নিজস্ব প্রতিনিধি, জাককানইবি: গাছ কেটে ও খেলার মাঠ বন্ধ করে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন আটকে ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের স্থানে (পুরাতন খেলার মাঠে) রাখা ভবন নির্মাণের সীমানার পিলার উপড়ে ফেলে সেগুলো নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো করেও বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আয়তন অল্প হওয়ায় ভবন নির্মাণের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছে সংশ্লিষ্টরা। তবে পাশাপাশি প্রচুর ভবন থাকার বিষয়টিও অসুন্দর বলে মন্তব্য করেন তারা।
প্রকল্প পরিচালক জুবায়ের হোসেন বলেন, আমরা কেবল পরিকল্পনা দপ্তরের দেয়া কাজ বাস্তবায়ন করি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাবো তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।
কয়েকঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অবরুদ্ধ ছিলো প্রশাসনিক ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান ভবন নির্মাণের বিষয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ স্থগিত থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন।
আগামীকাল বেলা ১২টায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর।
আন্দোলনে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শিকড় বলেন, যে জায়গায় নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা পুরোটাই অপরিকল্পিত। সাত হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্যে একটি বড় খেলার মাঠ এবং এই একটি ছোট মাঠই কেবল রয়েছে। যেটিকে বছরের অধিকাংশ সময় পরিকল্পিতভাবে অকেজো করে রাখা হয়। পাশেই থাকা গাহি সাম্যের গান মঞ্চকে ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনাও এরই অংশ। সাংস্কৃতিক আবহের বিশ্ববিদ্যালয়কে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এই অবস্থান থাকবে।
আরেক শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, আমরা নতুন প্রশাসনিক ভবন চাই তবে খেলার মাঠ ধ্বংস করে নয়। এই একটি জায়গা কেবল বাকী ছিলো সেটিতেও তাদের নজর পড়ে গেছে। আমরা এই মাঠকে আগলে রাখবো কোন বস্তিতে পরিণত করতে দিবো না। আমরা স্মারকলিপি প্রদান করার পরও যদি ভবন নির্মাণে আগায় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।
আন্দোলন এবং ভবন নির্মাণ বিষয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের একটি চিঠি পেয়েছি। তাদের দাবীগুলো গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি আমরা। আলোচনা করে দ্রুতই সমস্যাটির সমাধান করা হবে।
প্রসঙ্গত ৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থায়ী মাস্টারপ্ল্যানে বারবার পরিবর্তন করতেও দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালটির ৪টি হল থাকলেও নেই কোন খেলার মাঠ। জায়গা না বাড়লেও পাশাপাশি নির্মিত হচ্ছে একাধিক ভবন। ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ১০টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের। যার অর্থনৈতিক অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফার মধ্যে রয়েছে,
১. নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ স্থগিত করতে হবে। নতুন অধিগ্রহণকৃত জমিতে অথবা নতুন জমি অধিগ্রহণ করে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
২. এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাতন দুই মাঠ সংস্কার করতে হবে সেই সাথে নতুন একটি খেলার মাঠ তৈরী করতে হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. নতুন দুই হলের জন্যে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. অতিসত্বর ৫০০ একরের ক্যাম্পাসে পরিণত করতে হবে।
৫. অপরিকল্পিত আর কোন ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং নতুন মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে।
৬. নতুন ভবন নির্মাণের জন্যে কোন গাছ কাটা যাবে না এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
৭. ডিপিডি দপ্তরে পরিবর্তন আনতে হবে।
সান নিউজ/এফএইচপি