসে ৩ দফ...

নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবদেক: ঢাকা দক্ষিণ সিট...

ট্রাক ও ট্রাক্টরের সংঘর্ষে নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলার বোদা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা